ভোজ্যতেলের দাম বৃদ্ধি ও মজুদ নিয়েও উদ্বেগ! ভোজ্যতেলের বাজারে যেন আগুন জ্বলছে। একদিকে আন্তর্জাতিক বাজার ও অভ্যন্তরীণ বাজারে অব্যাহতভাবে দাম বাড়ছে, অন্যদিকে ভোজ্যতেলের মজুদ সঙ্কটেরও আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে প্রায় ১৫ কোটি কেজি পামতেলের আমদানি কমেছে।
একই সময়ে চিনির আমদানিও কমেছে অস্বাভাবিকভাবে ২০ কোটি কেজির বেশি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বন্ডেড ট্যাংক টার্মিনালগুলোসহ দেশে ভোজ্যতেলের প্রকৃত মজুদের ওপর নজরদারির তাগিদ দিয়েছেন বাজার বিশ্লেষকরা।
চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশে চিনি আমদানি হয় ৬৪ কোটি ৫০ লাখ ৮৭ হাজার ১৫৯ কেজি। ২০২৪ সালে একই সময়ে চিনি আমদানি হয়েছে ৪৩ কোটি ৭৮ লাখ তিন হাজার ৪৪৭ কেজি। এই চার মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি কম হয়েছে ২০ কোটি ৭২ লাখ ৮৩ হাজার ৭১২ কেজি।
সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশে পামতেল (পরিশোধিত ও অপরিশোধিত) আমদানি হয় ৯১ কোটি ৯০ লাখ ৭৯ হাজার ৯১২ কেজি। ২০২৪ সালে একই সময়ে পামতেল আমদানি হয়েছে ৭৭ কোটি দুই লাখ ৩০ হাজার ৪৫১ কেজি। এই চার মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি কম হয়েছে ১৪ কোটি ৮৮ লাখ ৪৯ হাজার ৪৬১ কেজি।
সূত্র মতে, ২০২৩ সালের জুলাই-অক্টোবর সময়ে দেশে সয়াবিন তেল (পরিশোধিত ও অপরিশোধিত) আমদানি হয় ২৯ কোটি ১৬ লাখ আট হাজার ৮৫৬ কেজি। ২০২৪ সালে একই সময়ে সয়াবিন তেল আমদানি হয়েছে ৩৯ কোটি ১৭ লাখ ৭৫ হাজার ৭০৫ কেজি। এই চার মাসে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মোট আমদানি বাড়লেও পরিশোধিত সয়াবিন তেলের আমদানি কমেছে ৩১ হাজার ৭৮ কেজি।
সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ সালের জুলাই-অক্টোবর সময়ে ছোলা আমদানি হয় ২৬ লাখ ৮১ হাজার ৬৬০ কেজি। ২০২৪ সালে একই সময়ে ছোলা আমদানি হয় এক কোটি ১৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫শ’ কেজি। সূত্র মতে, ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে দেশে সয়াবিন ও পামতেল আমদানি হয়েছে ২১ লাখ ৭০ হাজার ৬৫৫ মেট্রিক টন। কিন্তু জুলাই-আগস্ট বিপ্লবোত্তর বাংলাদেশকে সঙ্কটে ফেলার জন্য পরিকল্পিতভাবে নানা অজুহাতে পতিত ফ্যাসিবাদের অনুসারী ব্যবসায়ীরা অতি প্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আমদানি কমিয়েছেন এমন অভিযোগ উঠছে। কাস্টমস সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র ভোজ্যতেলের বাজার নিয়ন্ত্রণে বন্ডেড ট্যাংক টার্মিনালগুলোর প্রকৃত মজুদ যাচাইয়ে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন।
এ দিকে গতকাল চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে প্রতি মণ (৩৭ কেজি ৩২০ গ্রাম) পামতেল ছয় হাজার ৪শ’ ৬ হাজার ৪৬০ টাকা, প্রতি মণ সুপার পামতেল ৬ হাজার ৫৫০ টাকা, প্রতি মণ সয়াবিন তেল ৬ হাজার ৭শ’ টাকায় বিক্রি হয়। এছাড়া প্রতি মণ চিনি রেডি মাল হলে ৪ হাজার ৪৩০ টাকা এবং ডিও হলে ৪ হাজার ৪ শ’ টাকা দরে বিক্রি হয় পাইকারি বাজারে। ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, গত চার মাসে প্রতি মণ সয়াবিনে ৭শ’ টাকা এবং পাম ও সুপার পাম প্রতি মণে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। ব্যবসায়ীদের দাবি ইন্দোনেশিয়ায় উৎপাদনের সঙ্কট এবং বায়োডিজেলে পামতেলের ব্যবহার বাড়ার কারণে বাজারে অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে পামতেলের দাম।
ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী দিদারুল হক নয়া দিগন্তকে জানিয়েছেন, গত চার মাস ধরে সয়াবিন ও পামতেলের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে চলেছে। খুচরায় প্রতি লিটারে গড়ে ২০ টাকা বেড়েছে। কিন্তু বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নজরে পড়ছে না। ফলে ভোক্তাদের কাছে নিয়মিতই দাম বাড়ার কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে।