পবিত্র রমজানে অভাবনীয় জনসমর্থনে সিলেট বিএনপি সংঘটিত হচ্ছে বিভাগজুড়ে। এতে চাঙ্গা হয়ে উঠছে দলটির তৃণমূলসহ সাধারণ নেতাকর্মীরা। রমজানে ইফতার মাহফিলের আয়োজন চলছে বিভাগজুড়ে। এর মাধ্যমে দল গোছানো এবং নিজেদের মধ্যে সৃষ্ট ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে বলেও মনে করছেন অনেকে। কেউ কেউ এই ইফতার মাহফিলকে দেখছেন ভোটের আগাম প্রস্তুতি হিসেবেও।
অপরদিকে, আওয়ামী লীগ পালিয়ে যাওয়ায় এখন নতুন নতুন সমস্যা মোকাবিলা করতে হচ্ছে দলের নেতাকর্মীদের। বিশেষ করে তারা জামায়াতে ইসলামীর রাজনৈতিক কর্মকা- ফলো করছেন নানা কোনে। এ কারণে দলকে সংগঠিত করাই মূল কাজ বলে মনে করছেন তারা। হাসিনার পতনের আগে সবকিছুতেই নিয়ন্ত্রণ ছিল আওয়ামী লীগের। গত ৫ আগস্টের পর সবচেয়ে বেশি সমালোচিত হয়েছে সিলেট বিএনপি।
গত সাত মাসে দলে ঘটেছে নানা বিতর্কিত ঘটনা। চোরাই চিনিকারকরি, পাথর লুট, দলীয় কোন্দলে কর্মীর মৃত্যু, মামলা বাণিজ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা জড়িত, জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিএনপিপন্থি প্রার্থীদের ভরাডুবি, জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের কমিটি বাতিল, জেলা ও নগর বিএনপির চার নেতাকে শোকজসহ নানা ঘটনায় বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
এছাড়া শৃঙ্খলা বিরোধী কর্মকা-ে বিএনপি যুবদলসহ প্রায় ১৩ জন নেতাকে বহিস্কার করেছ দলটি। কিন্তু দলের রাঘববোয়াল অনেকের ব্যাপারে সুস্পষ্ট তথ্য থাকলেও এখনো কোনো ব্যবস্থা না নেয়ায়, প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে স্থানীয় নেতৃত্ব। কোম্পানীগঞ্জ বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন, গোয়াইঘাটের আমজদ বক্সের বেপরোয়া কর্মকাণ্ড সর্বত্র দিবালোকের মতো পরিস্কার।
তারপরও স্থানীয় শীর্ষ দুই এক নেতার আর্শিবাদে তাদের ব্যাপারে নেই কোনো পদক্ষেপ। এতে তৃণমূল বিএনপি নেতাকর্মীদের মধ্য বিরক্তি দেখা দিচ্ছে। সাধারণ ভোটরদের কাছে ইমেজ নষ্ট হচ্ছে বিএনপির। বিশেষ করে জৈন্তাপুর উপজেলা বিএনপি সভাপতি আব্দুর রশিদের নেতৃত্বে সাংগঠনিক কর্মকা-ের চেয়ে সীমান্ত চোরাচালান জোরদার হচ্ছে।
তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে চোরাচালানে যুক্ত। স্থানীয় প্রশাসন তার তৎপরতায় জিম্মি। দলের নেতৃত্ববৃন্দ বিষয়টি অবগত হলেও নগদ টাকার ভাগে অনেকে চোখবুঝে রয়েছেন। গোয়াইনঘাটে দুইজন নেতাকে বহিস্কার করা হলেও বাকী নেতাদের নিয়ন্ত্রিত সিন্ডিকেটে অক্ষত রয়েছে পলাতক আওয়ামী লীগ নেতাদের চোরাচালান ও পাথর লুটপাটের তৎপরতা। তাদের চোরাকারবার চেইন এখন স্থানীয় বিএনপির বিতর্কিত নেতাদের দখলে।
কোম্পানীগঞ্জেও একই অবস্থা। উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাহাব উদ্দিন একাই একশ। তাকে দমানোর চেয়ে তার অবৈধ টাকায় চোখ পড়েছে জেলা বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের। তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে তার তৎপরতাকে দূর থেকে সহযোগীতা করে ভাগ বসাচ্ছেন অবৈধ আয়ে। সে কারণে পাথর লুটসহ সরকারী জমি দখল করে অবৈধ দোকান ও ক্রাশার মিল স্থাপন করে প্রতিমাসে কোটি টাকা পকেটে নিচ্ছেন তিনি। এনিয়ে স্থানীয় নেতাকর্মীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে ক্ষোভ। অনেকে বলছেন জেলা বিএনপির এক নেতার ছায়া নিয়ে এমন বিতর্কিত কর্মকা- চালাচ্ছেন তিনি।
নাম প্রকাশ না করে জেলা বিএনপির এক নেতা জানান, ঐক্য না থাকায় এই মুহূর্তে সিলেট বিএনপিতে শৃঙ্খলা নেই। কর্মীরা নেতাদের কথা কোনোভাবেই মানতে নারাজ। দলের চেইন অব কমান্ড অনেকটা ভেঙে পড়েছে। ফলে ইফতার মাহফিলের মাধ্যমে মাঠ নিজেদের দখলে রাখা থেকে দ্রুততম সময়ে নির্বাচনের দাবি আরো জোরালো করা এবং নির্বাচন কোনোভাবে বিলম্বিত হলে নেতাকর্মীরা যাতে ভেঙে না পড়েন, সেজন্য তাদের ধরে রাখার কৌশল নিয়েছে বলে জানান নেতারা।
জানা গেছে, বিভাগের প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন, নগরীর ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে দলটির নেতাদের ইফতার মাহফিল করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাহফিল সফল করতে সিলেটজুড়ে প্রচারও চালাচ্ছে দলটি। এ জন্য একাধিক টিমও গঠন করা হয়েছে।
জেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, লন্ডন থেকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও দল চাঙ্গা করার নির্দেশনা দিয়েছেন। এ কারণে সিলেটে বিএনপি নেতাদের ওপর চাপ বেশি। সব স্থান থেকেই তাদের চাপে রাখা হয়েছে। এবার তাদের নতুন পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হচ্ছে।
নগর বিএনপির আরেক নেতা জানান, ইফতার মাহফিল এমনভাবে করতে বলা হয়েছে, যাতে সব মানুষের উপস্থিতি নিশ্চিত করা যায়। এ ছাড়া এবার সাধারণ মানুষকে যেমন সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা রয়েছে, ঠিক তেমনি হাটবাজার, খোলা ময়দানে ইফতার মাহফিল করারও নির্দেশনা রয়েছে। ইফতার মাহফিল সফল করতে ২ মার্চ নগর বিএনপির আওতাধীন নবগঠিত ছয় থানার আহ্বায়ক এবং সদস্য সচিবদের নিয়ে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী ও সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী জরুরি সভা করেন। সভায় সব থানা কমিটির ইফতার মাহফিল করার সিদ্ধান্ত হয়।
বিএনপির কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার এম এ সালাম জানান, তারেক রহমানের ইচ্ছা তার দলের নেতাকর্মীরা যেন কোনোভাবেই জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন না হন। তাই সবাইকে এবারের ইফতারে সম্পৃক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছেন। বিভেদ নয়, ঐক্যের বার্তা পৌঁছে দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন।
সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী জানান, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে এবং দলীয় সিদ্ধান্ত অনুসারে, দলের পক্ষ থেকে তৃণমূল থেকে জেলা পর্যায় পর্যন্ত নিজেদের সামর্থ্য অনুযায়ী সাদামাটা ইফতার ও দোয়া মাহফিল আয়োজন করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আমরা সেভাবেই কাজ করছি। বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ আহমদ সিদ্দিকী জানান, অবর্ণনীয় নির্যাতন সহ্য করে গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করে টিকে আছেন নেতাকর্মীরা। আন্দোলনের মুখে স্বৈরাচারের পতন হয়েছে। এখন গণতান্ত্রিক যাত্রা টিকিয়ে রাখতে হলে জনসম্পৃক্ততার বিকল্প নেই।
আপনার মতামত লিখুন :