বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও অর্থনীতি কোন পথে যাবে—এই প্রশ্ন এখন কেবল দেশীয় পর্যবেক্ষকদের নয়, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই প্রেক্ষাপটে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ‘বিনিয়োগ সম্মেলন–২০২৫’-এ বিএনপির পক্ষ থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের সময় দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী তুলে ধরেছেন বিএনপির অবস্থান ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা।
এই সম্মেলনটি সোমবার (৮ এপ্রিল) শুরু হয়ে শেষ হয় বৃহস্পতিবার, ১১ এপ্রিল, হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। এরপর বনানীর হোটেল সারিনায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেন বিএনপি নেতারা। আলোচনার মূল বিষয় ছিল—আগামী নির্বাচনে বিজয়ী সরকার কী ধরনের নীতিমালা অনুসরণ করবে এবং সেটি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য কতটা অনুকূল হবে। বিএনপি মনে করে, আন্দোলনের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকার যে রাষ্ট্র সংস্কারে উদ্যোগ নিচ্ছে, তা ইতিবাচক হলেও বিনিয়োগকারীদের আসল আগ্রহ আগামী নির্বাচিত সরকারের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে।
আমীর খসরু বলেন, “বিনিয়োগকারীদের বড় কনসার্ন হচ্ছে—আগামী দিনে বাংলাদেশে নির্বাচিত সরকার কেমন হবে, তাদের নীতিমালা কী হবে। সেই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই তারা আমাদের সঙ্গে কথা বলছেন।” তিনি আরও জানান, বিএনপি দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনায় বিশ্বাস করে এবং আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে বিনিয়োগবান্ধব নীতি গঠনে আগ্রহী। “আমরা গ্লোবাল বেঞ্চমার্ক অনুসরণ করে আমাদের অর্থনৈতিক নীতি সাজিয়েছি। যাতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের জন্য সবচেয়ে প্রতিযোগিতামূলক দেশ হয়ে উঠতে পারে,”—বলেছেন খসরু।
তিনি আরও বলেন, “বর্তমান বিশ্বে ট্যারিফ বা শুল্কনীতি নিয়ে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ফলে বিনিয়োগকারীরা তাদের স্থায়ী ব্যবসায়িক ঠিকানা বদলাতে চাইছেন। এই পরিস্থিতিতে আমরা যদি প্রস্তুত থাকি, বাংলাদেশ বিনিয়োগের আদর্শ গন্তব্য হতে পারে।” বিএনপির শাসনামলের উদাহরণ দিয়ে তিনি জানান, তারাই প্রথম রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (EPZ) চালু করে অর্থনীতির উদারীকরণ শুরু করে, যা এ উপমহাদেশে একটি নতুন ধারণা ছিল। তার মতে, “আমাদের নতুন ভাবনা রয়েছে—যা আমাদের অঞ্চলভিত্তিক প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রাখবে, ইনশাআল্লাহ।”
বৈঠকে বিএনপির আরও কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় নেতা অংশ নেন, যার মধ্যে ছিলেন চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ইসমাইল জবিউল্লাহ, তাজভীরুল ইসলাম, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা হুমায়ুন কবির, মাহাদি আমিন এবং আন্তর্জাতিক সহপরামর্শ কমিটির সদস্য ইসরাফিল চৌধুরী খসরু। তারা একমত হয়ে জানান, দেশের স্বার্থে বিদেশি বিনিয়োগ উৎসাহিত করা প্রয়োজন এবং এজন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ইতিবাচক পদক্ষেপগুলোকেও স্বাগত জানানো উচিত। তবে ভবিষ্যতের জন্য বিনিয়োগকারীদের আসল প্রত্যাশা—একটি নির্বাচিত, নীতিনির্ধারক ও স্থিতিশীল সরকার।