‘বিভেদ’ থাকলেও শত্রুর বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা অপরিহার্য কুয়েটে ত্রাস :‘আত্মঘাতী রাজনীতি’


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২৫, ৯:৪৮ পূর্বাহ্ণ /
‘বিভেদ’ থাকলেও শত্রুর বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা অপরিহার্য কুয়েটে ত্রাস :‘আত্মঘাতী রাজনীতি’

তিন যুগ আগে শ্রীনীরদচন্দ্র চৌধুরী ‘আত্মঘাতী বাঙ্গালি’ নামে বই লিখে বাংলাদেশ-ভারতে হৈচৈ ফেলেছিলেন। বইটির কিছু অংশ সাপ্তাহিক দেশ পত্রিকায় ছাপানোর পর পত্রিকাটি বাংলাদেশে নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৯৫ সালের লেখা বইটির পর্যালোচনা এখন অক্ষরে অক্ষরে মিলে যাচ্ছে। খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) সংঘাত তারই প্রমাণ দিচ্ছে।

দল-মত-নির্বিশেষে ঐক্যবদ্ধভাবে হাজার প্রাণের বিনিময়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত করেছি। এখন ক্ষুদ্র স্বার্থে নিজেদের মধ্যে মারামারি করে শত্রুকে ডেকে আনছি। নিজেদের বিরোধ দেখে শওকত ওসমানের ‘কৃতদাসের হাসি’র মতোই শেখ হাসিনা দিল্লিতে বসে হাসছেন। হুংকার দিচ্ছেন ‘আমি ফিরে আসবো’।

নির্বাচন ইস্যুতে যখন জাতীয় ঐক্য আরো দৃঢ় করা সময়ের দাবি; তখন সংঘাত-সংঘর্ষ করে আত্মঘাতী বাঙ্গালির পরিচয় দিচ্ছি? কুয়েটের ঘটনায় সর্বত্রই নেতিবাচক বিতর্ক চলছে। নেটিজেনরা বলছেন, দিল্লির চতুর্মুখি ষড়যন্ত্র ঠেকিয়ে দেশকে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পথে হাঁটতে বিএনপিকে আরো সতর্ক হওয়া উচিত। জনগণের কমন শত্রু হাসিনার ষড়যন্ত্র ঠেকাতে ‘বেপরোয়াদের বিরুদ্ধে’ কঠোরতা প্রয়োগ করতে হবে।

ছাত্রজনতার অভ্যুত্থানে হাসিনা পালালেও তার অলিগার্করা প্রশাসনের রন্ধ্রে রন্ধ্রে রয়ে গেছে। সচিব থেকে শুরু করে পুলিশ-র‌্যাব-সেনা-বিজিবি-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাপটি মেরে রয়েছে। সাড়ে ৬ মাস আগে অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করলেও এরশাদের তালাকপ্রাপ্ত স্ত্রী বিদিশার আত্মজীবনীমূলক ‘শত্রুর সঙ্গে বসবাস’ বইয়ের মতোই দেশবাসী শত্রুর সঙ্গে বসবাস করছে। রাজনৈতিক দলগুলোর নিজেদের মধ্যে বিরোধ-মতভেদ থাকবে, নিজেদের মধ্যে বাহাস হবে; কিন্তু ৫ আগস্টের চেতনা ধরে রাখতে ঐক্যবদ্ধ থাকা অপরিহার্য।

বিএনপি-জামায়াত-ছাত্রদের মধ্যে অনৈক্য হলেই সে সুযোগ হিন্দুত্ববাদী ভারত ও হাসিনা নেবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা চললেও হাসিনাকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ‘ধীরে চলো নীতি’র সুযোগ নিয়ে ১৮ কোটি মানুষের কমন শত্রু হাসিনা হরতাল দিয়েছিল। গত ৬ মাসে দফায় দফায় দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করেছে হাসিনা। নিজেদের ঐক্যে ফাটল ধরলে এ যুগের ঘসেটি বেগম হাসিনা সে সুযোগ কাজে লাগাবে। বিএনপি, জামায়াত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনসহ সব দল, শক্তিকে জাতীয় ঐক্য ধরে রাখা সময়ের দাবি হয়ে গেছে।

কুয়েটের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। যদিও কুয়েট প্রশাসন এরই মধ্যে কিছু কার্যকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। গতকালের কয়েকটি গণমাধ্যমের শিরোনাম ‘কুয়েটে সংঘর্ষ : পাল্টা পাল্টি কর্মসূচি’, ‘উত্তাল ঢাবি : গভীর রাতে পাল্টাপাল্টি মিছিল’, ‘সংঘর্ষের জেরে থমথমে কুয়েট : উপাচার্য অবরুদ্ধ’, ‘ঢাবিতে মধ্যরাতে মুখোমুখি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-ছাত্রদল’, ‘থমথমে কুয়েট : বন্ধ ক্লাস-পরীক্ষা’, কুয়েটে সংঘর্ষে জাবিতে বিক্ষোভ’সহ নানা ধরনের হেডলাইন দিয়ে গণমাধ্যমগুলো খবর পরিবেশন করেছে। এসব খবরে বোঝা যায় জুলাইয়ের চেতনায় বিশ্বাসী দলগুলোর মধ্যে কত বিভেদ। প্রশ্ন হচ্ছে এমন পরিস্থিতি উদ্ভব হলো কেন? এ ঘটনার নেপথ্যে কারা? পতিত আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ কী দলগুলোর ছত্রছায়া পেয়েছে?

জনগণের ভোটের অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠায় দেশ যখন নির্বাচনের পথে এগিয়ে চলছে; প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস নির্বাচনের সম্ভাব্য সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন। এখন নির্বাচন ভ-ুলেরও অপচেষ্টা! পলাতক হাসিনা দিল্লির সহায়তায় বাংলাদেশকে সিকিম বানাতে না পারলেও আফগানিস্তানের মতোই ‘মৌলবাদী’ তকমা দেয়ার অপপ্রচার চালাচ্ছে। এখন কী নিজেদের মধ্যে সংঘাত-সংঘর্ষের মাধ্যমে ঘোলাটে পরিস্থিতি সৃষ্টি করে দলগুলো দিল্লির পাতা ফাঁদে পা দিচ্ছে? ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা ধরে রাখতে চাইলে সবপক্ষকে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে। আর অন্তর্বর্তী সরকারকেও ‘নতজানু চেতনা’ পরিহার করে হাসিনাকে ফেরাতে আরো কঠোর হতে হবে। অনুনয়-বিনয় নয়; প্রশাসনকে কঠোর ও শক্ত হতে হবে।

ফ্যাসিস্ট হাসিনা রেজিমে কেউ কথা বলতে পারতো না। প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিভাজনের রাজনীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছিল। ‘রাজাকার’, ’৭১-এর পরাজিত শক্তি’ ‘ক্যান্টনমেন্টে বিএনপির জন্ম’ ‘মৌলবাদ’ ‘জঙ্গী’ ইত্যাদি প্রচারণা চালিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে বিভাজন জিইয়ে রাখা হতো। আর ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে দিল্লির স্বার্থ রক্ষা ও উন্নয়নের নামে ঋণ নিয়ে বিদেশে টাকা পাচার করাই ছিল হাসিনার মিশন-ভিশন। এটা করতে গিয়ে হাসিনা সন্ত্রাসের মহারানী ও আওয়ামী লীগ-যুবলীগ-ছাত্রলীগকে মনস্টার গড়ে তোলেন।

দীর্ঘ ১৫ বছর ভারতের সহায়তায় বিএনপি, জামায়াতের নেতাকর্মীদের উপর যে পৈচাসিক জুলুম-নির্যাতন চালিয়েছে তা ভাষায় বর্ণনা করা যায় না। বিএনপি এবং জামায়াতের উপর দিয়ে সুনামি চালিয়েছে দীর্ঘ দেড় যুগ। হাসিনার শৃঙ্খল ভেঙ্গে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনে হাসিনাকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। এখন নিজেদের মধ্যে বিরোধ কেন? খুনি হাসিনা পালিয়েছে। এখন তো কবি কামিনী রায়ের কবিতা ‘সকলের তরে সকলে আমরা, প্রত্যেকে আমরা পরের তরে’ হওয়ার কথা। তাহলে বিরোধ কেন?

হাসিনা পালানোর পর এখন সবচেয়ে বড় রাজনৈতিক দল বিএনপি। ফলে দলটির দায়িত্ব সবার চেয়ে বেশি। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের সাড়ে ৬ মাসেও প্রশাসনকে হাসিনার অলিগার্ক মুক্তি করতে পারেনি। ‘কুত্তা লেজ নাড়ায় নাকি লেজই কুত্তা নাড়ায়’ প্রবাদের মতোই হাসিনার অনুগত আমলারাই এখনো অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টাদের পরিচালনা করছে। ফলে ৫ আগস্টে হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর তার সব অলিগার্কদের গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি।

অর্ধশত মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি-আমলাকে গ্রেফতার করা হলেও হাজার হাজার অপরাধী পালিয়ে গেছে। অন্যদিকে গ্রেফতার হওয়া হাসিনার অলিগার্কদের বিচার চলছে। এমন পরিস্থিতিতে ’৯০-এর গণঅভ্যুত্থানের পর আইনজীবীরা আদালতে এরশাদের পক্ষে না দাঁড়াতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিলেন। সে সময় বর্তমান কারাবন্দী সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকের পিতা অ্যাড. সিরাজুল হক মোটা টাকার লোভ সংবরণ করতে না পেরে ঐক্যের সঙ্গে বেঈমানী করে সর্বপ্রথম এরশাদের পক্ষে আদালতে দাঁড়িয়ে ছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে বিএনপি অনুসারি সিনিয়র আইনজীবীদের মধ্যে সিরাজুল হক হওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে।

বিএনপিপন্থী আইনজীবী নেতারা বিভিন্ন খুন-দুর্নীতি-মানবতাবিরোধী মামলায় অভিযুক্ত সাবেক মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-এমপি ও নেতাদের পক্ষে আদালতে দাঁড়ানোর প্রতিযোগিতা করছেন। যা দেড় যুগ ধরে জুলুম-নির্যাতনের শিকার বিএনপির জন্য বেমানান। দেশ-বিদেশের রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিপুলসংখ্যক আসন নিয়ে বিএনপি ক্ষমতায় আসবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে এবি পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদের বক্তব্য ‘বর্তমানে দেশে বিএনপি একমাত্র দল যারা নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় যেতে পারে’। তারপরও নির্বাচন ভঙ্গুল হয় এমন কর্মে বিএনপি অনুসারিরা কেন?

বহুদলীয় গণতন্ত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধ-বিতর্ক থাকবে। ‘সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন’, ‘আগের সংস্কার তারপর নির্বাচন’, ‘আগে জাতীয় নির্বাচন নাকি স্থানীয় সরকার নির্বাচন’ এগুলো নিয়ে বিএনপি ও জামায়াতের মধ্যে মতবিরোধ-বিতর্ক চলছে। এ নিয়ে রাজনৈতিক বিরোধ হবে, বাহাস হবে; আলোচনার পর সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু নিজেদের মধ্যে বিরোধ করে কমন শত্রু হাসিনা ও ভারতকে ষড়যন্ত্রের সুযোগ করে দেয়া কি দূরদৃষ্টি রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত? জাতিসংঘের তদন্তে ‘১৪০০ ছাত্র-জনতার হত্যার নির্দেশদাতা শেখ হাসিনা’ প্রমাণিত হওয়ায় তার উপর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিক্ষুব্ধ।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদীর বৈঠকের পর হাসিনার ভবিষ্যৎ রাজনীতিতে শেষ পেরেক ঠুকেছে। ভারতের সেভেন সিস্টার্সের ৭ রাজ্যসহ বিভিন্ন রাজ্যের মানুষ শেখ হাসিনাকে বন্দি বিনিময় চুক্তি অনুযায়ী ঢাকার হাতে তুলে দেয়ার দাবি করছেন। তাদের বক্তব্য আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ও খুনের অপরাধে অভিযুক্ত হাসিনাকে ভারত আশ্রয় দিলে উন্নত দেশগুলো ভারতের বিরুদ্ধে চলে যাবে। অপরাধী হাসিনাকে ঢাকার হাতে তুলে দিয়ে দিল্লিকে ভবিষ্যৎ বিপদের আশঙ্কা মুক্ত রাখতে হবে। কিন্তু হাসিনার পুরনো বক্তব্য ‘ভারতকে যা দিয়েছি চীরদিন মনে রাখবে’র কারণে মোদী হাসিনাকে ঢাকার হাতে তুলে দিতে নারাজ।

  • বাচ্চাদের খেলনা নেয়ার বায়নার মতোই খুনি হাসিনা দিল্লির কাছে বাংলাদেশের রাজনীতিতে পুনঃপ্রতিষ্ঠার বায়না মেটাতে ঢাকার বিরুদ্ধে একের পর এক ষড়যন্ত্র চালিয়ে যাচ্ছেন। এখন জুলাইয়ের চেতনার সব পক্ষকে ঐক্যবদ্ধ থেকে কমন শত্রু দিল্লির বিরুদ্ধে সজাগ থাকতে হবে।

খুলনাস্থ কুয়েটে সংঘাতের কারণ দু’টি বিষয় পরিষ্কার। বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দাবি কুয়েটকে রাজনীতি মুক্ত রাখতে হবে; আর ছাত্রদলের শ্লোগান ‘একটা একটা শিবির ধরো, ধইরা ধইরা জবাই করো’ দু’টোই ভুল চিন্তা। আওয়ামী লীগ ১৫ বছর বিভক্তির রাজনীতি চালু রাখতেই জামায়াতের সহযোগী সংগঠন ছাত্রশিবিরের নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এমন শ্লোগান দিয়েছে। দেশের নাগরিক হিসেবে ছাত্রশিবিরের রাজনীতি করার অধিকার অন্য সবার মতো সমান। হাসিনার বিভাজনের রাজনীতি চর্চা জিইয়ে রাখতে ছাত্রলীগ এমন শ্লোগান দিতো। এখন নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিতাড়িত।

তারপরও কেন এই শ্লোগান? তাহলে কি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগ এখন ছাত্রদলের ভিতরে আশ্রয় নিচ্ছে? বিএনপি ও তার সহযোগী সংগঠন ছাত্রদলকে এই হিংসা বিদ্বেষের রাজনীতি পরিহার করতে হবে। আর কুয়েটের ছাত্রদের ‘ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ’ অযৌক্তিক এবং অবান্তর। রাষ্ট্র থাকলে রাজনীতি থাকবে, বিশ্ববিদ্যালয় থাকলে সেখানে ছাত্ররাজনীতি হবে। বাংলাদেশ এখনো ইউরোপের দেশগুলোর মতো উন্নত হয়ে উঠেনি যে ছাত্রদের রাজনীতি করার প্রয়োজন পড়বে না।

এছাড়া এদেশের ’৫২, ’৬১, ’৬৯ ও ’৯০ আন্দোলনে ছাত্রদের ভূমিকা ছিল চোখে পড়ার মতো। ভবিষ্যতে জাতীয় রাজনীতি এবং পরিবারকেন্দ্রীক রাজনীতি ঠেকাতে ছাত্রদের রাজনীতি অপরিহার্য। এটা ঠিক আওয়ামী লীগের বিভাজনের রাজনীতির কারণে ছাত্র রাজনীতির নামে ছাত্রলীগ চরম নৈরাজ্য চালিয়েছে। তাদের পৈচাসিকতা, নিষ্ঠুরতা, খুন-অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়-সন্ত্রাস-চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি এবং মূল দলের লাঠিয়াল বাহিনীর ভূমিকার কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতির বিরুদ্ধে।

বুয়েটে আবরার ফাহাদ হত্যা, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে ভিক্টোরিয়া পার্কে বিশ্বজিৎ হত্যা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের মবজাস্টিসের কারণে ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি ওঠে। ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ কোনো সমস্যার সমাধান নয়। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের অর্থ হচ্ছে মাথাব্যাথা হলে মাথা কেটে ফেলার মতোই। মাথা যেমন কেটে ফেলা যায় না তেমনি ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ করা উচিত নয়। তবে ক্যাম্পাসে ত্রাস সৃষ্টি, লেখাপড়ায় বিঘ্ন সৃষ্টি করে এমন কর্মকা- নিষিদ্ধ করা যায়।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত ১৭ ডিসেম্বর নারায়ণগঞ্জে ‘রাষ্ট্রকাঠামো মেরামতের রূপরেখা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বলেছেন, ‘স্বৈরাচারের মাথা পালিয়ে গেছে কিন্তু তাদের লেজ রয়ে গেছে। আমাদের ভেতরেও এজেন্ট ঢুকে গেছে। আমাদের সোচ্চার হতে হবে’। এর আগে তিনি অন্য একটি সভায় ‘অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেয়া যাবে না’ নেতাকর্মীদের সতর্ক করে দেন।

প্রশ্ন হচ্ছে তারেক রহমানের এই সতর্ক বার্তার পরও বিএনপি-ছাত্রদল নেতাকর্মীরা কি সতর্ক হয়েছেন? তা না হলে ছাত্রদল নেতাদের ‘দুইটা একটা শিবির ধরো, ধইরা ধইরা জবাই করো’ শ্লোগান কেন? কেন হাসিনার অলিগার্কদের রক্ষায় তাদের পক্ষে আদালতে লড়তে বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের দৌড়ঝাপ?