বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং দানবীর বিল গেটস তার জীবনের সবচেয়ে বড় মানবিক উদ্যোগের ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, তার বিপুল সম্পদের ৯৯ শতাংশই দান করে দেবেন, যার অধিকাংশ ব্যয় হবে আফ্রিকার স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে। এ লক্ষ্য পূরণে তিনি আগামী ২০ বছরের মধ্যে তার দান কার্যক্রম সম্পন্ন করতে চান।
এই ঘোষণা তিনি দেন ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় আফ্রিকান ইউনিয়নের সদর দপ্তরে দেওয়া এক ভাষণে। সেখানে তিনি বলেন, “আমার লক্ষ্য হলো, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার উন্নয়নের মাধ্যমে আফ্রিকার প্রতিটি দেশকে একটি সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়া।” এই মহাদেশে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (AI) ব্যবহার করে স্বাস্থ্যসেবা কীভাবে আরও কার্যকর করা যায়—তা নিয়েও তরুণ উদ্ভাবকদের চিন্তা করতে আহ্বান জানান তিনি।
গেটস বলেন, তার ফাউন্ডেশন আগামী ২০ বছরে দানের মাধ্যমে সম্পদ ব্যয় করে কার্যক্রম সমাপ্ত করবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার পাবে আফ্রিকার মায়েদের স্বাস্থ্য, শিশুদের পুষ্টি এবং সংক্রামক রোগ প্রতিরোধ। বিল গেটসের মতে, গর্ভবতী হওয়ার আগে নারীদের সুস্থ থাকা এবং পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করা জরুরি। কারণ গর্ভকালীন স্বাস্থ্য ভালো থাকলে, শিশুর জন্ম ও বেড়ে ওঠার মান অনেক উন্নত হয়।
এ ছাড়া তিনি বলেন, “শিশুদের প্রথম চার বছরে পুষ্টি নিশ্চিত করতে পারলেই দারিদ্র্য থেকে মুক্তির পথ তৈরি হবে।” উদাহরণ হিসেবে রুয়ান্ডার কথা বলেন গেটস, যেখানে AI সক্ষম আল্ট্রাসাউন্ড ব্যবহার করে গর্ভাবস্থায় জটিলতা আগেভাগেই শনাক্ত করা হচ্ছে।
বিল গেটস ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, তিনটি মূল লক্ষ্য তাদের:
১. মা ও শিশুদের প্রতিরোধযোগ্য মৃত্যুর হার শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনা।
২. নতুন প্রজন্মকে ভয়াবহ সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করে সুরক্ষিত বেড়ে ওঠার সুযোগ দেওয়া।
৩. লক্ষ লক্ষ মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্ত করা।
সাবেক মোজাম্বিকের ফার্স্ট লেডি গ্রাসা ম্যাচেল এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, “এটি এক সংকটময় সময়ে এসেছে। গেটসের অবিচল প্রতিশ্রুতি আমাদের আশার আলো দেখাচ্ছে।” বিশেষ করে এমন সময় যখন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে আফ্রিকায় এইচআইভি চিকিৎসা ও অন্যান্য সহায়তা কর্মসূচির তহবিল কমে গেছে।
বিল গেটস জানিয়েছেন, তার ফাউন্ডেশন আফ্রিকায় বহু বছর ধরে কাজ করছে এবং বিশেষভাবে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় মনোযোগ দেবে। তিনি বলেন, “আফ্রিকা মূলধারার ব্যাংক ব্যবস্থার বাইরেই মোবাইল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়েছে। এখন তাদের সামনে রয়েছে AI ব্যবহার করে পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার সুযোগ।”
এক ব্লগপোস্টে বিল গেটস বলেন, “আমি মারা গেলে আমার সম্পর্কে অনেকে অনেক কথা বলবে, তবে ‘তিনি ধনী হয়ে মারা গেছেন’ — এই কথাটি থাকবে না, সেটি আমি নিশ্চিত করতে চাই।” গত মাসে তিনি জানিয়েছিলেন, তার ফাউন্ডেশন যখন সম্পদ ব্যয়ের কাজ শেষ করবে, তখন এটি বন্ধ করে দেওয়া হবে। তবে বিল গেটসের ফাউন্ডেশন নিয়ে সমালোচনাও রয়েছে। অনেকে বলছেন, তিনি কর এড়াতে দাতব্য প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করেন এবং তার ফাউন্ডেশনের কারণে বৈশ্বিক স্বাস্থ্যব্যবস্থায় অতিরিক্ত প্রভাব বিস্তার করা হচ্ছে। যদিও ব্লুমবার্গের মতে, তার দানকৃত ৯৯ শতাংশ সম্পদ বাদ দিয়েও তিনি এখনো বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যক্তি থাকবেন।
প্রসঙ্গত, ১৯৭৫ সালে পল অ্যালেনের সঙ্গে মিলে গেটস প্রতিষ্ঠা করেন মাইক্রোসফট। এরপর কোম্পানিটি প্রযুক্তি দুনিয়ায় বিপ্লব ঘটায়। ২০০০ সালে তিনি প্রধান নির্বাহী এবং ২০১৪ সালে চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে আসেন। দানবীর ওয়ারেন বাফেটসহ আরও অনেককে দেখে তিনি দানকাজে অনুপ্রাণিত হন বলে জানিয়েছেন।
এই বিশাল দানের ঘোষণা গেটসকে শুধু প্রযুক্তির বিশ্বেই নয়, মানবতার ইতিহাসেও এক অসাধারণ অনুকরণীয় ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। যখন দুনিয়ার অনেক অংশ যুদ্ধ, দারিদ্র্য এবং স্বাস্থ্য সংকটে ভুগছে, তখন গেটসের এই উদ্যোগ এক অনন্য উদাহরণ হিসেবে সামনে আসছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি বাংলা
আপনার মতামত লিখুন :