আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম এখন নিম্নমুখী। গত কয়েক মাস ধরেই মূল্য কমছে। কিন্তু দেশের খুচরা বাজারে এখনো ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে এক লিটার সয়াবিন তেল। অথচ আন্তর্জাতিক বাজারে গত এক মাসে প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিনের মূল্য কমেছে ৩৩৬ ডলারের বেশি। এছাড়া এই সময়ে পাম অয়েলের মূল্যও কমেছে ৪৮০ ডলার।
এদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে বুকিং রেট কমে যাওয়ায় খাতুনগঞ্জের পাইকারি বাজারে কমতে শুরু করেছে ভোজ্য তেলের দাম। তবে খুচরা বাজারে এখনো এর কোনো প্রভাব পড়তে শুরু করেনি। গত ২৬শে জুন বোতলজাত সয়াবিন প্রতি লিটারে ৬ টাকা কমানোর ঘোষণা দেন ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা। বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারিত রয়েছে প্রতি লিটার ১৯৯ টাকা। পাশাপাশি খোলা সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারণ হয়েছে ১৮০ টাকা।
একইভাবে পাম অয়েলের নির্ধারিত দাম ১৫৪ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এই দামের চেয়েও লিটারে ২-৫ টাকা বেশি বিক্রি হচ্ছে।
বাংলাদেশে সয়াবিন তেলের বেশিরভাগ আসে আর্জেন্টিনা থেকে আর সবচেয়ে বেশি পাম অয়েল আসে ইন্দোনেশিয়া থেকে। আন্তর্জাতিক বাজারে (এফওবি) ১৩ই জুলাই প্রতি টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের মূল্য দাঁড়ায় ১,২৮৫ দশমিক ৩০ ডলার। এক সপ্তাহ আগেও এই দাম ছিল ১,৪০৫ দশমিক ০১ ডলার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি টনে দাম কমেছে ১১৯.৭১ ডলার। আর গত এক মাস আগে ছিল ১,৬২১ দশমিক ৯৪ ডলার।
অর্থাৎ এই একমাসে অপরিশোধিত সয়াবিন তেলের দাম কমেছে ২০.৭৬ শতাংশ। অপরিশোধিত পাম অয়েলের মূল্যও কমছে অনেক। ১৩ই জুলাই প্রতি টন অপরিশোধিত পাম অয়েলের মূল্য দাঁড়ায় ১০৫০ ডলার। এক সপ্তাহ আগে এই দাম ছিল ১,২৭০ ডলার। অর্থাৎ সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি টনে দাম কমেছে ২২০ ডলার। আর এক মাস আগে ছিল ১,৫৩০ ডলার।
অর্থাৎ এই একমাসে অপরিশোধিত পাম অয়েলের দাম কমেছে ৩১.৩৭ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আন্তর্জাতিক বাজারের কম মূল্যের সয়াবিন আসা শুরু হয়নি। এই পণ্য আসলে বাজারে দাম নেমে যাবে। তবে কবে নাগাদ কম মূল্যের সয়াবিন আসবে তা এখনই বলতে পারছেন না তারা।
এ ব্যাপারে টিকে গ্রুপের পরিচালক শফিউল তসলিম মানবজমিনকে বলেন, শুধু ডলারের কারণে প্রতি লিটার সয়াবিন তেলে ২৫-৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। যদি ডলারের দাম এভাবে না বাড়তো তাহলে সাশ্রয়ী মূল্যে তেল বিক্রি হতো। এছাড়া নতুন রেটের মাল বাংলাদেশে আসবে, ট্রিটমেন্ট হবে। এরসঙ্গে ট্রেড, ল্যান্ডিং চার্জ, বীমাসহ অন্যান্য খরচ যোগ হবে।
তারপর দাম কতো দাঁড়াবে জানা যাবে। আমার জানামতে, নতুন দামের সয়াবিন আগষ্ট মাসে এসে পৌঁছাবে না। এই মাল আসলে দেশে তেলের দাম কমবে। মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাওলা মানবজমিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে যেভাবে দাম কমেছে তাতে দেশে দাম আরও অনেক কমানো উচিত।
তবে ডলারের দাম বেশির কারণে ঠিক কতো কমতে পারে তা বলা যাচ্ছে না। কিন্তু দাম অনেক কমা উচিত। খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা জানান, ১৫ দিনের ব্যবধানে প্রতি মণে দেড় হাজার টাকা পর্যন্ত কমেছে ভোজ্য তেলের দাম। এর মধ্যে বেশি কমেছে এস আলম ব্র্যান্ডের তেলের দাম।
১৩ই জুলাই খাতুনগঞ্জের বাজারে সিটি গ্রুপের প্রতি মণ সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৬,৫০০ টাকায়। ১৫ দিন আগে এ তেলের দাম ছিল ৭ হাজার টাকা। একইভাবে এস আলম গ্রুপের সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ৬,৪০০ টাকায়। ১৫ দিন আগে এ তেলের দাম ছিল ৬,৮০০ টাকা। এস আলম গ্রুপের পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে প্রতি মণ সাড়ে ৪ হাজার টাকায়, যা ১৫ দিন আগেও বিক্রি হয়েছিল ৬ হাজার টাকায়।
অন্যদিকে সিটি গ্রুপের পাম অয়েল বিক্রি হয় প্রতি মণ ৫ হাজার টাকায়, যা ১৫ দিন আগেও ছিল ৬,২০০ টাকা। কনজ্যুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট হুমায়ুন কবির মানবজমিনকে বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিদিন ভোজ্য তেলের দাম কমছে।
আমাদের দেশের প্রন্তিক পর্যায়ে বোতলের গায়ে যে দাম লেখা থাকে সেই দামেই ভোক্তারা ক্রয় করে। বাজারে দাম কমলেও ভোক্তারা সুবিধা পাচ্ছে না। তাই সরকারের উচিত নতুন করে দাম নির্ধারণ করে দেয়া।