।। শেখ নাজমুল ইসলাম।।
আমেরিকায় ৫৯ বছর বয়সেও একজন নাগরিক সরকারী চাকুরীতে প্রবেশ করতে পারে ৷ শ্রীলংকা ও ইন্দোনেশিয়ায় ৪৫বছর, ভারতে রাজ্য ভেদে ৩৫ থেকে ৪৫বছর, পশ্চিম বঙ্গে ৪০ বছর, তাইওয়ানে ৩৫ বছর, কাতার ৩৫ বছর, সুইডেনে ৪৭ বছর, ফ্রান্সে ৪০ বছর, ইতালী ৩৫ বছর, কানাডা ৪৭ বছর বয়সেও একজন নাগরিক সরকারী চাকুরীতে যোগ দিতে পারে ৷ বাংলাদেশে একজন শিক্ষীত লোককে ৩০/৩২ বছর পার হলেই অযোগ্য বিবেচনায় এনে সরকারী চাকুরীতে প্রবেশের সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হয় ৷
বাংলাদেশের মতো অধিক জনসংখ্যার দেশে সরকারী চাকুরীতে প্রবেশের বয়সসীমা করা উচিৎ ৫৫বছর ৷ এবং শুধু সামরিক বাহিনী ছাড়া সব চাকুরীর মেয়াদ হওয়া উচিৎ সর্বচ্চো ৫বছর ৷ তবে একজন কর্মকর্তা কর্মচারী তার চুক্তির ৫বছর শেষ হলে ঐ সেক্টরে নতুন নিয়োগে অথবা অন্য কোন সেক্টরে নিয়োগের জন্য আবেদন করতে পারবে ৷ এভাবে ৫৫ বছর বয়স পর্যান্ত আবেদন করতে পারবে৷
বর্তমান নিয়ম অনুযায়ী একজন কর্মকর্তা কর্মচারী ৩৫/৪০ বছর চাকুরীতে থাকার সুযোগ থাকায় ১০/২০/৫০ লক্ষ থেকে শুরু করে ২/৩/৫কোটি টাকা ঘুষ দিয়ে ও চাকীরী নেওয়ার প্রবনতা প্রচলিত আছে ৷ অনেক টাকা দিয়ে চাকুরী নেওয়ার পর ঐ কর্মকর্তা কর্মচারী তার টাকা তোলার জন্য বেপরোয়া হয়ে উঠে ৷ ফাইল আটকিয়ে সাধ্যমত ঘুষ আর লুটপাট শুরু করে ৷এভাবে বেপরোয়া হওয়ার পরে কখনো ধরা পড়লে তাকে অন্যাত্রো বদলি করা হয় ৷ স্বাধীন দেশে এটা কোন আইন হতে পারে না ৷ বদলি কোন শাস্তির আওতায় পড়ে না ৷ ৫বছর মেয়াদী চাকুরী হলে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ দিয়ে কেউ চাকুরী নিতে চাইবে না ৷ সংগত কারনেই ঘুষ প্রথা কমে আসবে ৷
স্বাধীনতার পর এই ৫৪ বছরে যখন যে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় ছিলো তারা তখন সাধারন জনগণকে চাকুরী দেওয়ার জন্য এই ঘুষ প্রথাকে করোনার জীবানুরুপে জাতির মধ্যে ডুকিয়ে দিয়েছে ৷ ( আগ মানূষ ভয়ংকর কিছু বোঝাত ক্যান্সারের উপমা ব্যাবহার করতো,কিন্ত এখন সব চেয়ে বড় ভয়ংকর আতংক হলো করোন ৷ তাই উপমা হিসাবে করোনাকে ব্যাবহার করা হয়েছে ৷) ভাবতে অবাক লাগে !মসজিদের ইমাম নিয়োগ ও হয় ঘুষের মাধ্যমে ৷
ঘুষ নামক এই মরণব্যাধী থেকে জাতিকে মুক্ত করতে হলে চাকুরীর মেয়াদ সংক্ষিপ্ত করার কোন বিকল্প নাই ৷ একই সাথে প্রবেশের মেয়াদ যদি ৫৫ করা হয় তাহলে যে সকল শিক্ষীত মেধাবীরা বেকার থেকে হতাশাগ্রস্থ তারা শেষ বয়সে ৫বছর সার্ভিস দেওয়ার সুযোগ পেলে কাজের ক্ষেত্রে হয়তো সর্বচ্ছোটা দেওয়ার চেষ্টা করবে ৷
২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের পর অন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে রাষ্ট সংস্কার কাজ চলছে ৷ যদি ও কিছু কিছু দল কোন সংস্কার করতে দিতে রাজি নন ৷ তারপর ও আমার মনে হয় এই যায়গাটাতে সংস্কার করা জরুরি ৷ কোন নির্বাচিত সরকার আসলে তারা এটি করতে চাইবে না ৷ কারন এই ধরনের সংস্কার করলে তাদের দলিয় আস্তাভাজন লোকদের আয়ের উৎস সংকুচিত হয়ে যাবে ৷ আমার মনে হয় দেশে নির্বাচিত সরকারের চেয়ে সর্ব স্তরের মত প্রকাশের সরকার গঠন হওয়া জরুরী ৷ নির্বাচিত সরকার হলে সেটা হয় এক পক্ষিয় সরকার ৷ একপক্ষ শাসকের ভুমিকায় থেকে অন্য পক্ষগুলোর উপর চালায় নির্যাতন, জুলুম ,লুটপাট ৷ বিগত ১৬ বছর তার জলন্ত উদাহারন ৷ বিগত আওয়ামী সরকারের আমলে চাকূরীতে নিয়োগের পাশাপাশি বদলিতে ও বিপুল অংকের টাকা লেন-দেন হয়েছে ৷ কয়েক দিন আগে শিক্ষা মন্রালয়ের একজন সচিব বলেছেন , একজন শিক্ষকের বদলি ঠেকানোর জন্য তাকে কোটি টাকা ঘূষ অফার করা হয়েছিলো ৷
এবার আসি বয়সের ক্ষেত্রে, অনেকে হয়তো বলবে ৪০/৫০ বছরে সরকারী চাকুরী দিলে সে কাংখিত সার্ভিস দিতে পারবে না ৷ ভারতের একটি সিনেমায় ফাটাকেস্ট নামে একজন স্বরাষ্ট মন্রীকে দেখেছিলাম ৷ নাম ভুমিকায় অভিনয় করিছিলেন মিঠুন চক্রবর্তী ৷ আমরা এখন বাস্তবে একজন ফাটাকেষ্ট পেয়েছি ৷ তিনি হলেন লেফটেন্টেন্ট জেনারল (অব:) মো:জাহাঙ্গীর আলম ৷ তিনি স্বরাষ্ট উপদেষ্টা হয়ে ও রাস্তায় নেমে সাধারন মানুষের সাথে মিশে সকল শ্রেনী পেশার মানুষের খোঁজ খবর নিচ্ছেন ৷সরকারী দপ্তর গুলোতে দুর্নীতি কমানো ও কাজের গতি বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ৷ নেই তেমন কোন বিশাল প্রকটল বহর , নেই কোন লাল গালিচা সংবর্ধণা ৷ নিজের জীবনের নিরাপত্তার কথা না ভেবে দিন রাত ছুটে বেড়াচ্ছেন পথে ঘাঠে ৷
১৯৫৩ সালে মুন্সিগন্জে জন্ম নেওয়া এই কৃতি সন্তান ১৯৭৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যান্ত ৩৫ বছর সেনাবাহীনির বিভিন্ন পদে থেকে অত্যান্ত নিষ্ঠার সাথে নিজ দায়িত্ব পালন করেছেন ৷ দীর্ঘ দিন অবসরের পর ১৬ই আগষ্ট ২০২৪ তিনি বর্তমান অন্তবর্তীকালীন সরকারে উপদেষ্টা হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত হন ৷ ৭২ বছর বয়সে এসে স্বরাষ্ট উপদেষ্টার দায়িত্ব নিয়ে তিনি দিন তার কাজের মাধ্যমে আলো ছড়াচ্ছেন ৷ আমি হলফ করে বলতে পারি বাংলাদেশ এই রমক সাদামাটা নিরঅহংকার কর্তব্য পরায়ন স্বরাষ্ট মন্রী আগে কখনো দেখেনি ৷ আর ৮৪ বছর বয়সী ড. মোহাম্মাদ ইউনুচের কথা আমাদের হতভগা অকৃতজ্ঞ জাতি ছাড়া বিশ্বের প্রায় ৮০০ কোটি মানুষ জানে এবং মানে ৷ ইংরাজীতে একটি প্রবাদ আছে ৷ Age Is Just a number যার বাংলা অর্থ, “বয়স একটি সংখ্যা মাত্র ৷” ড. মোহাম্মাদ ইউনূসের ক্ষেত্রে প্রবাদটির যতার্থতার প্রমান পাওয়া যায় ৷ দেশের সেবা করার স্বদিচ্ছা থাকলে যে কোন বরসেই সম্ভব ৷
পরিশেষে এ কথাটি প্রনিধান যোগ্য- ‘অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে, তব ঘৃনা তারে তৃণ সমদহে’ ৷ ঘুষ দেওয়া এবং নেওয়া দুটোই অপরাধ ৷ আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যাবস্থায় আমরা যখন নিজে বা নিজের পরিবারের কাউকে ঘুষ দিয়ে চাকুরী নিয়ে দেই তখন নিজের কাছে সেটা অপরাধ মনে হয় না ৷ ঘুষ প্রথা বিলুপ্ত করতে চাকুরীর মেয়াদ কমিয়ে আনা অতীব জরুরী ৷
আপনার মতামত লিখুন :