মৌসুমের শুরুতেই বিশ্বের ২৫টি দেশে ছয় শ’ টন আম রফতানি রেকর্ড করেছে বাংলাদেশ। আগামী তিন মাসে অন্তত চার হাজার টন আম রফতানির ব্যাপারে আশা করছেন আম রফতানির সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ী ও কর্মকর্তারা। যা গত আমের মৌসুমে রফতানির হারের চেয়ে দ্বিগুণ হবে।
জানা যায়, গত মে মাসের ১৮ তারিখ থেকে অনানুষ্ঠানিক আম রফতানি শুরু হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে আম রফতানি শুরু হয় গত ২৮ মে। এদিন চীনের বাজারে ৫০ টন আম রফতানির মাধ্যমে রফতানি শুরু হয়।
গ্রীষ্মকালীন সুস্বাদু ফল আমের বাম্পার উৎপাদনেও এবার রেকর্ড গড়তে যাচ্ছে দেশ। চলতি মৌসুমে প্রায় দু’ লাখ পাঁচ হাজার ৩৪ হেক্টর জমিতে প্রায় ২৭ লাখ মেট্রিক টন আমের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
জানা যায়, যুক্তরাজ্য, ইতালি, ফ্রান্স, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সৌদি আরব, জার্মানি, সুইডেনসহ প্রতি বছর অন্তত ৩৮টি দেশে বাংলাদেশের আম রফতানি হয়ে থাকে। এবারই প্রথম চীনে আম রফতানি হলো।
আম রফতানি প্রসঙ্গে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ‘রফতানিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পে’র প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ‘গত ১৫/১৬ দিনে প্রায় ছয় শ’ টন আম রফতানি হয়েছে। গোপালভোগ, হিমসাগর ও ল্যাংড়া আম এ সময় রফতানি হয়।’
তিনি বলেন, ‘আমের মৌসুমের আরো অন্তত আড়াই মাস রয়েছে, এরমধ্যে চার হাজার টন আম রফতানি হবে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি আম রফতানি হয় ইংল্যান্ডে।’ আম রফতানির বিষয়ে এর মান ঠিক রাখার জন্য রফতানিকারকদের সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে শ্যামপুর কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজ। এ প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানই আম রফতানি করতে পারবে না।
এ ব্যাপারে আরিফুর রহমান বলেন, ‘সরকারের কেন্দ্রীয় প্যাকিং হাউজের সার্টিফিকেশন গুরুত্বপূর্ণ, রফতানির জন্য প্রস্তুতকৃত আমে যাতে কোন রোগ-বালাই, পোকামাকড় না থাকে সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়। বিদেশের বাজারে যাতে মান সম্মত আম রফতানি করা যায় সেদিকে খেয়াল রাখা হয়।’
তিনি জানান, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের তালিকাভুক্ত ১৫০টি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা আম রফতানির সাথে জড়িত। এবার প্রতি কেজি আম রফতানি হচ্ছে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ ডলারে। এক্ষেত্রে বিমানের ভাড়া বাবদ তিন থেকে চার ডলার লেগে যায়। রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার মাধ্যমে আম রফতানি করে থাকে। তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘সব ঠিক থাকলে এবার আম রফতানি দেশের জন্য একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করবে।’
এদিকে বিগত ৮ বছরে আম রফতানির হিসাবে দেখা যায়, ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে আম রফতানি হয়েছিল মাত্র ৩০৯ টন, পাঁচ বছর পর ২০২১-২২ অর্থ বছরে আম রফতানি বৃদ্ধি পেয়ে হয় ১৭৫৭ টন। আর ২০২২-২৩ অর্থ বছরে আরো বৃদ্ধি পেয়ে আম রফতানি হয় ৩১ টন। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে আম রফতানি কমে যায়, রফতানি হয় প্রায় ১৪ শ’ টন আম।
গত ৫ মে থেকে সাতক্ষীরার গোপালভোগ আমের মাধ্যমে দেশে আমের ফলন শুরু হয়। এখন আম উৎপাদনের ভরা মৌসুম চলছে। বর্তমানে আম উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান সপ্তম। বাংলাদেশের সুস্বাদু আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয়ে থাকে। বাসস