ব্রিটিশ দূতসহ বেশ কয়েকজন বিদেশি কূটনীতিককে গ্রেপ্তার করেছে ইরান। ‘গুপ্তচরবৃত্তির’ অভিযোগে ইরানের বিপ্লবী গার্ডের সদস্যরা তাদেরকে গ্রেপ্তার করে। বুধবার (৬ জুলাই) ইরানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও বার্তাসংস্থা ফার্স এই তথ্য সামনে এনেছে বলে জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি।
ফার্স জানিয়েছে, বিপ্লবী গার্ডের গোয়েন্দা সংস্থা ইরানে গুপ্তচরবৃত্তিকারী বিদেশি দূতাবাসের কূটনীতিকদের চিহ্নিত এবং গ্রেপ্তার করেছে। পরবর্তীতে একজন ব্রিটিশ কূটনীতিককে দেশ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলেও জানিয়েছে বার্তাসংস্থাটি।
ইরানি সংবাদমাধ্যম পার্সটুডে জানিয়েছে, ইরানের ইসলামি বিপ্লবী গার্ড বাহিনী বা আইআরজিসি’র গোয়েন্দা সংস্থা গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তেহরানে নিযুক্ত ব্রিটিশ উপ-রাষ্ট্রদূতসহ কয়েকজন পশ্চিমা নাগরিককে আটক করেছে।
আটককৃত ব্যক্তিরা ইরানের প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত এলাকাগুলো থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ এবং এসব এলাকার ছবি তোলাসহ এ ধরনের অন্যান্য তৎপরতা চালাচ্ছিল।
ইরানের আরেকটি বার্তাসংস্থা ইরনা জানিয়েছে, ড্রোন থেকে তোলা একটি ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, সন্দেহভাজন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ‘প্রবেশ নিষিদ্ধ’ চিহ্নযুক্ত এলাকায় প্রবেশ করেছেন।
এসব ব্যক্তির একজন হলেন ব্রিটিশ উপ-রাষ্ট্রদূত গিলস হোয়াইটেকার যিনি তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে পর্যটকের ছদ্মবেশে ইরানের কেরমান প্রদেশের শাহদাদ মরুভূমিতে যান।
আইআজিসি’র গোয়েন্দা বাহিনীর তোলা ভিডিওতে দেখা যায়, ওই এলাকায় যখন ইরানের সেনাবাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালাচ্ছিল তখন ওই ব্রিটিশ কূটনীতিক সেখানকার মাটির নমুনা সংগ্রহ করেন।
ইরনার খবরে বলা হয়, হোয়াইটেকারকে আটক করার পর তিনি নিজের ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাওয়ার পর তাকে ওই শহর থেকে বহিষ্কার করা হয়। এছাড়া বার্তাসংস্থা ফার্স জানিয়েছে, হোয়াইটেকার কূটনীতিকের দায়িত্ব পালন শুরু করার আগে একজন সেনা কর্মকর্তা ছিলেন।
আটক বিদেশিদের আরেকজন হলেন- তেহরানে নিযুক্ত অস্ট্রিয়ার কালচারাল এটাশে’র স্বামী। তিনি ইরানের সেমনান প্রদেশের দামকান এলাকায় গিয়ে একটি গ্রাম থেকে মাটির নমুনা সংগ্রহ করেন। তাকে তেহরানের একটি সামরিক এলাকার ভিডিও চিত্র ধারণের সময় আটক করা হয়েছে।
তৃতীয় যে বিদেশিকে প্রমাণসহ আটক করা হয়েছে তার নাম ম্যাসিচ ওয়ালজাক। তিনি পোল্যান্ডের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এবং পর্যটকের ছদ্মবেশে ইরান সফরে এসেছিলেন। ইরানের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে বৈজ্ঞানিক বিনিময় কর্মসূচির আওতায় তিনি একটি টিম নিয়ে ইরানে প্রবেশ করেন।
এরপর তারা কেরমান প্রদেশের শাহদাদ অঞ্চলে যান যেখানে সে সময় ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চলছিল। সেখান থেকে তারা মাটি, পানি, পাথর, লবণ এবং কাদার নমুনা সংগ্রহ করেন। এই ব্যক্তি পোল্যান্ডের কোপার্নিকাস বিশ্ববিদ্যালয়ের জৈব ও জৈবপ্রযুক্তি বিভাগের প্রধান। ইরনা জানিয়েছে, ইসরায়েলের সঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগসাজশ রয়েছে।
এর আগে গত মে মাসে ইরানের গোয়েন্দা মন্ত্রণালয় জানিয়েছিল, ইরানে গণ্ডগোল, সামাজিক অস্থিরতা ও নিরাপত্তাহীনতা সৃষ্টির অপচেষ্টার অভিযোগে দুই ইউরোপীয় নাগরিককে আটক করা হয়েছে।
এছাড়া গত এপ্রিলে ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় সিস্তান ও বেলুচিস্তান প্রদেশে ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের পক্ষে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তিন ইরানি নাগরিককে আটক করা হয়।
সূত্র : পার্সটুডে