দিল্লিতে বন্দুকধারীদের হামলার সাজানো মহড়া -বিবিসি
এএনআই জানিয়েছে, বুধবার মহড়ার দিন নির্ধারিত হলেও মঙ্গলবার থেকেই ভারতের নানা এলাকায় মহড়া শুরু হয়েছে। পেহেলগামের হামলার পর পাকিস্তানের সাথে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যেই বুধবার (৭ মে) ভারতের সব রাজ্যে ‘মক ড্রিল’ বা আপৎকালীন অথবা যুদ্ধ পরিস্থিতির মহড়া হবে। তবে বুধবার মহড়ার দিন নির্ধারিত হলেও মঙ্গলবার (৬ মে) থেকেই ভারতের নানা এলাকায় মহড়া শুরু হয়েছে।
ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক নির্দেশে দেশের সব রাজ্য ও কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলগুলোতে ‘সিভিল ডিফেন্স’ বা বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগগুলো এই ‘মক ড্রিল’ বা যুদ্ধ পরিস্থিতি প্রস্তুতির মহড়া পরিচালনা করবে।
হঠাৎ যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে বা বিমান হানা বা বন্দুকধারীদের হামলা হলে সাধারণ নাগরিকদের করণীয় কী হবে, তারই মহড়া হবে বলে জানিয়েছে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও প্রাক্তন কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘যদি যুদ্ধ বাঁধে তাহলে সামরিক বাহিনী তো থাকবেই, কিন্তু সাধারণ মানুষ তো বসে বসে দেখবে না, তাদেরও কিছু দায়িত্ব আছে। সেইসব দায়িত্বই স্মরণ করিয়ে দেয়া হবে এই মহড়ার মাধ্যমে।’
মঙ্গলবার (৬ মে) দুপুরে মহড়ার জন্য কতটা প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে, তা খতিয়ে দেখতে দেশটির কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট সচিব গোভিন্দ মোহন দফতরের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের নিয়ে একটি বৈঠক করেছেন।
মহড়ায় কী হবে?
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যে নির্দেশিকা পাঠিয়েছে, তাতে দেশের ২৪৪ বেসামরিক প্রতিরক্ষা জেলার শহর থেকে গ্রাম-সব এলাকাতেই বুধবার মহড়া চলবে।
বিমান হামলা হলে ঠিকমতো সাইরেন বাজিয়ে সঙ্কেত দেয়া যাচ্ছে কি না, কন্ট্রোল রুমে কীভাবে কাজ হবে-সবই মহড়ার সময়ে খতিয়ে দেখা হবে। বিমানবাহিনীর সাথে যোগাযোগ ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হবে বুধবার।
আবার সাধারণ মানুষের কী করণীয় হবে, সেটাও বুঝিয়ে দেয়ার জন্য স্বেচ্ছাসেবক বেছে নেয়া হচ্ছে।
বিমান হামলা হলে ‘ব্ল্যাক আউট’ বা সব আলো নিভিয়ে দেয়ার মহড়াও হবে।
অন্যদিকে, বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের কর্মীরা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে সাধারণ নাগরিকদের নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রশিক্ষণ ঠিক মতো আছে কি না, আগুন লাগলে তা নেভানোর ব্যবস্থাপনা ঠিক আছে কি না অথবা উদ্ধারকাজ ঠিক মতো করা যাচ্ছে কি না, সেটাও দেখে নেবে সরকার।
গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোগুলিকে অতি দ্রুত রঙ করে ‘কেমোফ্লেজ’ করে দেয়ার মহড়াও হবে বুধবার।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলার সরকারি কর্মকর্তা, বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগের স্বেচ্ছাসেবক, হোমগার্ড, ন্যাশনাল ক্যাডেট কোর বা এনসিসি-র ছাত্রছাত্রীসহ নেহরু যুব কেন্দ্র এবং স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মহড়ায় অংশ নেয়ার জন্য আবেদন করতে বলা হয়েছে।
সংবাদ সংস্থা এএনআই জানাচ্ছে, বুধবার মহড়ার দিন নির্ধারিত হলেও মঙ্গলবার থেকেই ভারতের নানা এলাকায় মহড়া শুরু হয়েছে।
কোথাও আগুন নেভানো ব্যবস্থা খতিয়ে দেখা হচ্ছে, কোথাও উদ্ধারকারী দল বেসামরিক নাগরিকদের সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে, বিমান হামলার সাইরেন বাজলেই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের টেবিলের নিচে চলে যেতে বলা হচ্ছে-এমন নানা তথ্য দিয়েছে সংবাদ সংস্থাটি।
নাগরিকদের যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে
যুদ্ধকালীন মহড়ার দিনে কোথাও বিমান হামলার সাইরেন বেজে উঠতে পারে, কোথাও বন্দুকধারীদের সাজানো হামলার মতো পরিস্থিতিও তৈরি করতে পারে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
সরকার মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, শুধুমাত্র সরকারি ঘোষণার দিকেই যেন মানুষ নজর রাখেন। আতঙ্কিত না হতেও বলা হয়েছে মানুষকে। পুলিশ, বেসামরিক প্রতিরক্ষা বিভাগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের নির্দেশ মেনে চলতে বলা হচ্ছে।
কিছু এলাকায় যান চলাচল নিষিদ্ধ করে দেয়া হতে পারে। সেই সব এলাকার দিকে না যেতে বলা হয়েছে।
কিছু ওষুধ, টর্চ, জলের বোতল এবং ফার্স্ট এইড কিট হাতের কাছে রাখার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
মহড়া কেন দরকার?
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও প্রাক্তন কমান্ডো দীপাঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, ‘এই ধরনের যুদ্ধকালীন মহড়ার দু’টি মূল উদ্দেশ্য আছে। এক, পাকিস্তানের ওপরে একটা মানসিক চাপ তৈরি করা যে ভারতে মক ড্রিল হচ্ছে-তার মানে ভারত কোনো একটা সামরিক পদক্ষেপ হয়তো নেবে। দ্বিতীয়ত, কোনো হামলা হলে সাধারণ মানুষ যাতে সতর্ক থাকতে পারেন, তাদের কর্তব্যগুলো কী, সেটা অবহিত করিয়ে দেয়া।’
তিনি বলেন, ‘একমাত্র ইসরাইলে এ ধরনের মক ড্রিল হয় অনেক দশক ধরেই। এটা ভারতের নাগরিকদের জন্য খুবই জরুরি ছিল। নিরাপত্তা বাহিনীগুলোতে নিয়মিত ড্রিল হয়, কিন্তু সাধারণ মানুষকেও আপৎকালীন পরিস্থিতির সাথে একাত্ম করিয়ে নেয়া হবে এই মহড়ার মাধ্যমে।’
তার কথায়, ‘কোনো যুদ্ধ হলে আমাদের সামরিক বাহিনীগুলো তো লড়বেই, কিন্তু সাধারণ মানুষ কি চা খেতে খেতে সেই যুদ্ধের ছবি দেখবে টেলিভিশনে? তাদেরও তো কর্তব্য আছে, সতর্কতা নেয়ার দরকার আছে। তবে তার অর্থ এটা নয় যে সব মানুষ বাড়িতে বাঙ্কার বানাবে।’
এর আগে, সর্বশেষ যে যুদ্ধ হয়েছিল ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে, সেই কারগিল যুদ্ধের সময়ে এ ধরনের যুদ্ধকালীন মহড়া দেয়া হয়নি।
তবে ১৯৬৫ এবং ১৯৭১-এর যুদ্ধের সময়ে ব্ল্যাক আউট করে দেয়া হতো এবং বিমান হামলার সঙ্কেত দিয়ে সাইরেন বাজানো হতো।
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে
পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা এখন চরমে পৌঁছেছে। দু’ দেশ থেকেই লাগাতার বিবৃতি-পাল্টা বিবৃতি দেয়া হচ্ছে।
ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং রোববার সন্ধ্যায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, ‘আপনারা যেরকম চাইছেন, সেটাই করা হবে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে।’
রোববার সন্ধ্যায় দিল্লিতে সনাতন সংস্কৃতি জাগরণ মহোৎসবের অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন রাজনাথ সিং। সেখানে তিনি পেহেলগাম হামলা বা পাকিস্তানের নাম উল্লেখ করেননি, কিন্তু নানা ইঙ্গিত দিয়েছেন ভাষণে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রীসহ সেদেশের অনেক রাজনীতিবিদ আশঙ্কা করছেন যে ভারত হয়তো কোনো সামরিক পদক্ষেপ নেবে।
গত সপ্তাহে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা আসিফ একটি বেসরকারি সংবাদ চ্যানেলকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘পাকিস্তানের পানি বন্ধ করে দেয়া বা অন্য খাতে বইয়ে দেয়ার জন্য কোনো অবকাঠামো যদি তৈরি করা হয়, তাহলে সেটা ধ্বংস করে দেয়া হবে।’
‘পেহেলগামের হামলার পর ভারত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে একাধিক ব্যবস্থা নিয়েছে। এর মধ্যে আছে সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে দেয়া এবং পাকিস্তান থেকে সব ধরনের রফতানি বন্ধ করে দেয়ার মতো ব্যবস্থা।’
অন্যদিকে, জাহাজ চলাচল দফতরের মহানির্দেশক নির্দেশ দিয়েছেন যে পাকিস্তানের কোনও জাহাজ ভারতের কোনও বন্দরে ঢুকতে পারবে না। বিবিসি
আপনার মতামত লিখুন :