ভারতের সাম্প্রতিক বিমান দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে বিমানের যান্ত্রিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এর জেরে দেশটির বিমান চলাচল নিয়ন্ত্রক সংস্থা ডিরেক্টর জেনারেল অব সিভিল এভিয়েশন (ডিজিসিএ) দেশে চলমান সব বোয়িং বিমানকে জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ পরীক্ষা করার নির্দেশ দিয়েছে। এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয় জুনে ঘটে যাওয়া বিমান দুর্ঘটনায় ২৬০ জন নিহত হওয়ার ঘটনার তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ের প্রতিবেদনের ভিত্তিতে। সোমবার (১৪ জুলাই) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
গত ১২ জুন এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট ১৭১ বোয়িং ৭৮৭ ড্রিমলাইনার লন্ডনের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিধ্বস্ত হয়। এতে বিমানের ২৪২ যাত্রীর মধ্যে একজন ছাড়া সবাই প্রাণ হারান, আর নিহত হন আরও ১৯ জন গ্রাউন্ড স্টাফ। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, বিমানটির ইঞ্জিনে জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, এবং এ বিষয়ে ককপিট ভয়েস রেকর্ডিং-এ দুই পাইলটের মধ্যে বিভ্রান্তিমূলক সংলাপ পাওয়া যায়, একজন পাইলটকে বলতে শোনা যায়, “তুমি কেন সুইচ বন্ধ করে দিলে?”— উত্তরে অন্যজন বলেন, “আমি করিনি”।
এই ঘটনার পরপরই ভারতের ডিজিসিএ সোমবার (১৪ জুলাই) ঘোষণা করে, সব বোয়িং পরিচালনাকারী এয়ারলাইন্সকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে জ্বালানি সুইচের পরীক্ষা সম্পন্ন করতে হবে। যদিও যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) বলেছে বোয়িং বিমানের জ্বালানি সুইচ নিরাপদ, তবে ২০১৮ সালেই তারা এক পরামর্শ বিজ্ঞপ্তিতে বলেছিল—এই সুইচগুলো যেন ভুল করে সরানো না যায় তা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু সেটি বাধ্যতামূলক ছিল না। ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এয়ার ইন্ডিয়া সেই পরীক্ষাটি করেনি, কারণ নিয়মে তা আবশ্যিক ছিল না।
তবে এখন ডিজিসিএ এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে এবং সব এয়ারলাইন্সকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে রিপোর্ট জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। তারা বলেছে, “এই কাজ যথাসময়ে সম্পন্ন না হলে উড্ডয়ন নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়তে পারে।” এছাড়া দক্ষিণ কোরিয়ার সংশ্লিষ্ট সংস্থা দক্ষিণ কোরিয়ান বোয়িং পরিচালনাকারী বিমান সংস্থাগুলোকেও অনুরূপ পরীক্ষা করার নির্দেশনা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
এদিকে পাইলটদের দোষারোপ করার প্রবণতায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইন্ডিয়ান কমার্শিয়াল পাইলটস অ্যাসোসিয়েশন (আইসিপিএ)। সংগঠনটি বলেছে, “পাইলটদের প্রশিক্ষণ অনুযায়ী তারা দায়িত্ব পালন করেছেন। অনুমান নির্ভর মন্তব্যে দোষারোপ অনুচিত।” এছাড়া এয়ার ইন্ডিয়ার পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, তদন্ত এখনো প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে এবং ভিত্তিহীন গুজব থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। তথ্যসূত্র : বিবিসি
আপনার মতামত লিখুন :