ভারতে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : এপ্রিল ৯, ২০২৫, ১০:১০ অপরাহ্ণ /
ভারতে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন

ভারতের মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ বহুস্তরবিশিষ্ট ও জটিল। সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা উপাদানের মিলিত প্রভাবে এই সম্প্রদায়ের ওপর যে নির্যাতন ও বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়, তা শুধু ব্যক্তিগত নয়; বরং কাঠামোগতও। এই নির্যাতনের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে বলতে হয়, যে উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক নীতি, পক্ষপাতদুষ্ট আইন প্রয়োগ এবং রাজনৈতিক অবিচার এসব মিলিতভাবে মুসলমান সম্প্রদায়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসনকে সীমিত করছে। ভবিষ্যতে যাতে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়পরায়ণ নীতি বাস্তবায়িত হয়, তাতে দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সমন্বয় এবং সম্প্রদায়ের উন্নয়ন সম্ভব হতে পারে

ভারতের সমাজে ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য থাকা সত্ত্বেও হিন্দু অগ্রগণ্য সংগঠন বা মৌলবাদী গোষ্ঠীর কর্মকাণ্ড মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের অভিযোগকে জোরদার করেছে। এই বিশ্লেষণে ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, মতবাদগত দৃষ্টিভঙ্গি ও সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহ বিশ্লেষণের মাধ্যমে বিষয়টির বহুমাত্রিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করা হয়েছে। লক্ষ্যণীয় যে, এখানে উপস্থাপিত তথ্য ও বিশ্লেষণ শুধু একাডেমিক ও নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে বিষয়টি বুঝতে সহায়ক।

ঐতিহাসিক দিক : ভারতীয় উপমহাদেশে দীর্ঘকাল ধরে ধর্মীয় বৈষম্য ও দ্বন্দ্বের ইতিহাস রয়েছে। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে, রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে কিছু হিন্দু অগ্রগণ্য গোষ্ঠী তাদের মতাদর্শ ও সাংস্কৃতিক আদর্শকে রক্ষার নামে মুসলমান সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে। এই প্রেক্ষাপটটি সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে সঙ্কটের সৃষ্টির অন্যতম কারণ হিসেবে বিবেচিত হয়।

মতবাদগত দৃষ্টিভঙ্গি : কিছু হিন্দু জঙ্গিগোষ্ঠী নিজেদেরকে ‘সংস্কৃতির রক্ষক’ হিসেবে উপস্থাপন করে, যেখানে তারা দাবি করে যে, মুসলমান সম্প্রদায়ের কিছু কর্মকাণ্ড বা ঐতিহ্য ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে অসঙ্গতিপূর্ণ। এই মতাদর্শ প্রচারের ফলে কখনো কখনো মুসলমানদের প্রতি বৈষম্য ও ঘৃণামূলক আচরণ দেখা দেয় যা সম্প্রদায়ের ওপর বিপুল নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

নিপীড়নের বিভিন্ন দিক ও উপস্থাপন

সামাজিক ও সাংস্কৃতিক নিপীড়ন : হিন্দু জঙ্গি সংগঠনগুলোর কিছু কর্মকাণ্ডে মুসলমান সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে নির্দিষ্ট আক্রমণের শিকার করা হয়েছে। এ ধরনের আক্রমণে, মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী স্থান, মসজিদ বা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলোর দিকে আক্রমণ, অবহেলা ও অসম্মান প্রদর্শনের প্রবণতা লক্ষ করা গেছে। এ ধরনের ঘটনা শুধু শারীরিক আক্রমণ নয়; বরং সামাজিক ও মানসিক নির্যাতনের দিক থেকেও উল্লেখযোগ্য।

রাজনৈতিক ও আইন প্রয়োগে পক্ষপাত : কিছু ক্ষেত্রে হিন্দু জঙ্গিগোষ্ঠীর কর্মকাণ্ডকে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্যবহার করার চেষ্টা দেখা গেছে। এর ফলে, নির্বাচনী প্রক্রিয়া ও স্থানীয় শাসন ব্যবস্থায় মুসলমান সম্প্রদায়কে অসহায় করে তোলে।

অর্থনৈতিক ও অবকাঠামোগত বৈষম্য : মুসলমান সম্প্রদায়ের অর্থনৈতিক অবকাঠামো ও সম্পদের দিকে অন্যায় আচরণ ও ভেদাভেদের অভিযোগ উঠেছে, যা কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি হিন্দু জঙ্গি সংগঠনের উদ্দীপনার সাথে সম্পর্কযুক্ত। এই প্রক্রিয়া মুসলমানদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে।

প্রভাব ও পরিণতি

সামাজিক সেলিব্রেশন ও বিশ্বাসের ক্ষয় : নির্যাতনের ফলে মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে সামাজিক বিভাজন, অভিমান ও নিরাপত্তাহীনতার ধারণা বৃদ্ধি পায়। ফলে সম্প্রদায়ের ঐক্য ও সামাজিক সঙ্গতি হ্রাস পেতে থাকে।

রাজনৈতিক ও আইনগত চ্যালেঞ্জ : ধর্মীয় নির্যাতনের ঘটনা রাজনৈতিক মঞ্চে উত্তপ্ত বিতর্কের বিষয় হিসেবে ওঠে, যা সংসদীয় ও বিচারিক ব্যবস্থায় প্রশ্ন তুলে। এতে আইনের শৃঙ্খলা ও সমতা রক্ষা বিশেষ চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়। হিন্দু জঙ্গিদের দ্বারা মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের ঘটনা একটি বহুমাত্রিক ও জটিল সমস্যা। ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট, মতবাদগত বৈষম্য ও রাজনৈতিক প্রভাব সমগ্র বিশ্লেষণ থেকে বোঝা যায়, নির্যাতনের অভিযোগ শুধু নির্দিষ্ট ঘটনার বাইরেই নয়; বরং একটি কাঠামোগত সমস্যার অংশ হিসেবে উঠে এসেছে, যা সামাজিক শান্তি ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সাথে অসঙ্গতি সৃষ্টি করে।

একাডেমিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টির গভীর বিশ্লেষণ ও বহুপাক্ষিক সমাধান আবশ্যক, যা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ন্যায়বিচার, সমতা ও সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা প্রদান করে। রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রতিষ্ঠানগত দিক থেকে ভারতের মুসলমানদের ওপর লক্ষ করে চালিত নির্যাতনের প্রাসঙ্গিক দিকগুলো তুলে ধরার চেষ্টা করব।

সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্যের অবক্ষয় : মুসলমান সমাজের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ধর্মীয় অনুশীলনের প্রতি নানা সময় সামাজিক অস্বীকৃতি এবং বিদ্বেষাত্মক মনোভাব অব্যাহত থাকছে। স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে এমন মনোভাব সম্প্রদায়ভিত্তিক বিভাজনকে আরো তীব্র করে, যা মুসলমান সম্প্রদায়ের সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এবং আত্মসম্মানকে আঘাত করে।

গণমাধ্যম ও জনমত : কিছু ক্ষেত্রে গণমাধ্যমে প্রচারিত প্রতিবেদন ও সামাজিক আলোচনায় সম্প্রদায়ভিত্তিক মতবাদের প্রভাব স্পষ্ট দেখা যায়। নেতিবাচক প্রেক্ষাপটে মুসলমানদের চিত্রায়ন অনেক সময় বৈষম্য এবং সামাজিক বৈষম্যের পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে, যা সম্প্রদায়ের ওপর মানসিক ও সামাজিক নির্যাতনের আভাস প্রদান করে।

নীতিনির্ধারণ ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ : কিছু আইন এবং প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত, যেমন মুসলমানদের ধর্মীয় সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় হস্তক্ষেপ, অনেক সমালোচকের মতে, মুসলমান সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত স্বায়ত্তশাসনকে ক্ষুণ্ন করছে। এসব পদক্ষেপ কখনো কখনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বা সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রভাবের অধীনে নেয়া হতে পারে, যা মুসলমানদের ওপর প্রয়োগ হয় নির্যাতনের একটি কাঠামোগত রূপ হিসেবে।

আইন প্রয়োগে পক্ষপাত এবং বিচারিক বৈষম্য : বিভিন্ন সময় বিচার ব্যবস্থা ও আইন প্রয়োগে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠেছে, যেখানে মুসলমানদের অভিযোগ, অভিযোগ তদন্ত ও শাস্তির ক্ষেত্রে অন্যান্য জনগোষ্ঠীর তুলনায় আলাদা ব্যবহার দেখা গেছে। এ ধরনের বৈষম্য শুধু ব্যক্তিগত নয়; বরং সম্প্রদায়ের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থাকে দুর্বল করার এক প্রক্রিয়া হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

রাজনৈতিক ও জনপ্রিয়তা প্রসারের পরিপ্রেক্ষিতে নির্যাতনের অভিযোগ : ভারতের রাজনৈতিক পরিসরে কিছু ক্ষেত্রে মুসলমানদের প্রতি নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় বাধা, সামাজিক নীতিনির্ধারণে মুসলমান প্রতিনিধিত্ব না রাখা, আরো নানাভাবে বিদ্যমান নির্যাতনের ধারাকে উৎসাহিত করে।

সামাজিক নির্যাতনের প্রভাব : প্রতিরোধ এবং অভাবনীয় চাপের ফলস্বরূপ, মুসলমান সম্প্রদায়ের সদস্যরা সামাজিকভাবে সম্প্রদায়ভিত্তিক নিপীড়ন এবং কখনো কখনো সহিংস সঙ্ঘাতের শিকার হন। এই প্রক্রিয়ায় মুসলমানদের সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের অভ্যন্তরীণ কাঠামো ক্ষুণ্ন হওয়ার আশঙ্কা তীব্র হয়ে উঠছে।

অর্থনৈতিক সুযোগের অসম বণ্টন : অর্থনৈতিক নীতিমালা এবং উন্নয়নের ক্ষেত্রে মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর বৈষম্যমূলক নীতির অভিযোগ উঠেছে। অবকাঠামোগত, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে বৈষম্য মুসলমানদের আর্থ-সামাজিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে, যার ফলে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে বাধা সৃষ্টি হয়।

সম্পত্তি ও আর্থিক সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ : সংস্কার ও সম্পত্তি দখলের বিষয়ে কিছু আইন প্রণয়ন এবং প্রশাসনিক পদক্ষেপ মুসলমান সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত অধিকারকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে, যা অর্থনৈতিক নির্যাতনের অন্তর্গত হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। উদাহরণস্বরূপ ধর্মীয় সম্পত্তির মালিকানা নির্ধারণে সরকারের বাড়তি হস্তক্ষেপ অনেক সময় এই সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যগত ও স্বায়ত্তশাসিত ব্যবস্থাকে ক্ষুণ্ন করে। মুসলমানদের ওয়াক্ফ সম্পত্তির ব্যবস্থাপনায় বর্তমানে যে হস্তক্ষেপ দেখা যাচ্ছে, তা কিছুটা বিজেপি এবং আরএসএসের মতাদর্শ দ্বারা প্রভাবিত বলে বিবেচিত হতে পারে। এ ধরনের মতবাদ অনুসারে : ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫ : মুসলিমদের ওপর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ নাকি ধর্মীয় স্বাধীনতার হুমকি?

ভারতের ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল, ২০২৫ সম্প্রতি পার্লামেন্টে পাস হয়েছে কিন্তু এটি মুসলিম সমাজে ব্যাপক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। এই নতুন আইনটি শুধু প্রশাসনিক পরিবর্তন আনতে করা হয়েছে এমন ধারণা অনেকের মনে হলেও এর পেছনে কিছু গভীর রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উদ্বেগ রয়েছে।

তাহলে কেন মুসলিম সমাজ এই বিলটিকে ঘিরে এত উদ্বিগ্ন? চলুন, দেখে নেয়া যাক

ধর্মীয় স্বায়ত্তশাসনের ওপর আঘাত : ওয়াক্ফ সম্পত্তি মুসলিমদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান যা সমাজকল্যাণ এবং ধর্মীয় কাজে ব্যবহৃত হয়। এই সম্পত্তির ব্যবস্থাপনা ঐতিহাসিকভাবে মুসলিম সমাজের নিজস্ব বোর্ডের মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে এসেছে। কিন্তু এই নতুন বিলের মাধ্যমে সরকার বোর্ডে অমুসলিম সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে চায় এবং বিতর্কিত সম্পত্তির মালিকানা নির্ধারণের ক্ষমতা সরকারকে দেয়া হচ্ছে। এটি মুসলিমদের কাছে মনে হচ্ছে তাদের ধর্মীয় স্বাধীনতার ওপর হস্তক্ষেপ।

রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সন্দেহ : ওয়াক্ফ সম্পত্তির ক্ষেত্রে সরকারি হস্তক্ষেপ এমন একটি প্রক্রিয়া যা ধর্মীয় স্বায়ত্তশাসনের ধারণাকে পুনর্গঠন করতে পারে, যেখানে ঐতিহ্যগতভাবে মুসলমান সমাজের নিজস্ব বোর্ড ও ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া থেকে বিচ্ছিন্নতা ঘটবে। এই প্রক্রিয়াটি রাজনৈতিকভাবে সেই সংগঠনের মতাদর্শের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ, যা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সমষ্টিগতকরণের উপর জোর দেয়।

এই বিলের মাধ্যমে সরকার মুসলিমদের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠতার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। এতে মুসলিম সম্প্রদায়ের ভেতর আস্থা হারানোর আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।

সম্পত্তি দখলের ভয় : ওয়াক্ফ সম্পত্তি মূলত ধর্মীয় দান হিসেবে ব্যবহৃত হয় কিন্তু এই বিলের মাধ্যমে সরকার বিতর্কিত সম্পত্তির মালিকানা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। মুসলিমরা এতে ভয় পাচ্ছে, যে এটি হয়তো ধর্মীয় সম্পত্তি দখলের একটি উদ্যোগ।

নেতৃত্বের ওপর হস্তক্ষেপ : ওয়াক্ফ বোর্ড মুসলিমদের নিজস্ব প্রতিষ্ঠান, যেখানে তাদের প্রতিনিধিরা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হন। কিন্তু এই সংশোধিত বিলে অমুসলিম সদস্যদের অন্তর্ভুক্তি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা মুসলিমদের কাছে তাদের ধর্মীয় নেতৃত্বের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

ওয়াক্ফ (সংশোধনী) বিল ২০২৫, কেবল একটি আইন নয় এটি মুসলিম সম্প্রদায়ের ধর্মীয় স্বাধীনতা, সম্পত্তির নিরাপত্তা ও নেতৃত্বের উপর রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপের এক নতুন অধ্যায় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

আইন ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ : ওয়াক্ফ সম্পত্তির মালিকানা নির্ধারণে সরকারের বাড়তি ক্ষমতা প্রদান এবং অমুসলিম সদস্যদের বাধ্যতামূলক অন্তর্ভুক্তির ধারা, অনেক সমালোচকের মতে এর মূল উদ্দেশ্য হতে পারে মুসলিম স্বশাসনের ওপর সরকারি নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। এই পরিস্থিতি এমন এক রাজনৈতিক পরিবেশকে সৃষ্টি করার লক্ষ্যে যাকে সমর্থকরা মাঝে মধ্যে ‘ঐক্যবদ্ধ সংস্কার’ বা ‘দর্শন-নির্দিষ্ট পরিবর্তন’ হিসেবে উল্লেøখ করেন, যা রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক রাজনীতির প্রসঙ্গে বিপরীতমুখী মত প্রকাশ করে।

আইডিওলজিক্যাল কাঠামোর প্রভাব : এ ধরনের নীতিগত পরিবর্তনগুলো বিস্তৃত রাজনৈতিক ও সামাজিক কাঠামোর অংশ হিসেবে দেখা যেতে পারে, যেখানে রাজ্যের হস্তক্ষেপকে একটি রাজনৈতিক আর্থিক ও সাংস্কৃতিক পুনর্গঠনের চেষ্টা হিসেবে ব্যাখ্যা করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় বিজেপি ও আরএসএসের মতাদর্শের প্রভাবের অধীনে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের স্বায়ত্তশাসন ও ঐতিহ্যের প্রতিফলন কমে যেতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উপসংহার : ভারতের মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের অভিযোগ বহুস্তরবিশিষ্ট ও জটিল। সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নানা উপাদানের মিলিত প্রভাবে এই সম্প্রদায়ের ওপর যে নির্যাতন ও বৈষম্য দেখতে পাওয়া যায়, তা শুধু ব্যক্তিগত নয়; বরং কাঠামোগতও। এই নির্যাতনের প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে বলতে হয়, যে উন্নয়নশীল অর্থনৈতিক নীতি, পক্ষপাতদুষ্ট আইন প্রয়োগ এবং রাজনৈতিক অবিচার এসব মিলিতভাবে মুসলমান সম্প্রদায়ের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক স্বায়ত্তশাসনকে সীমিত করছে। ভবিষ্যতে যাতে আরো অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়পরায়ণ নীতি বাস্তবায়িত হয়, তাতে দীর্ঘমেয়াদি সামাজিক সমন্বয় এবং সম্প্রদায়ের উন্নয়ন সম্ভব হতে পারে।

প্রফেসর এম এ রশীদ

লেখক : সিনিয়র ফেলো, এসআইপিজি, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি