ভারত, ফিরিয়ে দাও দিতে হবে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর প্রবাহ


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : ডিসেম্বর ১৮, ২০২৪, ৮:৩৪ পূর্বাহ্ণ /
ভারত, ফিরিয়ে দাও দিতে হবে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীগুলোর প্রবাহ

ভারত গঙ্গার উপর ফারক্কা ব্যারেজ দিয়ে এক তরফাভাবে পানি প্রত্যাহারের ফলে বাংলাদেশের অন্যতম নদী পদ্মাকে মেরে ফেলেছে। সাথে সাথে অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে এর শাখা নদী খাল বিল। অনেক নদীর বিলুপ্ত ঘটেছে। পদ্মা মরে যাবার ফলে এ অববাহিকার আটকোটি মানুষ প্রত্যক্ষভাবে এক বিরূপ বৈশ্বক প্রভাবে শিকার হয়েছে।

বিগত সাড়ে চারদশকে ও অঞ্চলের ইকোসিষ্টেমে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। জীব বৈচিত্র, পরিবেশ, প্রকৃতি, নৌ যোগাযোগ মানুষের পেশা পরিবর্তন সর্বোপরি অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে। শীর্ণ খালের রূপ নিয়েছে এক সময়ের প্রমত্ত পদ্মা। পদ্মা মরে যাবার সাথে সাথে শাখা নদ নদী বড়াল, মরা বড়াল, নারদ মুছাখান, ইছামতি, ধলাই, হুড়া সাগর, চিকনাই, গড়াই, মাথাভাঙ্গা, ভৈরব, নবগঙ্গা, চিত্রা, বেতা কালিকুমার, হরিহর, কালিগঙ্গা, কাজল, হিসনা, সাগরখালি, চন্দনা, কপোতাক্ষ, বেলাবতসহ পঁচিশটি নদ-নদীর অস্তিত্ব প্রায় বিলীন। খাল বিলের অস্তিত্ব হারিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রশাখা নদী দয়া, সন্ধ্যা, মুসাখান, হোজা, মির্জা মাহমুদ, হেলেনচার বিলুপ্তি ঘটেগেছে।

বর্ষার সময় ফারাক্কার ওপারের পানির চাপ সামলাতে ১০৯টি গেটের সবকটি খুলে দেয়। তখন পদ্মাসহ এর শাখা প্রশাখা নদ নদীগুলো পানিতে ভরে যায়। জানান দেয় তাদের অস্তিত্বের কথা। মাস দুয়েকের জন্য জেগে ওঠে। ওপারের পানির চাপ কমে গেলে ফের ফারাক্কার সবকটি গেট বন্ধ করে দেয়। প্রতিবছর শুকনো মৌসুমে পানি না দিয়ে শুকিয়ে মারে আর বর্ষার মৌসুমে বিপুল পরিমান পানি ঠেলে দিয়ে ডুবিয়ে মারার মরন খেলা চালিয়ে যাচ্ছে ভারতের পানি জল্লাদরা।

পানি কমে গিয়ে চর জেগে উঠলে সেই চরের যেখানে পলি পড়ে সেখানে নানা রকম ফসল ফলানোর চেষ্টা চলে। বছরজুড়ে পানির প্রবাহ না থাকায় নদ নদীগুলো দখলে দূষনে আরো অস্তিত্ব সঙ্কটে পড়েছে। বিভিন্ন স্থানে বর্জ্য ফেলায় দূষন আরো বেড়েছে। এছাড়া পানি উন্নয়নবোর্ড, এলজিইডিসহ বিভিন্ন দফতর বন্যা নিয়ন্ত্রণ নামে নদীর মুখে বাঁধ স্লুইস গেট, রাবারড্যাম দিয়ে নদীগুলো দফারফা করে ছেড়েছে। তাছাড়া নগরায়ন ও শিল্পায়নের নামে নদ নদী খাল বিল ভরাট করা চলমান রয়েছে। রাজশাহীতে চারঘাটের উৎস্যমুখে বড়াল নদীর মুখে সুøইসগেট।

চির বহমান বারনই নদীর উপর রবারড্যাম, ইছমতির নদীর মুখে স্লুইসগেট, কুষ্টিয়ার হিসনা, কুমার, মাথা ভাঙ্গা, চুয়াডাঙ্গা ও ঝিনাইদহের চিত্রা ও নবগঙ্গা, রাজবাড়ি জেলা হরাই ও চন্দনা এই নদনদীগুলো উৎসমুখে ও প্রবাহের মাঝপথে সুøইসগেট, সিদ্বেশ্বরি, তালমা নদীর উপর রাবারড্যাম, দিনাজপুরের মোহনপুরে আত্রাই নদীর উপর রাবারড্যাম, গোবিন্দগঞ্জে করতোয়ার ওপর স্লুইসগেট, ক্রসড্যাম ও রাবার ড্যাম নির্মাণ করে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। রাজশাহীতে বারাহি, নারদ, চিনারক‚প এই নদ নদীর গুলোর উৎস্যমুখ চিরতরে বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ফারাক্কার পাশপাশি অপরিকল্পিভাবে বিগত চল্লিশ বছরে মানবসৃষ্ট অবিবেচক কর্মকাণ্ডে আজ মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে।

নদ নদীগুলোর রয়েছে পরিত্যাক্ত খাত। বৃহত্তর রাজশাহীর প্রধান নদী পদ্মা। এছাড়াও রয়েছে আত্রাই, মহানন্দা, পুনভবা, বড়াল, নারদ, বারনই, নাগর, শীব, নন্দকুজা এসব নদী রয়েছে বহু পরিত্যক্ত খাদ। যেগুলি পরবর্তীতে বিলে পরিণত হয়ে নাম ধারণ করেছে বিল চলন, বিলগৌরি, ছাতরার বিল, মানদার বিল, উথরাইল বিল, হিলনা, বিল কুমারী, ফলিয়ার বিল, কুখন্ডির বিল, কান্তার বিল, পাতিখোলা, অঙ্গরা, চ্যাঙ্গা, স্বতি, বিল পারুল, বিল দিকসি, মিরাট, পিপরুল, বাঘনদী, সিদেস্বরি, তাজপুর, হালতির বিল, রক্তদহ, হাইলা, মাছগাও, চৌমহান, ছাতরাই, দাড়িপুষি, খড়দহ, বিল জবায়ের, হরিপুর বিল, ঘুকসির বিল, বিল ভাতিয়া, বিল কালাই, জসই বিল, মগড়ার বিল ও বাঁ বাড়িয়ার বিল। এসব বিলগুলো পড়েছে অস্তিত্বের সঙ্কটে।

চলন বিলসহ কয়েকটি বিলের বছরের বেশীর ভাগ সময় ধরেই পানিতে ভরা থাকতো। চলন বিলের উত্তাল ঢেউ আজ অতিত। এসব বিলের বিভিন্ন প্রজাতির দেশী ও মাছ মানুষের প্রয়োজন ও রসনা মেটাতো। বিলের মাছের স্বাদই ছিল অন্যরকম। এখন বছরের দুই তিন মাসের বেশি পানি থাকে না। হয় রকমারী ফসল।