ভারত ও বাংলাদেশ তাদের টানাপোড়েনপূর্ণ সম্পর্ক স্থিতিশীল করার জন্য উপায় খুঁজছে বলে মনে হচ্ছে, যদিও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে স্বেচ্ছা নির্বাসন এবং তাকে প্রত্যর্পণের জন্য ঢাকার অব্যাহত দাবির কারণে উত্তেজনা এখনও রয়ে গেছে।
গতমাসে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সাথে আলোচনার জন্য নয়াদিল্লি সফর করার পর কূটনৈতিক পুনর্গঠনের সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে, যা বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর সর্বোচ্চ পর্যায়ের দ্বিপাক্ষিক আলোচনা। মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ঢাকার একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল হাসিনাকে মৃত্যুদণ্ড- দেওয়ার পরপরই রহমানের এই সফর অনুষ্ঠিত হয়, যা হাসিনাকে প্রত্যর্পণের দাবিকে আরও তীব্র করেছে।
বিএনপি চেয়ারপার্সন এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার অবনতিশীল স্বাস্থ্যের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ১ ডিসেম্বরের বার্তার পর বাংলাদেশের সাথে ভারতের যোগাযোগ আরও মনোযোগ আকর্ষণ করেছে। খালেদা জিয়ার অবস্থা মূল্যায়নের জন্য চীন চার সদস্যের একটি মেডিক্যাল প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে পাঠানোর কয়েকদিন পর এই বার্তাটি জারি করা হয়, যার ফলে জল্পনা শুরু হয় যে ভারত বেইজিংয়ের কূটনৈতিক ইঙ্গিতের প্রতি সাড়া দিচ্ছে।ঢাকার কেউ কেউ এই বৈঠককে সম্পর্ক পুনর্গঠনের একটি অস্থায়ী প্রচেষ্টা হিসেবে দেখলেও, বিশ্লেষকরা সতর্ক করে দিয়েছেন যে উভয় পক্ষের রাজনৈতিক সংবেদনশীলতার গভীরতার কারণে আস্থার অর্থবহ পুনরুদ্ধার এখনও সুদূর পরাহত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক লাইলুফার ইয়াসমিন মোদীর এই পদক্ষেপকে 'বাস্তব রাজনীতি' হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন যে নয়াদিল্লির পদক্ষেপগুলি আবেগের চেয়ে বরং আঞ্চলিক স্বার্থের পরিবর্তনকে প্রতিফলিত করে।
একই সাথে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিবর্তনও ভারতের পুনর্বিবেচনার একটি বড় কারণ। বিএনপি এবং জামায়াতে ইসলামীর মধ্যে ক্রমবর্ধমান বিভাজন, নয়াদিল্লি কৌশলগতভাবে অনুকূল বলে মনে করছে, যেখানে ভারত প্রায়শই জামায়াত ইসলামীকে একটি কট্টর ইসলামপন্থী দল হিসেবে বিবেচনা করে। বিশ্লেষকরা বলছেন যে, ভারত কয়েক বছর ধরেই বিএনপি নেতাদের সঙ্গে নীরবে যোগাযোগ বাড়াচ্ছে এবং বেগম জিয়াকে মোদির বার্তাও সেই বৃহত্তর কৌশলের অংশ।এদিকে, ভারত থেকে হাসিনা যখন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার এবং অতীত বিএনপি সরকারের কঠোর সমালোচনা অব্যাহত রেখেছেন, হাসিনার প্রত্যর্পণের উপর ঢাকার জোর সত্ত্বেও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর বলেছেন যে, হাসিনা ভারতে থাকবেন কি দেশে ফিরবেন, সেটি একান্তভাবে তাঁর নিজের সিদ্ধান্ত।
যুক্তরাষ্ট্র স্টাডিজ সেন্টারের মৈত্রী ফেলো রুশালি সাহা মনে করেন, হাসিনাকে অব্যাহতভাবে আশ্রয় দেয়া ভারতের বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নের প্রচেষ্টাকে জটিল করে তুলতে পারে এবং বাংলাদেশের নির্বাচনের আগে দেশটিতে ভারতবিরোধী মনোভাব উস্কে দিতে পারে। তাঁর মতে, রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল এই সময়টিতে ভারতকে সব প্রধান অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ বজায় রাখতে হবে।