টানা বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি আবারও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এতে সুনামগঞ্জের বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ও দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি (বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত) ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার মাত্র ৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুনামগঞ্জে ১৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি রেকর্ড করা হয়েছে। বন্যার পানি ধীর গতিতে কমায় এখনো অনেকের ঘরবাড়ি থেকে পানি নামেনি। ফলে বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মানুষ বাড়ি ফিরতে পারেনি।
গতকাল থেকে আবারও পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিচু এলাকা নতুন করে প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে বন্যা পরিস্হিতির অবনতি হওয়ার আশঙ্কা করছেন নদীর তীর ও নিচু এলাকার লোকজন।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী জহুরুল ইসলাম জানিয়েছেন, সুনামগঞ্জ ও মেঘালয় পাহাড়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় সুনামগঞ্জের সুরমাসহ অন্যান্য নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে এখনো সুরমা নদীর পানি বিপত্সীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
নেত্রকোনায় ধনু-সোমেশ্বরী কংসে ফের পানি বাড়ছে:
নেত্রকোনা প্রতিনিধি জানান, নেত্রকোনায় গত সপ্তাহ থেকে বন্যার পানি কমলেও গত বুধবার থেকে আবার বর্ষণ শুরু হওয়ায় সব নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং বন্যাকবলিত লোকজন নতুন করে দুর্দশার মধ্যে পড়েছেন। বন্যার্তরা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এদিকে খালিয়াজুরীতে ধনু নদীর পানি বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত বিপত্সীমার পাঁচ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। সোমেশ্বরী, কংস ও উবধাখালী নদের পানিও বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, বন্যা আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে আসা লোকজন ধীরে ধীরে নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরতে শুরু করেছে। কিন্তু বন্যায় বাড়িঘরের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় অনেকেই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও বাড়িঘরে ফিরতে পারছেন না। আবার এই মুহূর্তে বাড়িঘর নির্মাণের জন্য সরকারি বরাদ্দ নেই বলেও জানা গেছে। এখন চলছে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্ত্ততের কাজ।
নেত্রকোনার বন্যাদুর্গত এলাকায় এখন গোখাদ্যের ব্যাপক অভাব দেখা দিয়েছে। বন্যায় খড়ের যে সঞ্চয় ছিল তা ভেসে গেছে, আবার ভিজেও নষ্ট হয়েছে। এছাড়া সাতটি উপজেলায় সবজিখেতের কোনো চিহ্ন নেই। সব বন্যার পানিতে পচে গেছে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ বন্যাদুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের জানান, জেলায় ৫ লাখ ৫৪ হাজার লোক বন্যাকবলিত হয়েছেন।
সরকারের পক্ষ হতে এই সমস্ত দুর্গতদের জন্য এ পর্যন্ত ৫৩ লাখ টাকা, ৬০০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ করা হয়েছে। তবে এর মধ্যে গত বুধবার পর্যন্ত ৫৮৯ মেট্রিক টন চাল, ৩২ লাখ টাকা এবং সাড়ে ৬ হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। পর্যাপ্ত ত্রাণসামগ্রী রয়েছে এবং বিতরণ কাজও সুষ্ঠুভাবে চলছে বলে জানান।