মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে আটকের ভিডিওটি ড. ইউনূসের মেয়ের নয় - ছবি : সংগৃহীত
মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে আটক হওয়ার ভিডিওটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মেয়ে মনিকার নয় বলে জানিয়েছে ফ্যাক্ট চেক বা তথ্য যাচাই সংস্থা রিউমর স্ক্যানার।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক, এক্সসহ ইউটিউব ও টিকটকে একটি ভিডিও ব্যাপকভাবে প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, ভিডিওটিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মেয়ে মনিকা ইউনূসকে দেখা যাচ্ছে, যিনি মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে আটক হয়েছিলেন। এতে আরো বলা হয়, তিনি লেসবিয়ান বা সমকামী।
রিউমর স্ক্যানার জানায়, ভিডিওয়ের সংযুক্তি ছাড়া কেবলমাত্র টেক্সট আকারেও উক্ত দাবিটি ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। উক্ত একই দাবিটি ভারতীয় ইউটিউব চ্যানেল বঙ্গটিভিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের আইনজীবী নাজিয়া এলাহি খানকেও করতে দেখা গেছে।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে আটক নারী অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মেয়ে মনিকা ইউনূস নন। প্রকৃতপক্ষে, মনিকা নামের ভিন্ন এক নারীকে ড. ইউনূসের মেয়ে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম রিভার্স ইমেজ সার্চ করে 'Transparency Bodycam' নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলে চলতি বছরের গত ২৮ আগস্টে 'Drunk Woman Crashes her Car After a Breakup in Verona, New Jersey' শিরোনামে প্রকাশিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়৷ উক্ত ভিডিওটির শুরু থেকে প্রথম দিককার কিছু অংশের সাথে প্রচারিত ভিডিওটির হুবহু সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
রিউমর স্ক্যানারের অনুসন্ধানে বলা হয়, ইউটিউব চ্যানেলটির বিষয়ে জানা যায়, এটি পুলিশের শরীরে পরিধানকৃত ক্যামেরায় ধারণ করা নানা ভিডিও প্রকাশ করে থাকে। ওই ভিডিওটি পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, আটক হওয়া নারী তার নাম মনিকা ইউনূস বলে জানান৷ পাশাপাশি তিনি জানান, তার জন্ম নিউইয়র্কে, তিনি একজন পুয়ের্তো রিকান। তিনি তার প্রেমিকার সাথে ব্রেকআপ করে মদ্যপান করে আসছিলেন বলেও জানান তিনি। ভিডিওটির বর্ণনা অংশ থেকে জানা যায়, ঘটনাটি ২০২২ সালের ১৬ এপ্রিল রাত ২টা ৩১ মিনিটের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সির ভেরোনাতে ধারণ করা। পরে ২০২২ সালের মে মাসে কোর্ট তাকে দোষী হিসেবে সাব্যস্ত করে জরিমানাসহ আরো কিছু পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ করেছিল।
অপরদিকে ড. ইউনূসের কন্যা মনিকা ইউনূসের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, তার জন্ম যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে নয়, বরং বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। তাছাড়া, আমেরিকান সংবাদমাধ্যম সিএনএন’কে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, তিনি আমেরিকার নাগরিক। তবে তার জন্ম বাংলাদেশে। তিনি নিজেকে পুয়ের্তো রিকান বলে দাবি করার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, পুয়ের্তো রিকো কোনো সার্বভৌম দেশ বা ভূখণ্ড নয়, এটি একটি ইউএস টেরিটোরি, এবং পুয়ের্তো রিকোতে জন্মগ্রহণ করা নাগরিক আমেরিকান নাগরিক বলে গণ্য হন। তবে সাংস্কৃতিক কারণসহ নানা কারণে অনেকেই নিজেকে পুয়ের্তো রিকোন বলেও দাবি করেন। তবে, যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখণ্ডের মতো একজন নাগরিকের হুবহু সমান অধিকার তারা পায় না, যেমন পুয়ের্তো রিকো থেকে তারা আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ভোট দিতে পারে না।
রিউমর স্ক্যানার জানায়, মনিকা ইউনূস লেসবিয়ান বা সমকামীর সমর্থক কিনা তা স্বাধীনভাবে যাচাই করা সম্ভব হয়নি। তবে, নিউইয়র্ক টাইমসসহ একাধিক গণমাধ্যম ও ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, তিনি ২০০৯ সাল থেকেই ব্র্যান্ডন ম্যাকরেনল্ডস নামে একজন ওপেরা গায়ককে বিয়ে করে সংসার করছেন। উল্লেখ্য, মনিকা ইউনূস নিজেও একজন ওপেরা গায়িকা।
তাছাড়া, মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালিয়ে মনিকা ইউনূস আটক হওয়ার বিষয়ে গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রেও কোনো তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি।
পাশাপাশি, মনিকা ইউনূসের সাথে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত নারীর মুখমণ্ডলের তুলনা করলেও বৈসাদৃশ্য পাওয়া যায়। যা অধিকতর নিশ্চিত করে প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত নারী ড. মুহাম্মদ ইউনূস কন্যা মনিকা ইউনূস নন।
রিউমর স্ক্যানার সিদ্ধান্ত দেয় : সুতরাং, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস কন্যা মনিকা ইউনূস মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে আটক হয়েছেন শীর্ষক দাবিটি মিথ্যা।
তথ্যসূত্র
Transparency Bodycam – Drunk Woman Crashes her Car After a Breakup in Verona, New Jersey
Monica Yunus – About
CNN – Daughter tries to stop Bangladesh from locking up her Nobel laureate father
New York Times – Monica Yunus, Brandon McReynolds
Rumor Scanner’s own analysis.