মমতা-ব্যানার্জি
এই ঘটনায় ফের একবার স্পষ্ট, দেশের ভেতরেই ‘ভাষাগত পরিচয়’ এখন অনেক সময়েই বিভেদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর সেই বিভেদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই যে মমতা ব্যানার্জির এই কড়া অবস্থান, তা মানছেন রাজনীতির একাংশ।
বাংলা ভাষায় কথা বলাই ‘অপরাধ’? হরিয়ানায় গুরুগ্রামে সেই ভাষাই যেন কাল হয়েছিল বাংলার শ্রমিকদের জন্য। ‘বাংলাদেশী’ সন্দেহে ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রাখা হয়েছিল অন্তত ৩০ জন পরিযায়ী শ্রমিককে। চাওয়া হয়েছিল নাগরিকত্বের নথিপত্র। বিষয়টি সামনে আসতেই তীব্র ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তার স্পষ্ট হুঁশিয়ারি, ‘বাংলা ভাষাভাষীদের উপর অত্যাচার বরদাস্ত করব না।’
মুখ্যমন্ত্রীর জোরালো প্রতিবাদ, সোশাল মিডিয়ায় একের পর এক পোস্ট এবং প্রশাসনিক চাপের পর অবশেষে ‘পিছু হটতে’ বাধ্য হলো হরিয়ানা সরকার। ডিটেনশন ক্যাম্পে আটক থাকা শ্রমিকদের একে একে মুক্তি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। সূত্রের খবর, ইতোমধ্যেই ১৫ জন শ্রমিক ফিরে এসেছেন মালদহের চাঁচল ও হরিশ্চন্দ্রপুরে। বাকি ১৫ জনকেও শিগগিরি মুক্তি দিয়ে বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করা হচ্ছে।
বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে সম্প্রতি বাঙালিদের উপর ‘ভাষাভিত্তিক বৈষম্য’ এবং নিগ্রহের অভিযোগ উঠেছে একাধিকবার। হরিয়ানা তার সাম্প্রতিক নজির। গুরুগ্রামের একাধিক নির্মাণস্থলে কাজ করতেন মালদহের বহু শ্রমিক। স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনের দাবি ছিল, তারা নাকি ‘বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী’। প্রমাণ স্বরূপ চাওয়া হয়েছিল নাগরিকত্বের নথি। বিষয়টি জানাজানি হতেই উত্তাল হয় রাজ্য রাজনীতি। সোশাল মিডিয়ায় সুর চড়িয়ে মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, ‘বাংলাভাষীদের উপর কোনো রকম বৈষম্য চলবে না। এটা ভাষার উপর সন্ত্রাস।’
মমতার তোপের জবাবে হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী নায়েব সিং সাইনি পালটা সুরে বলেন, ‘দেশে অনুপ্রবেশকারীদের কোনো জায়গা নেই। যা কিছু হয়েছে, দেশের নিরাপত্তার স্বার্থে।’ তবে সাইনির এই বক্তব্যের পরেও হরিয়ানা প্রশাসনের পদক্ষেপ অন্য ইঙ্গিত দিচ্ছে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। প্রশ্ন উঠছে, যদি তারা সত্যিই অনুপ্রবেশকারী হতেন, তবে এত সহজে কেন মুক্তি?
এই ঘটনা সামনে আসতেই রাজ্য-রাজনীতিতে নতুন করে তোলপাড় শুরু হয়েছে। তৃণমূলের দাবি, বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলোতে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই বাংলা ভাষাভাষীদের টার্গেট করা হচ্ছে। ‘বাংলায় বললেই বাংলাদেশী? এ কোন যুক্তি?’ প্রশ্ন তুলছেন মালদহের তৃণমূল সাংসদ খুরশিদ আলম।
অন্যদিকে, বিজেপির দাবি, মুখ্যমন্ত্রী এই ইস্যুকে অকারণে রাজনৈতিক রঙ দিচ্ছেন। বিজেপির এক নেতা বলেন, ‘পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে মাত্র। এতে এত প্রতিক্রিয়া কেন?’
তবে ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে মুক্তি পেলেও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ওই শ্রমিকেরা। তাদের পরিবারের সদস্যদের কথায়, ‘দোষ কী ছিল আমাদের? শুধু বাংলা বলেছিলাম!’
অনেকের মতে, এই ঘটনায় ফের একবার স্পষ্ট, দেশের ভেতরেই ‘ভাষাগত পরিচয়’ এখন অনেক সময়েই বিভেদের কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আর সেই বিভেদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতেই যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই কড়া অবস্থান, তা মানছেন রাজনীতির একাংশ।
সূত্র : দ্য ওয়াল