মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নিজেই যখন মাদকসেবী তখন-


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মার্চ ১৩, ২০২৫, ৮:৩৯ পূর্বাহ্ণ /
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তা নিজেই যখন মাদকসেবী তখন-

অসদাচারনের অভিযোগে বিভাগীয় মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত পিরোজপুর জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক বাবুল সরকার সুন্দরী নারীর সঙ্গে ইয়াবা সেবন করে ফের আলোচনা-সমালোচারজন্ম দিয়েছেন। অশালীন পোশাকে থাকা প্রায় অর্ধনগ্ন এক নারীর সঙ্গে খালি গায়ে মাদকের এ কর্মকর্তার ইয়াবা সেবনের একটি ছবি গত মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।

মাদক নিয়ন্ত্রণ করাই যার পেশা সেই ধরনের কর্মকর্তাকেই নিষিদ্ধ মাদকসহ নারী সঙ্গের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছেন সংস্থাটির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারা লজ্জিত এবং বিব্রত। মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, বাবুলের ইয়াবা সেবনের ছবির বিষয়টি তাদেরও নজরে এসেছে। অভিযোগ ওঠায় আপাতত তাকে পিরোজপুর থেকে খাগড়াছড়ি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে বদলী করা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, অভিযুক্ত সহকারী পরিচালক বাবুল সরকার ছাত্রজীবনে নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগের ক্যাডার ছিলেন। সরকারি চাকরিতে থেকেও বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাথে যুক্ত ছিলেন। তিনি পিরোজপুর মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর শাখার বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। যেকারণে গত আওয়ামী ফ্যাসিবাদ সরকার আমলে এই পরিচয়ে বিভিন্ন দপ্তরে প্রভাব রেখে চলতেন।

শুধু তা-ই নয় নিজেকে আওয়ামী ঘরানার দাবি করে এবং দলটির প্রধানের মনোযোগ আকৃষ্ট করতে তিনি শেখ হাসিনাকে নিয়ে একটি বই লেখেন। যে বইয়ের নাম ‘‘ শেখ হাসিনা বাঙ্গালীর বিশ্ববীক্ষন”। তিনি এ বইটি বিভিন্ন মন্ত্রী, আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা এবং মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের শুভেচ্ছা স্বরুপ পাঠাতেন। যাতে করে মানুষ ধরে নিতো তার সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবার পর্যন্ত গভীর সম্পর্ক রয়েছে।

বিনিময়ে তিনি বিভিন্ন দপ্তর থেকে বিভিন্ন ধরনের সুবিধা নিয়ে অনৈতিকভাবে বিপুল অর্থ সম্পদের মালিক বনে যান। আওয়ামীলীগ আমলে তিনি কাউকে তোয়াক্কাই করতেন না। নিজের মতো করেই চলা ছিলো তার স্টাইল। উল্টো উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশ অমান্য করে তাদেরকে আতঙ্কগ্রস্ত করে রাখতেন। এরপরেও তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ ওঠে। বিশেষ করে বাবুল সরকার মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের চাপাইনবাবগঞ্জে কর্মরত থাকাবস্থায় তার বিরুদ্ধে অসদাচারনের গুরুতর অভিযোগ ওঠে। পরে তাকে বদলী করা হয় পার্বত্য জেলা বান্দরবনে।

অভিযোগের বিষয়ে এর আগেই তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়। কিন্তু তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বার বার ডাকা হলেও তিনি উপস্থিত হতেন না। মামলা সংক্রান্ত তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় মাদকের এ কর্মকর্তাকে ফোনেও পাওয়া যেতনা। এর মানে তিনি কাউকেই তোয়ক্কা করতেন না। অসদাচারনের অভিযোগে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একাধিক তদন্ত কর্মকর্তা দীর্ঘদিন শেষে তার বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিভাগীয় মামলার তদন্ত প্রতিবেদন পেশ করে। সেখানে তাকে লঘুদ- অথ্যাৎ বেতন গ্রেডের নি¤œতর ধাপে অধনমিত করা হয়।

মাত্র ২২ হাজার টাকা বেতনের এ কর্মকর্তা আয়েশী জীবন যাপন করেন। প্রচলিত রয়েছে, তিনি বান্ধবীদের পেছনে মাসে ৫ লাখ টাকার বেশি খরচ করেন। এছাড়া নিজের মনোরঞ্জনের জন্য যা খুশি তা-ই করেন। গত মঙ্গলবার সুন্দরীসহ তার মাদকসেবনের ছবি এ প্রতিবেদকের হাতে আসার পর তাকে একাধিকবার ফোন করা হয়। কিন্তু প্রতিবারই তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। এমনকি তার কর্মস্থলে খোঁজ নিয়েও তার কোন হদিস মেলেনি। তিনি কোথায় আছেন এ বিষয়ে অফিসের কেউই খোঁজ খবর দিতে পারেননি। পিরোজপুর মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একজন পরিদর্শক বলেন, ‘আপনারা যেমনটি দেখেছেন, আমরাও তেমনই দেখেছি। উনি আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাই না।

এদিকে বাবুল সরকারের মাদক সেবনের ছবির সত্যতা যাছাইয়ে জানতে চাইলে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) আবদুল ওয়াদুদ ইনকিলাবকে বলেন, বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। এরপরই বাবুল সরকারকে শাস্তিস্বরুপ পিরোজপুর থেকে খাগড়াছড়ি বদলী করা হয়েছে। একইসাথে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামি দু’এক দিনের মধ্যেই কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিবেন। প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা মিললে বাবুল সরকারের বিরুদ্ধে ফের বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে।