মার্কিন-তুর্কি নাগরিক হত্যার পূর্ণ তদন্তের দাবি জানালো জাতিসঙ্ঘ


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ৭, ২০২৪, ৫:০২ অপরাহ্ণ /
মার্কিন-তুর্কি নাগরিক হত্যার পূর্ণ তদন্তের দাবি জানালো জাতিসঙ্ঘ

জাতিসঙ্ঘের লোগো – ছবি : সংগৃহীত

মার্কিন-তুর্কি নাগরিক হত্যার পূর্ণ তদন্তের দাবি জানিয়েছে জাতিসঙ্ঘ। জাতিসঙ্ঘের মুখপাত্র স্টিফেন ডুজারিক এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানান। তিনি বলেন, আমরা এই ঘটনার পূর্ণ তদন্ত দেখতে চাই। কারণ, এই বিষয়ে আমাদের জনগণকে জবাবদিহি করতে হবে। তিনি আরো বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের অবশ্যই সর্বদা রক্ষা করতে হবে।

এদিকে, অধিকৃত পশ্চিমতীরে শুক্রবার ইসরাইলি বসতি স্থাপনকারীদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিপন্থীদের প্রতিবাদের সময়ে ইসরাইলি সৈন্যরা এক মার্কিন-তুর্কি নারীকে গুলি করে হত্যা করেছে। ২৬ বছর বয়সী ওই নারীর নাম আয়েসেনুর এজগি এইগি। পশ্চিম তীরের নাবলুস শহরের রাফিদিয়া হাসপাতালের পরিচালক বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, মাথায় আঘাত পাওয়া অবস্থায় ওই নারীকে সংকটজনক অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছিল।

ফুয়াদ নাফা বলেন, ‘আমরা তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করছিলাম কিন্তু তিনি গুরুতর আঘাত পাওয়ায় আমরা তার হৃদপিন্ডকে সক্রিয় করতে পারি নাই এবং তার পর আমরা তার মৃত্যুর কথা ঘোষণা করি।’ এই নারীকে ২৬ বছর বয়সী আয়েসেনুর এজগি এইগি বলে সনাক্ত করা হয়েছে এবং তাকে একজন তুর্কি–আমেরিকান অ্যাক্টিভিস্ট বলে বর্ণনা করা হয়েছে।

ফায়েজ আব্দেল জাবার নামের একজন প্যারামেডিক নাবলুসের কাছে বেইতা শহরে প্রতিবাদ জানানোর সময়ে ঠিক কী হয়েছিল তা বার্তা সংস্থা রয়টার্সের কাছে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই আমরা জাবাল সুবায়হ মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করি, তখন বিদেশী অ্যাক্টিভিস্টরাও আমাদের সাথে যুক্ত হন। তার পর ইসরাইলি সেনাবাহিনী চলে আসে এবং দু’টি গুলি চালায়। একটি গুলি একজন তরুণকে লক্ষ্য করে চালানো হয়। তবে দ্বিতীয় গুলিটা একজন বিদেশী অ্যাক্টিভিস্টের মাথা লক্ষ্য করে চালানো হয়।’

ডমিনিকান রিপাবলিকের প্রেসিডেন্ট লুই আবিনাডেরের সাথে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষে এইগির পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। ব্লিংকেন বলেন, এই বিয়োগান্তক ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিন্দা জানাচ্ছে এবং গুলি চালনার ঘটনার তথ্য সংগ্রহের উপর গুরুত্ব আরোপ করছে।

ব্লিংকেন বলেন, ‘প্রথম কাজটা প্রথমেই করতে হবে, আমাদের জানতে হবে ঠিক কী হয়েছিল আর সেটা জানার পর আমরা প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত ও উপসংহারে পৌঁছাবো। যেমনটি আমাকে আগেও বহুবার বলতে শুনেছেন যে আমেরিকান নাগরিকদের নিরাপত্তা ও সুরক্ষার চেয়ে আমার কাছে আর কোনো অগ্রাধিকারের বিষয় নেই, তা তারা বিশ্বের যেখানেই থাকুন না কেন। আমরা যখন আরো তথ্য পাবো, আমরা সেটা আপনাদের জানাবো এবং প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে আমরা ব্যবস্থা নেবো।

যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের মুখপাত্র শন স্যাভেটও একটি বিবৃতি দেন। ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আমরা আজ পশ্চিম তীরে আয়সেনুর এসগি এইগির নামের এই আমেরিকান নাগরিকের মৃত্যুতে গভীরভাবে বিচলিত বোধ করছি, আমরা তার পরিবার ও ভালোবাসার লোকদের কাছে আমাদের মর্ম বেদনা প্রকাশ করছি। আমরা আরো তথ্য লাভের জন্য ইসরাইল সরকারের সাথে যোগাযোগ করেছি এবং এই ঘটনার তদন্তের অনুরোধ করেছি।

ইসরাইলের প্রতিরক্ষা বাহিনী এই ঘটনা সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যম এক্স ও টেলিগ্রামে দেয়া এক বিবৃতিতে লিখেছে, ‘বেইতা এলাকার পাশে আজ ইসরাইলি নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কর্মতৎপরতা চালানোর সময়ে, সহিংস ঘটনার প্রধান উস্কানিদাতাকে লক্ষ্য করে গুলি চলায়। ওই লোক সৈন্যদের উপর পাথর নিক্ষেপ করে এবং তাদের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়ায়।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘আইডিএফ ( ইসরাইলি প্রতিরক্ষা বাহিনী) এই খবর যাচাই করে দেখছে যে ওই অঞ্চলে গুলি করায় একজন বিদেশী নাগরিক মারা গেছেন। এই ঘটনার বিস্তারিত এবং যে পরিস্থিতে তার উপর আঘাত লাগে তা পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে।’

দ্য এসোসিয়েটেড প্রেসের সাথে এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে জেনিনের গভর্ণর কামাল আবু আল রাব নিশ্চিত করেন যে ইসরাইলি বাহিনী সেখান থেকে নিজেদের প্রত্যাহার করে নিয়েছে। তিনি বলেন, এটি ছিল আইডিএফের সবচেয়ে ধ্বংসাত্মক অভিযান। ভিডিওতে বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি ও আবর্জান ভর্তি রাস্তা দেখা যায়।’

নিজেদের প্রত্যাহারের কথা নিশ্চিত করে না জানিয়ে আইডিএফ শুক্রবার ‘জেনিনে তাদের সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের’ সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা দিয়ে একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। সেখানে বলা হয়েছে, ‘১৪ জন সন্ত্রাসীকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে, ৩০ জনেরও বেশি সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে এবং রাস্তায় পাতা আনুমানিক ৩০ টি বিস্ফোরককে নিষ্ক্রিয় করা হয়েছে।’

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, ‘জেনিনে হামাস সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রধান ওয়সিম হাজেমকেো নিশ্চিহ্ন করে দেয়া হয়েছে । জেনিন এলাকায় হাজেম গুলি চালনা ও বিস্ফোরণ ঘটনানোর নির্দেশ দিত এবং জুডেয়া ও সামারিয়ায় সন্ত্রাসী আক্রমণ চালানোর জন্য সেই দায়ী ছিল।’

সূত্র : আল জাজিরা, ভিওএ ও অন্যান্য