ইরানে ইসরায়েলি হামলার নীল-নকশা ফাঁস হয়েছে মার্কিন নথিতে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : অক্টোবর ২০, ২০২৪, ৮:২৭ অপরাহ্ণ /
ইরানে ইসরায়েলি হামলার নীল-নকশা ফাঁস হয়েছে মার্কিন নথিতে

ইরানে ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার পরিকল্পনা সংক্রান্ত যুক্তরাষ্ট্রের অতি গোপন কিছু গোয়েন্দা নথি ফাঁস হয়েছে। এই ফাঁসের ঘটনার তদন্তে নেমেছে যুক্তরাষ্ট্র। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট তিন ব্যক্তির বরাতে এই তথ্য জানা গেছে। তাঁদের মধ্যে একজন নথির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। শনিবার (১৯ অক্টোবর) এ নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে মার্কিন সংবাদমাধ্যম এক্সিওস। পরে সিএনএন ও নিউইয়র্ক টাইমসসহ অন্যান্য সংবাদমাধ্যমও প্রতিবেদন প্রকাশ করে।

গত ১৫ ও ১৬ অক্টোবর তারিখ দেওয়া নথিগুলো ‘মিডল ইস্ট স্পেকটেট’ নামের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টেলিগ্রামে ফাঁস হয়। তবে গত শুক্রবার থেকে এগুলো অনলাইনে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। নথি ফাঁসের এ ঘটনা ‘খুবই উদ্বেগজনক’ বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন এক মার্কিন কর্মকর্তা।

নথিগুলোতে ‘অতি গোপনীয়’ চিহ্ন দেওয়া আছে। চিহ্নগুলো দেখে মনে হচ্ছে, এগুলো শুধুই যুক্তরাষ্ট্র এবং এর ঘনিষ্ঠ ‘ফাইভ আইস’ ভুক্ত দেশ অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য দেখতে পারবে।

নথিগুলোতে ইরানের ওপর ইসরায়েলের সম্ভাব্য হামলার প্রস্তুতির বর্ণনা রয়েছে। নথির অনুযায়ী, হামলা পরিকল্পনার অংশ হিসেবে অস্ত্রশস্ত্র মোতায়েন করছে ইসরায়েল। নথিগুলোর একটি তৈরি করেছে মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের একটি সংস্থা ‘ন্যাশনাল জিওসপ্যাশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি’। তাতে উল্লেখ রয়েছে, ইসরায়েল অস্ত্র মজুদ স্থানান্তর করছে।

অন্য একটি নথি, যা জাতীয় নিরাপত্তা সংস্থা (ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি) থেকে এসেছে, এ নথিতে ইসরায়েলি বিমানবাহিনীর আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া চালানোর কথা বলা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ মহড়া ইরানে দেশটির হামলা চালানোর প্রস্তুতিরই অংশ।

একজন মার্কিন কর্মকর্তা বলেছেন, তদন্ত করে দেখা হচ্ছে কারা পেন্টাগনের নথিতে প্রবেশাধিকার পেয়েছিল। এ ধরনের কোনো তথ্য ফাঁসের ঘটনা ঘটলে এফবিআই, পেন্টাগন এবং মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর দ্বারা স্বয়ংক্রিয়ভাবে তদন্ত শুরু হয়। তবে এফবিআই এ বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

এই ফাঁসের ঘটনা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের সম্পর্কের একটি খুবই সংবেদনশীল সময়ে ঘটেছে, যা ইসরায়েলিদের ক্ষুব্ধ করতে পারে। গাজায় চলমান ইসরায়েলি আগ্রাসন ও তেহরানে হামাস প্রধান ইসমাইল হানিয়া নিহতের জেরে গত ১ অক্টোবর ইসরায়েলে প্রায় ২০০ ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ইরান।

এর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইসরায়েল। নথিতেও ইরানে হামলার প্রস্তুতির অংশ হিসেবে ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্রের মহড়া চালানোর কথা বলা হয়েছে। তবে সিএনএন এসব নথি থেকে সরাসরি তথ্য উদ্ধৃত করেনি।

নথি ফাঁসের এ ঘটনা এমন একসময় ঘটল, যখন যুক্তরাষ্ট্র-ইসরায়েল সম্পর্কে টানাপোড়েন চলছে। ঘটনাটি এখন ইসরায়েলিদের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করবে।

নথি ফাঁস প্রসঙ্গে এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, প্রতিরক্ষা সদর দপ্তর পেন্টাগনের কথিত এসব নথি কে বা কারা ফাঁস করল, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তবে এ ধরনের ঘটনায় স্বাভাবিকভাবেই মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরোর (এফবিআই) পাশাপাশি পেন্টাগন ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তদন্তের কাজ করে। এফবিআই অবশ্য এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

নথিগুলো কীভাবে প্রকাশ্যে এল? এগুলো কি হ্যাকড হয়েছে? নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে ফাঁস করা হয়েছে। এসব প্রশ্নের উত্তর এখনো স্পষ্ট নয়। ইরানের হ্যাকিং তৎপরতার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে উচ্চ সতর্কতায় রয়েছে।

মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বলেছে, এর আগে নভেম্বরে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনে রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রচার সংক্রান্ত নথিপত্র গত আগস্টে হ্যাক করেছে ইরান।

তবে নথি ফাঁসের ঘটনা সত্য হলে, একে নিরাপত্তার জন্য গুরুতর বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যপ্রাচ্যবিষয়ক সাবেক উপসহকারী প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএর অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাইক মুলরয়।

মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত বছরও একটি বড় গোপনীয়তা ফাঁসের ঘটনা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের সঙ্গে সম্পর্ককে বিপন্ন করেছিল। ২১ বছর বয়সী এয়ার ন্যাশনাল গার্ডের একজন সদস্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ডিসকর্ডে অত্যন্ত গোপনীয় তথ্য প্রকাশ করেছিল।