যশোর পিবিআই’র আন্তরিকতায় ফেসবুকে প্রকাশিত নিখোঁজ সংবাদ অনুসন্ধানকালে নিখোঁজের মৃতদেহ উদ্ধার, আসামীসহ আলামত জব্দ


Al Amin প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ১৯, ২০২৫, ১১:৪১ অপরাহ্ণ /
যশোর পিবিআই’র আন্তরিকতায় ফেসবুকে প্রকাশিত নিখোঁজ সংবাদ অনুসন্ধানকালে নিখোঁজের মৃতদেহ উদ্ধার, আসামীসহ আলামত জব্দ

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফেসবুকে হারানোর পোস্ট দেখে পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার স্ব-উদ্যোগে চৌগাছার ইজিবাইক চালক সোহাগ হোসেন রকি (২২)’র নিখোঁজের তিনদিন পর তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

গত শনিবার রাতে চৌগাছার পাঁচনামনা গ্রামের পলিরমাঠের বুড়িগাঙ্গের পাশে শুকনা কচুরিপনার ভেতর থেকে লাশটি উদ্ধার করে।

এই ঘটনার সাথে জড়িত তিনজনকে আটক করেছে পিবিআই। উদ্ধার করা হয়েছে নিহতের ইজিবাইক ও মোবাইল ফোনসেট। নিহত রকি চৌগাছা উপজেলার পুড়াহুদা গ্রামের লিয়াকত হোসেনের ছেলে।
আটক তিনজন হলো, চৌগাছার পুড়াহুদা গ্রামের শরিফুল ইসলামের ছেলে সোহানুর রহমান সোহান (১৭), ইছাপুর গ্রামের আব্দুর রহিমের ছেলে শরিফুল ইসলাম সজল (১৭) এবং পাঁচনামনা গ্রামের কামাল হোসেনের ছেলে সুজন হোসেন (১৫)। আটক তিনজনই আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছে। সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট গোলাম কিবরিয়া তার জবানবন্দি ১৬৪ ধরায় রেকর্ড করেছেন।

পিবিআই এর এসআই ডিএম নুর জামাল হোসেন জানিয়েছেন, গত ১৬ জানুয়ারি ইজিবাইক চালক রকি নিখোঁজ হয়। তার নিখোঁজের সংবাদটি চৌগাছার কবির হোসেন নামে একজন তার ফেসবুকে পোস্ট দেন। ওই ফেসবুক পোস্টটি পিবিআই পুলিশ সুপার রেশমা শারমিনের নজরে আসে। তিনি বিষয়টি দেখার জন্য তার অফিসারদের নির্দেশ দেন। নির্দেশ পেয়ে তিনি চৌগাছায় যান এবং রকির পরিবারের সাথে কথা বলেন। এরপর খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেন। পরদিন রকি বাড়িতে না ফেরায় তিনি রকির পিতা লিয়াকত হোসেনকে থানায় জিডি করার পরামর্শ দেন। রকি বাড়িতে না ফেরায় তার বন্ধু ও যাদের সাথে ঘুরে বেড়াই তাদের বাড়িতে যান লিয়াকত। সোহানের কাছে জিজ্ঞাসা করলে সে জানায় ‘তার ফোন নেই। গত রাতে ছিনতাই হয়ে গেছে’। রকির সংবাদও তিনি জানতে চাইলে জানায় ‘রকির সাথে দেখা হয়নি’। জানাতে পারবে না। এই সংবাদ পেয়ে লিয়াকত বাড়ি ফিরে আসলেও তার (এসআই ডিএম নুর জামাল হোসেন) মনে সন্দেহ হয়। পরে তিনি সোহানকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারেন, তার সাথে অপর দুই আসামি সজল ও সুজনও ঘোরাফেরা করে। তিনি বাকি দুইজনের বাড়িতে গিয়ে তাদেরকেও হেফাজতে নিয়ে নানা ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা অসংলগ্ন কথা বলতে থাকে। এক পর্যায়ে তারা হত্যার কথা স্বীকার করে। তাদের স্বীকারোক্তিতে পিবিআই সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে রকির মরদেহ উদ্ধার করে। একই সাথে যশোর-চৌগাছা সড়কের নিমতলা বাজারের পূর্বপাশের মনিরুলের জমি সংলগ্ন রাস্তার পাশ থেকে নিহতের মোবাইল ফোনসেট ও মানিব্যাগ উদ্ধার করে।

এসআই ডিএম নুর জামাল হোসেন জানিয়েছেন, নিহত রকিসহ আসামিরা মাদকসেবী। তারা প্রায় সময় এক সাথে বসে গাঁজা সেবন করে। সে কারণে কোনো একদিন নিহত রকি মজা করে সোহানকে ‘গাঁজাখোর’ বলে ডাক দেয়। বিষয়টি ভালোভাবে নেয়নি সোহান। সে মনে মনে রকিকে শায়েস্তা করার পরিকল্পনা করে।
গত ১৬ জানুয়ারি বিকেলে রকি ইজিবাইক নিয়ে চৌগাছা বাজারে যায়। সন্ধ্যার দিকে ভাস্কর্যের মোড়ে দেখা হয় সোহান ও সজলের সাথে। রকি সে সময় সোহানকে বলে ‘তামাক আছে’ ?  সোহান সরাসরি সাই দেয়। সে সময়ই সে মনে মনে রকিকে হত্যার পরিকল্পনা করে নেয়। তারা গাঁজা সেবনের জন্য নির্জন স্থান খুঁজতে থাকে। সে সময় তাদের পার্টনার আসামি সুজনকে ডেকে নেয়। এরপর রকির ইজিবাইকে সুজন ও সজল উঠে। আর সোহান একটি বাইসাইকেল নিয়ে সাথে সাথে যায়। পরে তারা পাঁচনামনা গ্রামের পলিরমাঠের বুড়িগাঙ্গের পাশে বসে। যাওয়ার সময় সুজনকে দিয়ে গুড়মেলা থেকে কিছু লাড্ডু কিনে নেয়। সেবনের সময় নিহত রকি বেশ কয়েকটি লাড্ডু খেয়ে ফেলে। এতে সোহানসহ তারা রাগারাগি করে। তর্কবির্তকও বাঁধে। এক পর্যায়ে সোহান আগে থেকে পরিকল্পনা মাফিক নেয়া একটি দড়ি নিয়ে এসে পেছন থেকে গলাই পেঁচিয়ে রকিকে হত্যা করে। রকি মারা যাওয়ার পর তার মরদেহ গাঙ্গের পাশের শুকনা কচুরিপানা দিয়ে ঢেকে রাখে। এবং তার মোবাইল ফোন ও ম্যানিব্যাগ নেয়। এরপর ইজিবাইক নিয়ে যশোর শহরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। নীমতলা বাজারের অদূরে পৌঁছালে মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। এরপর ইজিবাইক বিক্রির পরিকল্পনা করে। তারা সেটি নিয়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছাকাছি পৌঁছালে টহল পুলিশ দেখে ইজিবাইক ফেলে দৌড়ে পালিয়ে যায়।

এসআই ডিএম নুর জামাল হোসেন জানিয়েছেন, হত্যার ঘটনাটি উদঘাটন করে আটক তিন আসামিকে রোববার আদালতে হাজির করা হয়। তারা আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। তবে এই ঘটনার মূল নায়ক সোহান। বাকি দুইজন জানতো না যে রকিকে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেলা হবে। যখন হত্যা হয়ে গেছে তখন রকির লাশ ধামাচাপা দিতে সোহানকে বাকি দুইজন সহযোগিতা করে।