যান্ত্রিক ত্রুটিতে ভেঙে পড়েছে বিমানের সেবা কিন্তু কেন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৩, ২০২৫, ৯:৫২ পূর্বাহ্ণ /
যান্ত্রিক ত্রুটিতে ভেঙে পড়েছে বিমানের সেবা কিন্তু কেন

শনির দশা যেন কাটছেই না বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজগুলোয়। একের পর এক যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিমান বহরে থাকা উড়োজাহাজগুলো মাঝেমধ্যেই কারিগরি ত্রুটির কবলে পড়ে যাত্রা বিলম্ব, গ্রাউন্ডেড এমনকি মেরামতের জন্য হ্যাঙ্গারে পাঠানো হচ্ছে। গত ১৬ জুলাই রাতে দুবাই বিমানবন্দরে বিমানের একটি বোয়িং উড়োজাহাজের চাকা ফেটে গিয়ে ফ্লাইট বিঘ্নিত হয়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই ফ্লাইটের ২২০ জন যাত্রী।

এর রেশ না কাটতেই গত সোমবার ঢাকা থেকে উড়ে গিয়ে জেদ্দায় অবতরণের পর পার্কিং করতে গিয়ে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িংয়ের ৭ নম্বর চাকায় ত্রুটি ধরা পড়ে। এ ঘটনায় উড়োজাহাজটিকে সেখানেই গ্রাউন্ডেড করা হয়। এতে বিপাকে পড়েন ওই ফ্লাইটের ৩৮২ জন যাত্রী। গতকাল মঙ্গলবার তাদের ফেরার কথা ছিল ঢাকায়; কিন্তু সম্ভব হয়নি।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, জেদ্দা অবতরণের পর বোয়িং ৭৭৭-৩০০ ইআর উড়োজাহাজের বিজি-২৩৫ ফ্লাইটের ৭ নম্বর চাকা (হুইল) যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অকেজো হয়ে যায়। এখন ৭ ও ৮ নম্বর চাকা দুটি প্রতিস্থাপন করতে হবে। জেদ্দায় হুইল পাওয়া যায়নি। গতকাল মঙ্গলবার বিকালে নিয়মিত ফ্লাইটে ঢাকা থেকে ২টি হুইল নিয়ে বিমানের প্রকৌশলীরা রওনা হন। তারা জেদ্দায় গিয়ে নতুন হুইল প্রতিস্থাপন করবেন। এরপর আটকে পড়া যাত্রী নিয়ে বোয়িংটি ঢাকায় অবতরণ করার কথা।

শুধু এ ঘটনাই নয়, কয়েক দিন পর পরই যান্ত্রিক ত্রুটিতে পড়ছে বিমানের উড়োজাহাজ। একের পর এক ত্রুটিতে বিঘ্নিত হচ্ছে ফ্লাইট, দুর্ভোগে পড়ছেন যাত্রীরা। আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে এয়ারলাইন্সটির। বিমানে থাকা ১৯টি উড়োজাহাজের মধ্যে এখন আকাশে উড়ছে ১৪টি।

বিমান সূত্রে জানা গেছে, ড্যাস-৮-এর পাঁচটি উড়োজাহাজের মধ্যে ৩টি বর্তমানে গ্রাউন্ডেড অবস্থায় রয়েছে। এর মধ্যে একটি উড়োজাহাজ দীর্ঘদিন ধরে বসে আছে। বাকি ২টি মেরামতের জন্য গ্রাউন্ডেড রয়েছে। চলতি মাসেই এই উড়োজাহাজগুলো আবার আকাশে ওড়ার কথা। এ ছাড়া বোয়িং সিরিজের ১টি উড়োজাহাজ সি-চেকের জন্য গ্রাউন্ডেড রয়েছে।

গত ১৬ জুলাই রাতে দুবাই বিমানবন্দরে বিমানের বোয়িং সিরিজের উড়োজাহাজের চাকা ফেটে গিয়ে ফ্লাইট বিঘিœত হয়। চরম দুর্ভোগে পড়েন ওই ফ্লাইটের ২২০ জন যাত্রী। এতে দুবাই বিমানবন্দরে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। যাত্রীরা মারমুখী আচরণ শুরু করেন। যাত্রীদের হোটেলে রেখে হুইল প্রতিস্থাপন করে শুক্রবার ঢাকায় ফিরে আসে বোয়িংটি।

গত ২৭ জুন বিমানের ঢাকা-থাইল্যান্ডের ফ্লাইট বিজি ৩৮৮ বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়ার কথা ছিল। তবে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বোর্ডিং পাস নিতে গেলে যাত্রীদের জানানো হয়, যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফ্লাইট এক ঘণ্টা দেরিতে বেলা ১২টা ১৫ মিনিটে ছাড়বে। কিন্তু প্রায় পাঁচ ঘণ্টা দেরিতে, বিকাল ৪টার দিকে ফ্লাইটটি ঢাকা ত্যাগ করে।

৫ জুলাই ব্যাংককের সুবর্ণভূমি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমানের বিজি ৩৮৯ ফ্লাইট ঢাকায় উড়াল দেওয়ার কিছুক্ষণ আগে বিমানের কর্মকর্তা যাত্রীদের জানান, ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং তাদের পরদিন একই সময়ে ফিরতে হবে। তবে কোনো কারণ উল্লেখ করেনি বিমান।

একই দিন মদিনা থেকে আসা বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি ১৩৮ সকাল সাড়ে ৯টায় শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। অবতরণের পর রানওয়ে-২৩ প্রান্তে এসে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আটকা পড়ে।

এর আগে গত ৩ জুলাই বৃহস্পতিবার একটি ড্যাস-৮ বিমান ঢাকা থেকে উড়াল দিয়ে কক্সবাজার বিমানবন্দরে অবতরণের পর রানওয়েতে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে আটকে যায়। পরে পুশ কার্ট দিয়ে টেনে ৬ নম্বর বে’তে নেওয়া হয়। পর দিন মেরামত করার পর সেটা ঢাকায় আসে। নোজ ল্যান্ডিং গিয়ার লক হয়ে যাওয়াসহ আরও কিছু যান্ত্রিক ত্রুটি পাওয়া যায় বিমানটিতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিমানের উড়োজাহাজগুলের বয়স হয়েছে, তাই প্রায়ই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ফ্লাইট বিঘ্নিত হচ্ছে। আর বিমানের লোকসানের বোঝা ভারী হচ্ছে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে দ্রুত নতুন উড়োজাহাজ বহরে অন্তর্ভুক্ত করা না হলে বিমান আরও বিপাকে পড়বে বলে মনে করেন তারা।

বিমানের জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক এবিএম রওশন কবীর বলেন, জেদ্দায় বিমানের বোয়িং উড়োজাহাজের হুইল ফেটে যাওয়ায় শিডিউল ফ্লাইট পরিচলনা করা সম্ভব হয়নি। ঢাকা থেকে নিয়মিত ফ্লাইটে মঙ্গলবার বিকালে বোয়িংটির জন্য হুইল নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ২৮২ জন যাত্রীকে হোটেলে রাখা হয়েছে। অনেক সময়ে তাপমাত্রার কারণে হুইল ফেটে যায় বলে দাবি করেন তিনি।