প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নিযুক্ত জিম্মি বিষয়ক দূত অ্যাডাম বোহেলার হামাস কর্মকর্তাদের সাথে তার সরাসরি আলোচনার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছেন, জোর দিয়ে বলেছেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলের পক্ষে কাজ করার পরিবর্তে নিজস্ব এজেন্ডা অনুসরণ করছে। ‘আমরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। আমরা ইসরাইলের দালাল নই,’ আলোচনার বিপক্ষে অবস্থান নেয়া ইসরাইলি কর্মকর্তাদের সমালোচনার জবাবে বোহেলার রোববার ইসরাইলের চ্যানেল ১২-কে বলেন।
কাতার এবং মিশরের চলমান মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার সমান্তরালে চলমান আলোচনাগুলি মূলত গাজায় আটক আমেরিকান জিম্মিদের মুক্তি নিশ্চিত করার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছে। বোহেলার সম্ভাবনা সম্পর্কে আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, ‘আগামী কয়েক সপ্তাহের মধ্যে জিম্মিদের বাড়িতে দেখার একটি বাস্তব সুযোগ রয়েছে।’ একটি পৃথক সাক্ষাৎকারে, বোহেলার প্রকাশ করেছেন যে, হামাস একটি উল্লেখযোগ্য ছাড়ের প্রস্তাব করেছে: পাঁচ থেকে দশ বছরের যুদ্ধবিরতি যার সময়কালে দলটি নিরস্ত্রীকরণ করবে এবং গাজার রাজনৈতিক নেতৃত্ব থেকে সরে আসবে।
‘তারা সকল বন্দী বিনিময়ের প্রস্তাব দিয়েছে … এবং পাঁচ বছর থেকে দশ বছরের যুদ্ধবিরতি যেখানে হামাস সমস্ত অস্ত্র সমর্পণ করবে,’ তিনি এটিকে ‘কোন খারাপ প্রস্তাব নয়’ বলে বর্ণনা করেন। তবে, তিনি উল্লেখ করেন যে, হামাস এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে এই শর্তাবলীতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরাইলি জিম্মিদের চেয়ে আমেরিকান বন্দীদের মুক্তিকে অগ্রাধিকার দিতে পারে এমন উদ্বেগের বিষয়ে, বোহেলার আশ্বাস দিয়েছিলেন: ‘আমাদের প্রতিশ্রুতি পূর্ণ। আমরা আমেরিকান এবং ইসরাইলি উভয়কেই বের করে আনতে চাই।’
ত্রাণের পর এবার গাজায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ : গাজায় বন্দী বাকি ইসরাইলি জিম্মিদের মুক্তি দিতে হামাসকে বাধ্য করতে এবার সেখানে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে ইসরাইল। কাতারের রাজধানী দোহায় যুদ্ধবিরতির দ্বিতীয় ধাপের আলোচনা শুরুর আগে এই নির্দেশ দিল ইসরাইল সরকার। রোববার ইসরাইলের জ্বালানিমন্ত্রী এলি কোহেন এ ঘোষণা দেন। এক সপ্তাহ আগে ইসরাইল গাজায় সব ধরনের ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে। গাজায় ২০ লাখের বেশি মানুষ বসবাস করেন।
এক ভিডিও বার্তায় কোহেন বলেন, ‘জিম্মিদের ফিরিয়ে আনতে এবং যুদ্ধ শেষে গাজায় আর এক দিনও যেন হামাসের অস্তিত্ব না থাকে, তা নিশ্চিত করতে আমাদের হাতে যা কিছু আছে, তার সবই আমরা ব্যবহার করব।’ বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়া হলে শুরুতেই গাজায় পানি বিশুদ্ধকরণ ব্যবস্থায় প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গাজার বাসিন্দাদের বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ সরবরাহ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসরাইল সরকার বলেছে, তারা গাজায় পানি সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার বিষয়টিও উড়িয়ে দিচ্ছে না। বিবৃতিতে কোহেন আরও বলেন, ‘আমি এইমাত্র গাজা উপত্যকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ করে দেয়ার নির্দেশে সই করেছি।’
গাজায় ২০ লাখেরও বেশি মানুষের ঘরে খাবার নেই : এবার অনাহারে মরবে অসহায় গাজাবাসী। সেই লক্ষ্যেই পরিকল্পিত এ নৃশংসতা এখনো চালিয়ে যাচ্ছে ইসরাইলিরা। অস্থায়ী যুদ্ধবিরতির পরও অসহায় মানুষগুলোকে শান্তিতে বাঁচতে দিচ্ছে না। মানবিক সহায়তা বন্ধের অস্ত্রে পঙ্গু করে দিচ্ছে গোটা জাতিকে। বেঁচে থাকার জন্য যে খাদ্যের প্রয়োজন, তাতেও নিষেধাজ্ঞা। ৮ দিন ধরে চলা ইসরাইলের এ বর্বর পদক্ষেপে অঞ্চলটির ২০ লাখের বেশি মানুষ খাদ্যাভাবে পড়েছে। রোববার আলজাজিরারর প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরাইলি মানবিক সহায়তা বন্ধের কারণে গাজার ২৩ লাখ মানুষ খাদ্য, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় জিনিসের তীব্র ঘাটতি অনুভব করছে। এ ছাড়াও খান ইউনুসে অবস্থিত ৬টি বেকারি পুরোপুরিভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। কেননা ৭ দিন ধরে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে ইসরাইল। যেদিকে চোখ যায়, সেদিকেই খা-খা অবস্থা। ধূসর বালুকণায় ছেয়ে আছে অবরুদ্ধ অঞ্চলটির প্রতিটি স্থান। যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও এখনো দিশেহারা। মাথা গোঁজার ঠাঁই না পেয়ে থাকতে হচ্ছে রাস্তায় ইঁদুর-বেড়ালের সঙ্গে। গাজার বুরেজের অস্থায়ী একটি ক্যাম্পে থাকছেন হানিন আল-দুরা (৩৪)। এখন মাথার ওপর ছাদ থাকলেও কিছুদিন আগেও রাস্তায় রাত কাটাতে হয়েছে হানিনকে। তখনকার সময়টা রীতিমতো ‘অগ্নিপরীক্ষা’ বলে জানিয়েছেন তিনি। সূত্র : হারেৎজ, আল-জাজিরা।
আপনার মতামত লিখুন :