

বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা গমের চালান আসছে আজ। দুপুরে পানামার পতাকাবাহী ‘এমভি নর্স স্ট্রাইড’ নামে জাহাজটি চট্টগ্রাম বহির্নোঙরে এসে পৌঁছবে বলে জানা গেছে। জিটুজি পদ্ধতির (সরকার থেকে সরকার) আওতায় আনা জাহাজটিতে ৫৭ হাজার মেট্রিক টন গম রয়েছে। পর্যায়ক্রমে দেশটি থেকে আরও ১ লাখ ৮৬ হাজার টন গম আমদানি করা হবে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি নমুনা সংগ্রহ, খালাস প্রক্রিয়াসহ বিভিন্ন কার্যক্রম মনিটরিং করার জন্য খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে উচ্চপর্যায়ের একটি টিম চট্টগ্রামে এসেছে। এ টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (সংগ্রহ ও সরবরাহ অনুবিভাগ) এএইচএম কামরুজ্জামান। আজ জাহাজটি থেকে গমের নমুনা সংগ্রহ করার কথা রয়েছে। চট্টগ্রাম খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, সরকার দীর্ঘদিন ধরে রাশিয়া, ইউক্রেন ও ভারত থেকে গম আমদানি করে আসছিল। এছাড়া ব্রাজিল, রোমানিয়া, বুলগেরিয়া ও উরুগুয়ে থেকেও আমদানি করে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের পালটা শুল্ক আরোপের পর দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ব্যবধান কমিয়ে আনতে ট্রাম্প প্রশাসন চাপ সৃষ্টি করে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সরকার যুক্তরাষ্ট্র থেকে গম আমদানির মাধ্যমে ঘাটতি কমানোর উদ্যোগ নেয়। দেশটি থেকে প্রতিটন ৩০২ ডলার দরে ২ লাখ ২০ হাজার টন গম আমদানির চুক্তি করে। তবে চুক্তিতে ১০ শতাংশের কমবেশি শর্ত থাকায় আগামী কিছুদিনের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র থেকে মোট ২ লাখ ৪২ হাজার টন গম আসছে বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এসব গমের মধ্যে প্রথম চালান ৫৬ হাজার ৯৫০ মেট্রিক টন নিয়ে ‘এমভি নর্স স্ট্রাইড’ আজ বহির্নোঙরে পৌঁছবে। বাকি ১ লাখ ৮৬ হাজার মেট্রিক টনের কয়েকটি চালান আগামী সপ্তাহে বা কয়েকদিনের মধ্যে আসবে। জিটুজি পদ্ধতিতে ‘ইউএস হুইট সমিতি’র অনুমোদিত প্রতিষ্ঠান এগ্রোক্রপ ইন্টারন্যাশনাল থেকে এ গম কিনছে সরকার। প্রাথমিক চুক্তি অনুযায়ী ২ লাখ ২০ হাজার টন গম কিনতে ব্যয় হবে স্থানীয় মুদ্রায় ৮২৫ কোটি ৩১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। গত ২৩ জুলাই এই গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন করে ক্রয়সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটি।
বাংলাদেশি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আরোপ করা পালটা শুল্ক কমানোর দরকষাকষিতে সুবিধা পেতে গত জুলাইয়ে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সরকারিভাবে গম আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হয়। দেশটির গম রপ্তানিকারক সমিতি বা ইউএস হুইট সমিতির সঙ্গে সমঝোতা স্মারক সই করে সরকার। এ স্মারকের আওতায় বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে প্রতিবছর ৭ লাখ টন করে গম আমদানি করবে। সরকার অন্যান্য দেশ থেকে যে দামে গম আমদানি করে আমেরিকা থেকে আনতে প্রতি টনে ২৫ থেকে ৩০ মার্কিন ডলার বাড়তি খরচ করতে হয় বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
বর্তমানে দেশে বছরে গড়ে ৮০ লাখ টনের বেশি গমের চাহিদা রয়েছে। দেশে ১১ লাখ টনের মতো গম উৎপাদিত হয়। বাকি গম আমদানি করতে হয় বিশ্বের নানা দেশ থেকে। বাংলাদেশ তার চাহিদার অর্ধেকেরও বেশি গম আমদানি করে রাশিয়া থেকে। গত অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল প্রায় ৫৪ শতাংশ। এরপরই রয়েছে ইউক্রেন। গত অর্থবছরে ইউক্রেন থেকে গম আমদানির পরিমাণ ছিল ১৪ শতাংশ।
জানা গেছে, আজ দুপুরে অতিরিক্ত সচিব এএইচএম কামরুজ্জামান, অধিদপ্তরের প্রতিনিধি ও আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রকসহ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে জাহাজ থেকে গমের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হবে। নমুনাসংক্রান্ত প্রতিবেদন ‘খাওয়ার উপযোগী’ পাওয়া গেলে খালাস প্রক্রিয়া শুরু হবে। খালাস প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে কাস্টমসের কাগজপত্র প্রস্তুত করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম চলাচল ও সংরক্ষণ নিয়ন্ত্রক মো. সাকিব রেজওয়ান জানান, আমদানি করা গমের মধ্যে ৩৪ হাজার মেট্রিক টনের বেশি গম চট্টগ্রাম সাইলোতে মজুত করা হবে। অবশিষ্ট গম মোংলা সাইলোতে মজুত করা হবে।
আপনার মতামত লিখুন :