ব্যায়াম অথবা যোগব্যায়াম সম্পর্কে আমরা হামেশাই কিছু বাক্য শুনি, ‘ব্যায়াম? সে তো মোটাদের জন্য! আমি তো স্লিম। আমি কেন ব্যায়াম করবো!’ এই হচ্ছে ব্যায়াম নিয়ে আমাদের সাধারণ চিন্তা। অথচ দেখতে শুকনো পাতলা এমন অনেকেই শরীরের নানা জায়গায় ব্যথা, ক্ষুধামান্দ্য, ইনসমনিয়া বা ঘুমের সমস্যা, গ্যাস্ট্রিক ইত্যাদিতে ভুগে থাকে। আর আমাদের ব্যস্ত নাগরিক জীবনের সবচাইতে বড় সমস্যা স্ট্রেস যার ভুক্তভোগী কমবেশি সবাইই। এসব থেকে মুক্তি কীভাবে মিলবে?
না কোন যুগান্তকারী আবিষ্কার হয়তো বের হয়নি কিন্তু নিয়মতান্ত্রিক জীবনাযপন আমাদের সুস্থতা নিশ্চিত করতে সাহায্য করে অনেকাংশেই। আর সুস্থ সুন্দর জীবনের জন্য নিয়মিত ব্যায়ামের বিকল্প নাই। আর সেটা যদি হয় ইয়োগা বা যোগব্যায়াম, তা হলে তা শরীরকে সুস্থ রাখার পাশাপাশি মনকেও রাখে চনমনে আর উৎফুল্ল। শারীরিক সক্রিয়তা আমাদের মস্তিস্কের কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত করে যা আমাদের উদ্বেগ কমিয়ে সুখানুভূতি বাড়ায়।
সুস্থতা মানে শারীরিক নির্দিষ্ট অবয়ব বা ওজন নয়, সুস্থতা মানে আপনি কতটা কর্মক্ষম সেটা। অর্থাৎ প্রতিদিন কতঘন্টা আপনি বিনা ক্লান্তিতে কাজ করতে পারছেন। নিয়মিত ঘুম হওয়া কিংবা খাবার হজম হওয়া এসব ফ্যাক্টরও জড়িত সুস্থতার সাথে। আর এসব নিশ্চিত হয় কিসে, শারীরিক সক্রিয়তায়।
যোগব্যায়াম কি ব্যায়াম নাকি অন্যকিছু, ভেবে আমরা অনেকেই বিভ্রান্ত হই। মূলত ১৯৮০’র দশক থেকে পশ্চিমা বিশ্বে যোগব্যায়ামকে ব্যায়াম হিসাবে দেখা হয়। কিন্তু এর উৎপত্তিস্থল অর্থাৎ ভারতে যোগব্যায়াম শারীরিক কসরতের চাইতেও বেশি কিছু। প্রাচীন ভারতীর রীতি মতে যোগবায়্যাম ধ্যান এবং আধ্যাত্মবাদের সাথে যুক্ত।
যোগব্যায়ামের মাধ্যমের আমাদের অনুভূতি মহাজগতের সাথে নিজের শরীরী অস্তিত্বের যোগাযোগ ঘটায়। নিয়মিত অনুশীলন আমাদের অশান্ত মনকে শান্ত করে, বাধ্য করে নিজেকে আরো শান্ত আর ধীরস্থির রাখতে। এভাবেই গভীর ধ্যানের মাধ্যমে আমরা নিজেদের পারিপার্শ্বিকের সাথে নিজ অস্তিত্বের সংমিশ্রণ ঘটাতে সক্ষম হই।
যোগব্যায়ামের যাদুকরী প্রভাবে শারীরিক অসুস্থতা সারিয়ে তোলার তেমন কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণালব্ধ ফলাফল হয়তো নেই কিন্তু এটা যে কারো মানসিক স্বাস্থ্য ভালো করতে কার্যকরী। নিয়মিত যোগব্যায়াম আমাদের শরীরের টিস্যুতে রক্ত চলাচল আরো কার্যকর করে। আর কে না জানে হৃৎপিন্ড ও ফুসফুস ভালো থাকলে তা আমাদের রোজকার কাজের শক্তিকে বাড়িয়ে দেয় বহুগুণ।
আর প্রতিদিনের স্ট্রেসফুল জীবনে যেখানে সব কাজেই আমরা হাঁপিয়ে উঠি, একটু বিরাম খুঁজি, তখন নিয়মিত যোগব্যায়ামের বিকল্প নাই আসলেই। কারণ যোগব্যায়ামে শুধু শারীরিক কসরত হচ্ছে তাই নয়, এতে মনোসংযোগের কাজটাও হয়ে যায় দারুণভাবে। যোগব্যায়ামের সময় শ্বাস প্রশ্বাস নিতে হয় খুবই নিয়ন্ত্রিতভাবে। এটা শরীরে রক্ত চলাচল নিয়ন্ত্রণ করার পাশাপাশি আমাদের মানসিক অস্থিরতা বা স্ট্রেস নিয়ন্ত্রনে সাহায্য করে।
তাই আসুন সুস্থ জীবন আর সুস্থ মনের আশায় আমরা আজ থেকেই শুরু করি নিয়মিত যোগব্যায়াম অনুশীলন।