রংপুরের পীরগাছার একটি দোলায় বিদ্যুতের খুঁটির চারপাশে পুঁতে রাখা অবস্থায় এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার পরিচয় শনাক্ত হয়নি। ওই নারীর বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের কাছাকাছি বলে ধারণা করা হচ্ছে। সুরুতহাল রিপোর্টের আলোকে পুলিশের ধারণা, অন্য কোনো স্থানে ধর্ষনের পর তাকে হত্যা করে লাশ গুম করতে চেয়েছিল দুর্বৃত্তরা। পরিচয় শনাক্তে প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সি-সাকেল) আশরাফুল আলম পলাশ জানান, সোমবার (২৫ জুলাই) সকাল ১০টায় খবর পেয়ে ঘটনাস্থল উপজেলার সদর ইউনিয়নের তালুক ইসাদ নয়াটারি দোলায় আকবর আলীর আমনের জমিতে থাকা বিদ্যুতের খুঁটির চারপাশে প্রায় দুই ফুট মাটির নিচ থেকে ভাজ করে পুঁতে রাখা অবস্থায় এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তার পরণের স্যালায়ারের এক পা ঢাকা ছিল, আরেক পা খোলা অবস্থায়। স্বাস্থ্যবতী ওই নারীর বয়স আনুমানিক ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। তবে তার মাথার চুল ন্যাড়ার পাশাপাশি ভ্রুর উঠানো ছিল। সম্ভবত দুর্বৃত্তরা যাতে পরিচয় নিশ্চিত হওয়া না যায়, সেজন্যই তার শরীরের এই বিকৃতি ঘটিয়েছিল।
পুলিশের এই কর্মকর্তা আরো জানান, বেলা ৩টায় ওই নারীর লাশ স্থানীয়দের সহযোগিতায় দোলা থেকে উদ্ধার করে সিআইডির মাধ্যমে সুরুতহাল রিপোর্ট তৈরির পর ময়নাতদন্তের জন্য রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। এখনো আমরা পরিচয় শনাক্ত করতে পারিনি। সে কারণে সিআইডির মাধ্যমে হাতের আঙ্গুলের ছাপসহ প্রয়োজনীয় শারীরিক নমুনা নেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে লাশটির পরিচয় আমরা শনাক্ত করতে চাই।
তিনি বলেন, লাশটি কিভাবে এখানে এলো, কারা এ ঘটনা ঘটাল- সব কিছুই আমরা খতিয়ে দেখা শুরু করেছি। সুরুত হাল অনুযায়ী আমরা ধারণা করছি, ওই নারীকে ধর্ষণ করা হয়ে থাকতে পারে। তবে সেটিসহ আমরা সব কিছু নিশ্চিত করতে পোস্টমোর্টেমসহ প্রয়োজনীয় সকল বস্তুগত রিপোর্ট হাতে পেলে জানাতে পারব। তবে এটি হত্যাকাণ্ড। লাশ গুম করতেই অনেক দূরের দোলায় বিদ্যুতের খুঁটির সাথে পেচিয়ে রাখা হয়েছিল। এই ঘটনায় একাধিক দুর্বৃত্ত জড়িত থাকতে পারে। কবে এখানে পুঁতে রাখা হয়সসহ এই ঘটনার সাথে কারা জড়িত সেটি জানতে আমরা কাজ শুরু করছি।
যেভাবে লাশের সন্ধান
প্রথম প্রত্যক্ষদর্শী স্থানীয় যুবক বাদল মিয়া জানান, সোমবার সকালে আমি কাজে আসি। শ্যালো মেশিট স্টার্ট দিয়ে পানি ছাড়ছি। যে জমিতে লাশ পাওয়া গেছে আকবর চাচার জমিতেই আমার পানি দেয়া কথা। কিন্তু পাশের জমি দুলাল চাচার অনুরোধে সেখানেই আমি প্রথমে পানি ছাড়ি। পানি ছাড়ার পর আমি জমির আইল সমান করছিলাম। যে জমিটাত লাশ পাওয়া গেছে ওটা আকবর চাচার জমি। কিছুক্ষণ পর আকবর চাচা এলো। পোলের দিকে দেখে আকবর চাচা আমাকে বলে গতকাল বিদ্যুতের লোক পোলোত কী কাজ করেছে। জমিতে এত মানুষের পায়ের দাগ। মাটি আলগা। আমিও দেখি পোলের কাছে আলগা মাটি। তখন দুলাল চাচাও ছিল। তিনি বললেন, বিদ্যুতের লোকজন মনে হয় আরথিন মনে হয়ে পুঁতে রেখেছে। পরে মুনজুর চাচা সেখানে আসেন। তিনি এসে আমাকে বলেন, জমি দিয়ে কী যেন ছ্যাচরে নিয়ে গেছে। কিসের দাগ! তখন পোলের কাছে গিয়ে দেখলাম গর্ত খোঁড়ার দাগ। আমি তখন বললাম হয়তো কারো কুকুর মরে গেছে, কুকুর মনে হয় পুতে রেখেছে। তখন দুলাল চাচা বলেন না কুকুর যদি পুঁতে রাখে তাহলে এত দূর কেন? দোলার মাঝে কেন? পুকুরের পাশে অথবা রাস্তার পাশে নেই কেন?
বাদল আরো জানান, গতকাল (রোববারও) আমি ওই জমিতে কাজ করেছি। তখনো জমি ভালো ছিল। আজকে আজগুবি কেমন করে এই জমি এরকম হবে। তখন দুলাল চাচা আমাকে বলেন, তুমি গর্ত খোঁড় দেখি কী আছে। তখন আমি কোমড় খানিক খুঁড়ছি। তখন একটা লাঠি পাই। এরপর হঠাৎ করে সেখানে থাকা লাশের পায়ে কোদালের চোট লাগে। ঠাস করে শব্দ হয়। তখন আরেকটু খোঁড়ার পর দেখি মানুষ। তখন আমরা সবাই সেখান থেকে এসে নয়াটারির সবাইকে বললাম। তখন মানুষ হুরমুর করে সবাই আসা শুরু করল। কিন্তু কেউ কিছু বলল না। পরে দুপুর বেলাপুলিশ এলে আমরা এলাকাবাসী সবাই মিলে আরো গভীর করে লাশটা বের করে দেই।
লাশ বের করার সময় গর্ত খোড়ার কাজে থাকা সেলিম নামের আরেক কৃষক জানান, পুলিশ আসার পর আমি লাশ তোলার জন্য কোদাল দিয়ে খোঁড়াখুঁড়ি করি। লাশটি সোজা অবস্থায় ছিল না। মাথা একদিকে এবং পা পেটসহ একদিকে পোলের সাথে ভাঁজ দিয়ে রাখা ছিল।
এই কৃষক জানান, কেউ তাকে মেরে ওখানে রেখেছে। তা নাহলে তো লাশ এভাবে যাওয়া কথা না ওখানে। অন্য কোনখানে মারার পর এখানে হয়তো রোববারের রাতের কোনো একসময় রেখেছে। যেভাবে ওখানে মাটি খোঁড়া ছিল, তাতে তাই মনে হয়েছে। পোলের গোড়ায় এমন অবস্থা দেখা গেছে যে মনে হয় কিছুক্ষণ আগে কেউ কিছু পুঁতে রেখেছে। কারণ শনিবার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টি হলে মাটি বসা থাকত। রোববার যেহেতু রাতে বৃষ্টি হয়নি। সে কারণে পুঁতে রাখলেও মাটি বসেনি।
আলআমিন নামের এক প্রত্যক্ষদর্শী জানান, একেবারে রাঙ্গা হাজির জমি থেকে স্যাচরানোর দাগ ছিল। প্রায় আধা মাইল হবে। বস্তায় করে সম্ভবত ছ্যাচরে নিয়ে এসেছে। ঘটনাটি বাইরের। মেয়েটির মাথা ন্যাড়া ছিল। ভ্রূ উপড়ানো ছিল। স্যালোয়ার একটা পা থেকে খোলা ছিল। আমাদের ধারণা, মেয়েটিকে ধর্ষণের পর হত্যা করে এখানে লাশ গুম করা হয়েছে। লাশ গুমের ঘটনার সাথে এলাকার কারো না কারো যোগসাজস আছে বলে মনে করেন তিনি। এ ঘটনায় এলাকায় আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।