পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে রাজধানী ছেড়ে এখন গ্রামে অবস্থান করছেন কয়েক লাখো মানুষ। ঈদের আগের দিন থেকেই রাজধানীর বেশিরভাগ সড়কই ফাঁকা। প্রধান সড়কগুলোতে বাস চলাচল করছে হাতে গোনা। নেই চিরচেনা যানজট। অলস সময় কাটছে ট্রাফিক পুলিশের। ফাঁকা সড়কগুলো দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

ঈদের তৃতীয় দিন গতকাল বুধবার সকাল থেকে রাজধানীর গুলিস্তান, মতিঝিল, শান্তিনগর, কাকরাইল, পল্টন, বাবুবাজার, মালিবাগ, শাহবাগ, ফার্মগেট, বিজয় সরণি, রামপুরা, বাড্ডা, কুড়িল, নিউমার্কেট ও ধানমন্ডিসহ আশপাশের এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। এদিন রাজধানীর প্রায় সব সড়কেই যানবাহনের চাপ কম। কিছু বাস চললেও রয়েছে যাত্রী সংকট। নেই চিরচেনা যানজট। ঢাকার স্থায়ী বাসিন্দা ও জরুরি কাজে যারা ঢাকায় রয়ে গেছেন, তাদের অনেকেই পরিবার নিয়ে ঘুরতে বের হচ্ছেন। স্বল্প দূরত্বের কোথাও যেতে তারাও বেছে নিচ্ছেন ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

অন্যদিকে প্রধান সড়কে কিছু বাস চললেও যাত্রী সংখ্যা একেবারেই কম। বেশিরভাগ সিট থাকছে ফাঁকা। তাই যাত্রীর অপেক্ষায় স্টপিজে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হচ্ছে। গুলিস্তানে একাধিক বাস যাত্রী জানান, অন্য সময় এই যানজটের কারণে এয়ারপোর্ট যেতে দুই ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যেতো। অথচ ঈদের ছুটিতে ৩০ মিনিটের মধ্যেই পৌঁছা যাচ্ছে।

যাত্রাবাড়ী থেকে শেওড়াপাড়া হয়ে মিরপুরগামী বাস চালক জানান, ঈদে সবসময় যাত্রী কম থাকে। তারপরও কিছুটা বাড়তি উপার্জনের জন্য গাড়ি নিয়ে নেমেছেন। তবে যাত্রী অনেক কম। প্রায় সিট ফাঁকা থাকে। তিনি বলেন, ‘চাপ কম থাকায় কম সময়ে গন্তব্যে পৌঁছা যায়।

অবশ্য কোনও কোনও ক্ষেত্রে ব্যতিক্রমও আছে। আগে যানজটের কারণে রাস্তায় বিলম্ব হতো। আর এখন যাত্রী সংকটের কারণে স্টপিজে দেরি হচ্ছে বলে জানান যাত্রীরা। যাত্রাবাড়ী থেকে মোহাম্মদপুরগামী ট্রান্স সিলভা বাসে করে সাইন্সল্যাবে মোড়ে নেমে এক যাত্রী জানান, ঈদের আগে যানজটের কারণে দেরি হতো। আর এখন দেরি হচ্ছে যাত্রী সংকটের কারণে।

এ নিয়ে প্রায় সময় যাত্রীদের সাথে বচসা হচ্ছে পরিবহন শ্রমিকদের। আজিমপুর থেকে গাজীপুরগামী ভিআইপি পরিবহনের চালক বলেন, সোবহানবাগ থেকে এক যাত্রী তার পরিবার নিয়ে নেমে যাচ্ছিলেন একটু থামিয়ে রাখার জন্য। কারণ তখন আমার বাসে কমপক্ষে ২০টি সিট খালি। এত কম যাত্রী নিয়ে গেলে তো তেলের টাকাও উঠবে না। তাই বুঝিয়ে বলায় তিনি আবার বসেছেন।

বাস কম থাকলেও পুরো নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রিকশা ও ব্যাটরিচালিত অটোরিকশা। পরিবারসহ মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় যাচ্ছিলেন চাকরিজীবী আবুল কাশেম। তিনি জানান, রাস্তা ফাঁকা হওয়ায় দ্রুত যাওয়া যাবে, এই ভেবে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা নিয়েছেন। তাছাড়াও সিট বড় হওয়ায় একসঙ্গে তিন জন অনায়াসেই যাওয়া যায়। তাই সড়কে অটোরিকশার আধিক্য বেশি।

অপরদিকে যানজট কম হওয়ায় অধিকাংশ সিগন্যালে নেই ট্রাফিক পুলিশ। কোনও কোনও জায়গায় দুই একজন ট্রাফিক থাকলেও সময় কাটাচ্ছেন গল্পগুজব করে। সড়কে ব্যটারিচালিত অটোরিকশা বেশি চলাচল করায় কিছুটা সতর্ক থাকতে হচ্ছে বলেও জানান পুলিশের এক সদস্য। তিনি বলেন, ফাঁকা রাস্তা থাকলে বেপরোয়া গতির কারণে এসব যানবাহন অনেক সময় দুর্ঘটনার কবলে পড়ার শঙ্কা থাকে।

এদিকে, পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে ফাঁকা রাজধানী ঢাকা। সড়কে রয়েছে অল্প কিছু যানবাহন। এতে চলাচল করে স্বস্তি পাচ্ছেন রাজধানীবাসী। সরেজমিনে দেখা যায়, সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যা রয়েছে হাতে গোনা। কিছু সময় পর পর গাড়ি চলাচল করছে। আবার বিভিন্ন গন্তব্যের গাড়ি পেতে ২০-৩০ মিনিট অপেক্ষা করতে হচ্ছে যাত্রীদের। এছাড়া স্বল্প পরিসরে রিকশা, সিএনজি ও বাইক রয়েছে সড়কে। আবার কেউ কেউ অপেক্ষা করছেন গাড়ির জন্য।

জানতে চাইলে নিউমার্কেট থেকে নারায়ণগঞ্জমুখী যাত্রী শরিফুল হালিম বলেন, ১০ মিনিট ধরে অপেক্ষা করছি নারায়ণগঞ্জ মুখী গাড়ির জন্য। এখনও গাড়ি পাইনি। কিছু সময় পর পাবো। আজকে সড়ক ফাঁকা রয়েছে। যানজটহীন স্বস্তিতে যাতায়াত করতে পারবো। আরেক যাত্রী নোমান ইসলাম বলেন, সায়েন্সল্যাব থেকে নারায়ণগঞ্জের চিটাগাং রোড যাবো। নীলাচলের দুটি গাড়ি পেয়েছি, দুটিতেই যাত্রী দিয়ে ভর্তি ছিল। যার কারণে এখনও দাঁড়িয়ে আছি সড়কে। শিগগিরই গাড়ি পাবো। ঈদের কারণে সড়কে গাড়ি অনেক কম রয়েছে।