ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের লিখিত কর্মপরিকল্পনা (রোডম্যাপ) আগামী জুলাইয় মাসের মধ্যে প্রকাশ করা করবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। জাতীয় নির্বাচন নিয়ে আগস্ট-সেপ্টম্বরের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে। আগামী ডিসেম্বরে নির্বাচনের লক্ষ্য সামনে রেখে এ কর্মপরিকল্পনা করা হচ্ছে। গতকাল বুধবার আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে নিজ দপ্তরে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার এসব তথ্য জানান।
চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা জানিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইসি বলে আসছে, সরকারঘোষিত এই সময়সীমা অনুযায়ী ‘আর্লিয়েস্ট টাইম’ বা ডিসেম্বরকে ধরে তারা নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাছাড়া মে-জুন মাসে বর্ষার কারণে নির্বাচনি কাজে ব্যাঘাত ঘটে। এই জন্য ডিসেম্বরকে টার্গেট করে অগ্রসর হচ্ছে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটি।
নির্বাচনের প্রস্তুতির বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নির্বাচন কমিশনার আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, বর্তমান ইসি দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে একটি নিজস্ব কর্মপরিকল্পনা ধরে এগোচ্ছে। সে কর্মপরিকল্পনার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে আসনের প্রশাসনিক বিন্যাসের তথ্য, ভোটার তালিকার তথ্য সংগ্রহ করে নিবন্ধন প্রক্রিয়া একটি পর্যায়ে আনা হয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে প্রাক-প্রস্তুতিমূলক কাজ মোটামুটিভাবে শেষ হয়ে যাবে। ইসি আশা করছে, আগামী জুন-জুলাইয়ের দিকে মুদ্রিত কর্মপরিকল্পনা, যেটি নির্বাচনের আগে ইসি প্রকাশ করে, সেটা ছাপা হবে।
ডিসেম্বরকে ঘিরেই নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, সরকারঘোষিত সময়সীমা ঘিরেই তারা এগোচ্ছেন। সেটি হচ্ছে ডিসেম্বর। তপশিল ঘোষণার আগ পর্যন্ত ভোটার হওয়ার সুযোগ রাখা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমরা চাচ্ছি যেন তপশিল ঘোষণার আগেও যাদের বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হবে, তারা যেন ভোট দিতে পারে। এজন্য ভোটার নিবন্ধন আইনে সংশোধনী আনার কথা ভাবা হচ্ছে।
বর্তমান যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অনেক পুলিশ এখনো কাজে যোগ দেয়নি বলা হচ্ছে, এই অবস্থায় সরকার ঘোষিত সময়ের মধ্যে কমিশন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে কী? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা বিভিন্ন জেলা পরিদর্শন করেছি ভোটার তালিকা হালনাগাদের বিষয়ে পুলিশ সুপার, নির্বাচন কর্মকর্তা ও নির্বাচন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা তো এক কথায় বলেছে যে, রমজান মাসে আমাদের যে পারফরম্যান্স এটি আমরা আরও ইমপ্রুভমেন্ট করার চেষ্টা করছি। এটি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমরা নির্বাচন করতে কোনো বাধা মনে করি না। বাস্তবেও আমরা রমজান মাসে যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বা অতীতের তুলনায় একটা তুলনামূলক পর্যালোচনা করি, তাহলে আমি মনে করি, ধারাবাহিকভাবে তা ইম্প্রুভ হচ্ছে। ছয়-আট মাস সময় আমরা যদি হাতে পাই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি আরও ভালো হবে বলে আমরা মনে করি। তারপরও আমরা ওদের সঙ্গে বসব, বিভিন্ন এজেন্সির সঙ্গে থেকে আমরা তথ্য নেব।
চিহ্নিত অনেক সন্ত্রাসী জামিন পেয়েছে, নির্বাচনের আগে তাদের জামিনের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি— নির্বাচনের আগে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের প্রশ্নে যা যা পদক্ষেপ নেওয়ার সবই নেব।
নিবন্ধন পাওয়া নতুন দল নিয়েই সংলাপ আয়োজনের পরিকল্পনার কথা জানিয়ে এ নির্বাচন কমিশনার বলেন, সরকার ঘোষিত ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এক্ষেত্রে আমাদের হাতে সময় কম। আগামী আগস্ট-সেপ্টেম্বরে রাজনৈতিক দলসহ বিভিন্ন অংশীজনের সঙ্গে সংলাপ করব। তবে আমরা এটিকে সংলাপ বলছি না, মতবিনিময় করব। এ ক্ষেত্রে নতুন দলগুলোর নিবন্ধন কার্যক্রম যদি সম্পন্ন না
হয়, তবে তারা তো সংলাপে অংশ নিতে পারবে না। আমরা চাই, নতুন দল যারা নিবন্ধন পাবে তাদের নিয়েই সংলাপের আয়োজন করতে। তিনি জানান, এ পর্যন্ত তিনটি দল সময় বাড়ানোর আবেদন করেছে। তবে সময় বাড়ানোর বিষয়ে এখনো ইসি কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি।