রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ছয়টি আবাসিক হল থেকে পোড়া অবস্থায় পবিত্র কোরআন মাজিদ উদ্ধার করা হয়েছে। আজ রবিবার একে একে হলগুলো থেকে পোড়া কোরআন পাওয়ার খবর আসে। এতে ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
কোরআন পোড়ানোর ঘটনায় জড়তিদের গ্রেপ্তার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন শিক্ষার্থী ও ছাত্রসংগঠনের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান, সৈয়দ আমীর আলী, শহীদ হবিবুর রহমান, মতিহার ও মাদার বখ্শ, শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হল থেকে পোড়ানো কোরআন উদ্ধার করা হয়েছে।
হলের আবাসিক ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহীদ জিয়াউর রহমান হলের মসজিদে ফজরের নামাজ আদায় করার পর প্রতিদিনের মতো বুক সেলফ থেকে কোরআন নিয়ে তেলাওয়াত করতে গিয়ে ছাত্ররা দেখেন, দুটি কোরআন মাজিদের প্রথম দিকের দুটি সূরা এবং শেষের দিকের দুটি সূরা পোড়ানো। কোরআন দুটির হার্ড কভারসহ প্রথমে ও শেষের কিছু পৃষ্ঠা এবং মাঝখানের ৭০ শতাংশ মতো পৃষ্ঠা অক্ষত রয়েছে।
এ ছাড়া হলের তৃতীয় ব্লকের প্রথম তলার সিঁড়ি বরাবর এবং দ্বিতীয় ব্লকের ৪৩৪ নম্বর কক্ষের সামনের দেয়ালে পদ্মফুলের ছবি আকানো দেখা গেছে। পদ্মফুল ইসকনের প্রতীক এবং ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) নির্বাচনী প্রতীক। তাছাড়া ওই কক্ষের জানালায় ইসকন ইয়ুথ ফেস্টিভালের লিফলেট সাটানো দেখা গেছে। তবে কক্ষটি তালাবদ্ধ থাকায় কারও বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
অপরদিকে সৈয়দ আমীর আলী হলে একটি কোরআনের প্রথম দুই-তিন পারার মতো পুড়িয়ে হলের মুক্তমঞ্চে রাখা ছিল। সকালে সেটা দেখতে পান শিক্ষার্থীরা।
দুপুর ১২টার দিকে শহীদ জিয়াউর রহমান ও সৈয়দ আমীর আলী হলে কোরআন পোড়ানোর খবর ছড়িয়ে পড়ার পর ক্যাম্পাসে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। পরে শহীদ হবিবুর রহমান, মতিহার, মাদার বখ্শ ও শের-ই-বাংলা ফজলুল হক হলের মসজিদ থেকে পোড়া কোরআন পাওয়া যায়।
শহীদ হবিবুর রহমান ও মতিহার হলের আবাসিক ছাত্ররা জানান, অন্যান্য হলে কোরআন পোড়ানোর খবর শুনে শহীদ হবিবুর রহমান হলের মসজিদের বুকসেলফে খোঁজ নিতে যান মসজিদের খাদেম মজিবুল ইসলাম। সেখান থেকে তিনি একটি পোড়ানো কোরআন উদ্ধার করেন। তবে কোরআনটি সম্পূর্ণ পুড়ে যায়নি। আর মতিহার হলের প্রথম ব্লকের ছাদে কাগজের ছাই দেখতে পেয়েছেন শিক্ষার্থীরা। ছাইয়ের পাশেই কোরআন শরীফের কয়েকটি ছেড়া পাতা পড়ে ছিল।
শিক্ষার্থীরা বলছেন, একসঙ্গে কয়েকটি হলে কোরআন পোড়ানোর এই ঘটনা দেখে মনে হচ্ছে, কোনো গোষ্ঠী ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এটা করেছে। বিষয়টা অনেক হৃদয়বিদারক। এটি উসকানিমূলক ঘটনা হতে পারে। কোনো একটা গোষ্ঠী ক্যাম্পাসে দাঙ্গা বাঁধানো বা ফ্যাসাদ তৈরি করার চেষ্টা করছে। তারা চাচ্ছে যে, একটা অশান্তি বা অরাজকতা তৈরি হোক। তদন্ত সাপেক্ষে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি তাদের।
এ বিষয়ে দুপুর ১টার দিকে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করেছে রাজশাজী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সেখানে শিক্ষার্থীদের শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বলেন, ‘বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক। কোরআনের অবস্থান প্রত্যেক মুসলমানের কাছে অনেক ওপরে। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আমরা একটা তদন্ত কমিটি গঠন করব। পাশাপাশি হল প্রশাসন থানায় অভিযোগ জানাবেন। জড়িতদের খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করার চেষ্টা করব আমরা। তবে শিক্ষার্থীদের প্রতি আমরা বিশেষ আহ্বান জানাব, তারা যেন কোনো উসকানির ফাঁদে পা না দেন।’
তদন্ত কমিটি গঠন:
এই ঘটনা তদন্তে ৯ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক মোহা. ফরিদ উদ্দীন খানের সভাপতিত্বে এই কমিটিকে ৩ কার্যদিবসের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন ও ৭ কার্যদিবসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটি গঠনের আগে উপাচার্য শৃঙ্খলা উপকমিটির সঙ্গে এক জরুরি সভায় ঘটনা সম্পর্কে আলোচনা করেন।
উত্তাল ক্যাম্পাস:
কোরআন পোড়ানোর খবরে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবির এবং সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আজ বিকেল ৩টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
জড়িতদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনকারীরা। মানববন্ধনে রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সেক্রেটারি মুজাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘কাল রাতে গভীর দুঃখের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম, বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় স্পন্দন আল-কোরআনকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আজকে এখানে এসে জানতে পারলাম, আরও তিন দিন আগেও নাকি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদেও এরকম ঘটনা ঘটেছিল। আপনারা গভীরভাবে লক্ষ্য করলে দেখবেন, গত ৫ তারিখের পরে যারা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে, তারাই এই কাজ করেছে। আজ এখান থেকে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিলাম, এর ভিতরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে তাদেরকে খুঁজে বের করতে হবে।’
আপনার মতামত লিখুন :