জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, ঘাটতি মোকাবেলার জন্য দেশটিতে যে জরুরিকালীন গ্যাস পরিকল্পনা রয়েছে তা সক্রিয় করতে ‘সতর্ক সঙ্কেত’ জারি করেছে দেশটি। রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণকে ঘিরে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও রাশিয়ার মধ্যে যে অচলাবস্থা চলছে তার সবশেষ পর্যায়ে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে তৈরি হয়েছে সঙ্কট।
জার্মানির অর্থ মন্ত্রী রবার্ট হাবেক বলেছেন ইইউর আরোপ করা নিষেধাজ্ঞার পাল্টা জবাব দিতে রাশিয়া গ্যাসকে "অস্ত্র" হিসাবে ব্যবহার করছে। "আমাদের চোখ বন্ধ করে থাকার মানে হয় না। গ্যাস সরবরাহ কেটে দেওয়াটা পরিষ্কার আমাদের ওপর [রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির] পুতিনের হামলা," বলেন মি. হাবেক। তিনি আরও বলেন যে জার্মানিকে এখন গ্যাসের ব্যবহার কমাতে হবে।
"স্পষ্টতই পুতিনের কৌশল হল একটা নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করা, মূল্য বৃদ্ধির দিকে ঠেলে দেওয়া এবং সমাজে একটা বিভক্তি সৃষ্টি করা," তিনি বলেন। "আর আমরা এর বিরুদ্ধেই লড়াই করছি।" হাবেক বলেছেন তিনি "আশা করছেন কখনই" জার্মানির শিল্পখাতে গ্যাস রেশন করার প্রয়োজন দেখা দেবে না, তবে তিনি বলেছেন: "অবশ্যই এই সম্ভাবনা নাকচ করা যাচ্ছে না।"
জার্মানিতে গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হলে বা গ্যাসের চাহিদা খুব বেড়ে গেলে তা মোকাবেলার জন্য দেশটিতে তিন স্তরের একটি আপদকালীন পরিকল্পনা রয়েছে। জার্মানি এখন সেই পরিকল্পনার দ্বিতীয় স্তর কার্যকর করেছে। গ্যাস মজুদ করার কেন্দ্রগুলোতে গ্যাস ভর্তি করার প্রচেষ্টার জন্য জার্মান সরকার এখন ১৫ বিলিয়ন ইউরো (১৩ বিলিয়ন পাউন্ড) ঋণ দেবে।
জার্মানি এখন শিল্প খাতগুলোর কাছে গ্যাস নিলামে বিক্রি শুরু করবে যাতে বড় বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কম গ্যাস ব্যবহার করতে উদ্যোগী হয়। দেশটিতে এই পরিকল্পনার দ্বিতীয় স্তর কার্যকর হওয়ার অর্থ হল সরবরাহকারী এবং গ্যাস নেটওয়ার্কের সাথে জড়িতেদের ওপর চাপ বৃদ্ধি করা। এর লক্ষ্য হল সরবরাহে বিঘ্ন এড়ানোর জন্য ভারসাম্য বজায় রাখতে গ্যাসের বিকল্প উৎস খুঁজে বের করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া।
তবে, এরপরেও জার্মানি এখনও গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বোঝা ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দেবার পদক্ষেপ নেয়নি। যদিও পরিকল্পনার দ্বিতীয় স্তরে সেটা করার একটা সম্ভাবনাও রয়েছে। জরুরিকালীন পরিকল্পনার প্রথম স্তরে গ্যাস কোম্পানিগুলোকে সরবরাহ চালু রাখার নিশ্চয়তা দিতে হয়েছে। গ্যাস সরবরাহ নেটওয়ার্কের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের প্রতিদিন অন্তত একবার অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়কে পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত রাখতে হয়েছে এবং বিদ্যুতের গ্রিড যারা পরিচালনা করে তাদের গ্রিডে বিদ্যুত স্থিতিশীল রাখার নিশ্চয়তা দিতে হয়েছে।
জার্মানির অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে পরিস্থিতি উদ্বেগজনক। তারা বলছে নর্ড স্ট্রিম পাইপলাইন দিয়ে এখন স্বাভাবিক মাত্রার মাত্র ৪০ শতাংশ গ্যাস আসছে এবং এই মাত্রা অব্যাহত থাকলে আগামি শীতে প্রয়োজনীয় মজুদের ৯০ শতাংশ নিশ্চিত করতে জার্মানিকে বেগ পেতে হবে। সরবরাহে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ঘাটতি দেখা দিলে এবং বাজারের চাহিদা মেটানোর জন্য যথেষ্ট গ্যাস না থাকলে, জরুরি পরিকল্পনার তৃতীয় স্তরে রাষ্ট্রকে হস্তক্ষেপ করতে হবে। এর অর্থ হবে সরবরাহ রেশন করে দেওয়া। তৃতীয় স্তরে, প্রথমে শিল্প খাতে সরবরাহ সীমিত করা হবে। কিন্তু গৃহস্থালি ও হাসপাতালের মত গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ অব্যাহত রাখা হবে।
রাশিয়া গ্যাসের সরবরাহ কমিয়ে দেবার প্রভাব এখন পড়েছে ইউরোপের বারোটি দেশে - বৃহস্পতিবার এ তথ্য জানিয়েছেন ইইউ-র পরিবেশ নীতি বিষয়ক প্রধান ফ্র্যান্স টিমারম্যান্স। রাশিয়া গত সপ্তাহে যন্ত্রপাতির সমস্যা হচ্ছে এই যুক্তি দিয়ে নর্ড স্ট্রিম-১ পাইপলাইনের মাধ্যমে তাদের গ্যাস সরবরাহ সক্ষমতা ৪০ শতাংশ কমিয়ে দেয়, যার প্রভাব পড়েছে জার্মানিতে।
গ্যাস কেনার অর্থ পরিশোধের জন্য রাশিয়ার নতুন পদ্ধতি প্রত্যাখান করার কারণে রাশিয়া পোল্যান্ড, বুলগেরিয়া, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক এবং ফিনল্যান্ডে গ্যাস সরবরাহ রাশিয়া ইতোমধ্যেই বন্ধ করে দিয়েছে। ইনভেসটেক নামে তেল ও গ্যাস বিষয়ক গবেষণা সংস্থার প্রধান নাথান পাইপার বলেছেন রাশিয়া ইউরোপের দেশগুলোতে গ্যাসের সরবরাহ সীমিত করা অব্যাহত রাখাটা "উদ্বেগজনক"। "পরবর্তীতে কী ঘটতে পারে তা এখন নিশ্চিত করে কিছুই বলা যাচ্ছে না," তিনি বলছেন। "রাশিয়া যে গ্যাসের নির্ভরযোগ্য সরবরাহকারী এমন কথা এখন আর জোর দিয়ে বলা যাবে না।"
পাইপার বলছেন গ্যাসের সরবরাহ গ্রীষ্মের মাসগুলোতে বিঘ্নিত হলে সেটা "ততখানি উদ্বেগের নয়", কিন্তু তিনি বলছেন শীতের সময় পরিস্থিতি সঙ্কটজনক হয়ে উঠতে পারে এমন আশংকা আছে, কারণ সেসময় ঘরবাড়ি গরম রাখার জন্য গ্যাসের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। "এখন জার্মানিকে জরুরিকালীন ব্যবস্থার তৃতীয় স্তর কার্যকর করতে হয় কিনা সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকতে হবে। কিন্তু শীত মরশুমে গ্যাসের দাম বেড়ে গেলে শিল্প খাতগুলো চাহিদা কমাতে বা নিজেরাই রেশন ব্যবস্থা চালু করতে চাইবে এমন সম্ভাবনা খুবই বেশি, কারণ মজুদ গ্যাস ছেড়ে দেয়া তখন অর্থকরী হবে না।" সূত্র: বিবিসি।