শীর্ষ সন্ত্রাসী, দাগী ও দুর্ধর্ষ জঙ্গি দমনে এলিট ফোর্স হিসেবে গঠন করা হয়েছিল র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। ২০০৪ সালে গঠিত পুলিশের বিশেষায়িত এই বাহিনীর ভালো কাজের পাশাপাশি রয়েছে নানা সমালোচনাও। বিশেষ করে নারায়ণগঞ্জের সাত খুন, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে বিএনপি-জামায়াত নেতাকর্মীদের গুমের পর আয়নাঘরে অথবা র্যাবের গুমঘরে বছরের পর বছর আটকে রাখা এবং বিভিন্ন মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কর্মকাণ্ডে এই সংস্থা জড়িত থাকায় সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকারকর্মীদের মধ্যে নানা প্রশ্ন উঠেছে।
আলোচনা আছে এসব ঘটনার পর র্যাব বিলুপ্ত করে নতুন করে বাহিনী তৈরি করা হবে না কি সংস্কার করে নতুনভাবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তাদের নিযুক্ত করা হবে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার তথা শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পর গুমের বিষয়টি সামনে আসে। এরপর অন্তর্বর্তী সরকার গুম নিয়ে একটি কমিশন গঠন করা হয়।
গত মঙ্গলবার দুপুরে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনের সদস্যরা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের গত দেড় দশকে মানুষকে তুলে নিয়ে গুমের ঘটনায় এক হাজার ৬০০টি অভিযোগ জমা পড়েছে গুম-সংক্রান্ত তদন্ত কমিশনে। এর মধ্যে ৪০০ অভিযোগ খতিয়ে দেখছে কমিশন। এ কাজ করতে গিয়ে জোরপূর্বক মানুষকে তুলে নিয়ে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হতো, এমন আটটি গোপন বন্দিশালার সন্ধান পেয়েছে তারা। কমিশনের ভাষ্যমতে, র্যাব, ডিজিএফআই, ডিবি, সিটিটিসি, সিআইডি, পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা এসব গুমের ঘটনায় জড়িত।
কমিশনের সদস্য সাজ্জাদ হোসেন বলেন, যে ৪০০টি ঘটনা বিশ্লেষণ করা হয়েছে, সেখানে ১৭২টি ঘটনায় র্যাবের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।
সংবাদ সম্মেলনে কমিশনের সভাপতি বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময়কার অভিযোগগুলো তাদের কাছে এসেছে। এখন পর্যন্ত এক হাজার ৬০০-এর বেশি অভিযোগ পেয়েছেন তারা। ভুক্তভোগী ও তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে এ অভিযোগগুলো দেয়া হয়েছে। তারা এখন পর্যন্ত ১৪০ জন অভিযোগকারীর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক এবং সমাজ ও অপরাধ বিশেষজ্ঞ ড. তৌহিদুল হক নয়া দিগন্তকে বলেন, বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক করা এবং বিভিন্ন ধরনের অপরাধে যারা শীর্ষে অবস্থান করেছে, অতীতে তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখা এবং মাদকসহ দেশের অভ্যন্তরীণ আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখার প্রশ্নে র্যাবের বেশ কিছু ইতিবাচক ভূমিকা রয়েছে। আমাদের সার্বভৌমত্ব ও অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা মানুষের আদর্শিক চর্চায় ভিন্নতা, দেশের অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিতে কোনোরূপ বিশৃঙ্খলা তৈরি করা প্রতিরোধের ক্ষেত্রেও র্যাবের ভূমিকা রয়েছে।
তিনি বলেন, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণে রাখা, গ্রেফতার করে আইনের মুখোমুখি করা, বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনার মধ্য দিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে র্যাবের ইতিবাচক বহু উদাহরণ রয়েছে। কিন্তু একটি বাহিনী বিতর্কিত, সমালোচিত হওয়ার যে দায়, সেটি শুধু বাহিনীর একক দায় নয়। বরং যে বা যারা সরকারে থাকেন, দায়িত্বে থাকেন তারা কিভাবে বাহিনীটিকে পরিচালিত করেছেন তার ওপর নির্ভর করে একটি বাহিনীর মানুষের কাছে তার প্রশংসা বা সুনামের অবস্থানে অবস্থান করবে, নাকি সেটি সমালচনা আলোচনার জন্ম দিবে।
তিনি আরো বলেন, র্যাবের প্রসঙ্গে গুমের প্রসঙ্গ বা বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ, এসব কাজ করতে গিয়ে আর্থিক যে লেনদেনের অভিযোগ, রাজনৈতিক বা প্রভাবশালী ব্যক্তির দখল বাণিজ্যের শক্তি হিসেবে কাজ করার অভিযোগগুলো আছে। এখন প্রশ্ন হলো, এই অভিযোগগুলো বিভিন্ন সময়ে এটাও লক্ষ্য করা যায় যে, ওই অভিযোগগুলো বিভিন্নভাবে কেউ কেউ প্রভাবিত হয়েও এসব অভিযোগ দিয়ে থাকেন। এই অভিযোগগুলোর সত্যতা যাচাই করার জন্য একটি নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন।
যে তদন্ত কোনোভাবে প্রভাবিত হবে না। সত্যিকার অর্থে র্যাবের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগীরা যে অভিযোগগুলো করছেন বাস্তব অর্থে এর নিরীক্ষা প্রয়োজন। তার ভিত্তিতে র্যাবকে একটি বিধির মধ্যে রেখে বাস্তবিক অর্থে আমাদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার প্রশ্নে যে বিশেষ পদক্ষেপগুলো র্যাবের মাধ্যমে পরিচালনা করা সম্ভব বা উচিত সেই প্রেক্ষাপটগুলোকে কিভাবে পরিকল্পনামাফিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় সেইগুলো কিন্তু থাকা প্রয়োজন। আমাদের এখানে যে অভিযোগগুলো আছে, অভিযোগের ভিত্তিতে কোনো কিছু বন্ধ করে দেয়াটা সমাধান নয়। বরং অভিযোগগুলো যাতে না আসে, আইনশৃঙ্খলা স্বাভাবিক রাখতে র্যাবের ভূমিকাকে আরো বেশি জোরালো করা এবং যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, সেই অভিযোগ তদন্ত সাপেক্ষে প্রমাণিত হলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
সংস্কারের মধ্য দিয়ে র্যাবের কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মতো বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত এবং চর্চা করার সুযোগ এবং সেই প্রেক্ষাপট বা পরিস্থিতি তৈরি করতে পারলে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ক্ষেত্রে অথবা মানুষের মত প্রকাশের যে অধিকার কিংবা স্বাভাবিক জীবন যাপনের নিশ্চয়তার যে অধিকার কিংবা অপরাধীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে যে ভূমিকা এই প্রসঙ্গগুলোতে কিন্তু র্যাব ভালো কাজ করার উদাহরণ রেখেছে। তো সংস্কার করে কাজের গতিকে আরো বেশি ত্বরান্বিত করা সম্ভব। আর অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিলে র্যাব এই সমালোচনা কিংবা বিতর্কিত অবস্থান থেকে সে বেরিয়ে এসে ইতিবাচকভাবে ভূমিকা পালন করার সুযোগ তৈরি হবে।
সাবেক পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, র্যাবকে বিলুপ্ত বা সংস্কার করবে তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক দলের বিষয়। তিনি বলেন, গুম বা অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড করে থাকলে র্যাবকে অবশ্যই সংস্কার করে তাদের কাজের গতি বাড়াতে হবে। কারণ একটি সংস্থা হুট করেই বিলুপ্ত করা যায় না। যদি বাহিনীতে ক্যান্সার থাকে তাহলে অবশ্যই অপারেশনের মাধ্যমে ওই অংশ কেটে ফেলতে হবে।
২০০৪ সালে র্যাব তৈরি করা হয়েছিল এলিট ফোর্স হিসেবে। এখন এই বাহিনী নিয়ে নানা সমালোচনা রয়েছে। তিনি মনে করেন, র্যাবের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল করতে হলে সরকারকে সার্বক্ষণিক নজরদারির মধ্যে রাখতে হবে। যাতে করে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটাতে না পারে।
২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক এবং সিজিএসের উপদেষ্টা বোর্ডের সদস্য আলী রীয়াজের নেতৃত্বে সিজিএসের কয়েকজন গবেষক গবেষণায় অংশ নেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনে গুমের মতো গুরুতর পরিণতি বোঝার জন্য এ গবেষণা করা হয়েছে বলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের (সিজিএস) পক্ষ থেকে জানানো হয়, ২০১৯ থেকে ২০২১ সালে সবচেয়ে গুমের ঘটনা ঘটেছে। ২০১৯ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গুমের ঘটনাগুলোয় র্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ সবচেয়ে বেশি। ৭১টি গুমের ঘটনা পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২১টি অভিযোগ উঠেছে র্যাবের বিরুদ্ধে, যা শতকরা হারে ৪০ দশমিক ৩৮। পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে ১৬টি ঘটনায়, যা শতকরা হার প্রায় ৩১। ৫২টি গুমের ঘটনায় সুস্পষ্টভাবে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার অভিযোগ তোলা হয়েছে।
গবেষণায় বলা হয়েছে, ৬৫ জনের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ৫ জনের লাশ পাওয়া গেছে। ২৩ জন ফিরে এসেছেন।
গবেষণায় পাওয়া তথ্য ওয়েবিনারে প্রকাশ করেন আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, গুমকে কেবল সংখ্যা দিয়ে বিচার করলে চলবে না, প্রতিটি গুমের ঘটনা একেকটি পরিবারকে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের দিকে ঠেলে দেয়।
আলী রীয়াজ জানান, গুমের ঘটনায় গণমাধ্যম ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো সব সময় পুরো তথ্য পায় না। এর অন্যতম কারণ, উঠিয়ে নেয়ার সময় আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যরা সাদাপোশাকেই আসেন। প্রতিটি ক্ষেত্রেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুমের ঘটনার তদন্ত হচ্ছে বলে দাবি করলেও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতি দেখা যায় না।
এ প্রসঙ্গে র্যাবের মহাপরিচালক এ কে এম শহিদুর রহমানের মোবাইলে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তবে একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দেশের উন্নয়নের পথে বাধা অস্থিতিশীল আইনশৃঙ্খলার পরিস্থিতিতে সমাজের প্রত্যেকটা মানুষ যখন অনিশ্চয়তার মধ্যে ভুগছিল তখন পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার একটি এলিট ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা গ্রহণ করে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন অধ্যাদেশ ১৯৭৯ এর সেকশন ৬ এর প্রদত্ত ক্ষমতাবলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, বিমানবাহিনী, নৌবাহিনী ও পুলিশসহ সর্বমোট ৮ বাহিনীর চৌকস জনবলের সমন্বয়ে গঠিত দেশের একমাত্র এলিট ফোর্স র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র্যাব ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ প্রথম আত্মপ্রকাশ করে।
বাংলাদেশ পুলিশের বিশেষায়িত এ বাহিনীটি নিজস্ব ম্যান্ডেটের আলোকে বাংলাদেশ আমার অহংকার এই মূলমন্ত্রকে ধারণ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার পদচারনা শুরু করে। ছয়টি ব্যাটালিয়ন নিয়ে যাত্রা শুরু হলেও সমগ্র দেশে এখন রয়েছে র্যাবের ১৫টি ব্যটালিয়ন। অতিরিক্তি আইজিপি পদমর্যাদার একজন মহাপরিচালকের অধীনে দু’জন অতিরিক্ত মহাপরিচালক এবং ৮টি উইংয়ের সমন্বয়ে পরিচালিত হচ্ছে সমগ্র র্যাব ফোর্সেস।
অপরাধ দমনের পাশাপাশি সব সময় মানবিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করে জনসাধারণের প্রশংসা পেয়েছে র্যাব ফোর্সেস। সম্প্রতি বৃহত্তম কুমিল্লা, ফেনী ও নোয়াখালী জেলায় স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় র্যাব ফোর্সেস হেলিকপ্টারের মাধ্যমে দুর্গম স্থানগুলোতে ত্রাণ পৌঁছে দেয়। বন্যার পানিতে আটকে পড়া গর্ভবতী নারী ও নবজাতক শিশুসহ তাদের মাকে উদ্ধার করে চিকিৎসার পর নিরাপদ স্থানে পৌঁছে দেয় র্যাব। এ ছাড়াও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ত্রাণসামগ্রী ও শীতবস্ত্র বিতরণের মাধ্যমে শীতার্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে র্যাব ফোর্সেস।
দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী র্যাব ফোর্সেসের উপর গত ১০ ডিসেম্বর ২০২১ তারিখ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট নিষেধাজ্ঞা আরোপ করলে র্যাব ফোর্সেসের সংস্কার প্রয়োজনীয়তা পরিলক্ষিত হয়। এ ছাড়াও র্যাবের সতন্ত্র কোনো আইন না থাকায় আভিযানিক কার্যক্রম পরিচালনার সময় বিভিন্ন আইনগত চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়। এসব চ্যালেঞ্জ দূর করে র্যাব ফোর্সেসের কার্যক্রমকে আরো গতিশীল, জবাবদিহিতামূলক এবং যুগপোযুগী করে র্যাব ফোর্সেস আইন ২০২৪ প্রণয়নসহ র্যাব ফোর্সেসের ইউনিফর্ম ও লোগো পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সংস্কার আনা সম্ভব। একই সাথে র্যাব ফোর্সেস বিভিন্ন স্টেক হোল্ডারদের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে র্যাব সদস্যদের মানবাধিকার বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
র্যাব ফোর্সেস বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্বনামধন্য সংস্থার মাধ্যমে র্যাব সদস্যদের মানবাধিকার বিষয়ে আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদানের ব্যাপারে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। বর্তমান সময়ে র্যাব সদস্যরা দায়িত্ব পালনকালীন বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তাদের ক্যাপাসিটি বিল্ডিং/সক্ষমতা বৃদ্ধি, কৌশলগত দক্ষতা উন্নয়নবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়াও র্যাব ফোর্সেস সদস্যদের জন্য আধুনিক ও যুগপোযুগী প্রশিক্ষণ পদ্ধতি প্রণয়ন করছে। তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনার জন্য আধুনিক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে। র্যাব ফোর্সেস এ আগত নতুন সদস্যদের র্যাব ট্রেনিং স্কুলের মাধ্যমে তাদের র্যাব ফোর্সেস এর কার্যক্রম ও প্রয়োজীয় আইনবিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হচ্ছে।
কোনো র্যাব সদস্য শৃঙ্খলাবহির্ভূত কার্যক্রমে জড়িত না হয় সে জন্য কাউন্টার ইন্টেলিজেন্স পদ্ধতি ব্যবহার করছি। এর পরও যেসব র্যাব সদস্য শৃঙ্খলাবহির্ভূত কাজে জড়িত হয় তাদের বিরুদ্ধে অভ্যন্তরীণ তদন্ত সেলের মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। র্যাব সূত্র জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় এক হাজার ৪৬০ জন গ্রেফতার করেছে তারা। এ ছাড়াও এই সময়ে ডাকাতি ৬১৭ জন, ছিনতাইকারী ৬৮০ জন, অপহরণ ৫০০ জন, প্রতারণা ২৪৮ জন ও মানব পাচারকারী ৩৫ জনকে গ্রেফতার করেছে।
চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধার ও আসামি গ্রেফতার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে ২৯৭ জনকে গ্রেফতার, অস্ত্র উদ্ধার করেছে ৫৩৬টি। তার মধ্যে ম্যাগাজিন ১১৮টি ও গোলাবারুদ রয়েছে ৯ হাজার ৭৯৩ রাউন্ড। র্যাব সূত্র আরো জানায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ অক্টেবর পর্যন্ত মাদক উদ্ধার ও গ্রেফতার পরিসংখ্যানে দেখা গেছে তিন হাজার ৯৯৬ জন মাদক কারবারি গ্রেফতার, হেরোইন জব্দ করা হয়েছে ৮ কেজি ৬৪ দশমিক ৪৪৯ গ্রাম। ইয়াবা জব্দ করা হয়েছে ৩৯ লাখ ৮৪ হাজার ৮৫৬ পিস, গাঁজা রয়েছে ২০ হাজার ১৬৩ কেজি, ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছে এক লাখ ৩৪ হাজার ৩৬০ পিস।
র্যাবের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে হত্যা ও ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার করা হয়েছে ছয় হাজার ৫৩১ আসামি। ডাকাতির ঘটনায়, তিন হাজার ৭৮৩ জন, ছিনতাইয়ের ঘটনায় ১১ হাজার ৮৫৫ জন, অপহরণের ঘটনায় পাঁচ হাজার ৬২৮ জন, প্রতারণার মামলায় সাত হাজার ৬৪১ জন, মানব পাচারের ঘটনায় এক হাজার ৮০২ জন গ্রেফতার। র্যাব প্রতিষ্ঠার পর গত ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত অস্ত্র উদ্ধার ও আসামি গ্রেফতারের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে ১৪ হাজার ৬৮৬ জন, অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে ২০ হাজার ২৮৬টি, ম্যাগাজিন চার হাজার ৬৭৬টি ও গোলাবারুদ দুই লাখ ৬৯ হাজার ৪৯৬ রাউন্ড।
এ ছাড়াও প্রতিষ্ঠা থেকে হতে অদ্যবধি মাদক উদ্ধারের পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, মাদক মামলায় আসামি গ্রেফতার করা হয়েছে এক লাখ ৫০ হাজার ৯৭ জনকে। মাদক জব্দ তালকায় রয়েছে হেরোইন এক হাজার ১২২ কেজি , ইয়াবা ৯ কোটি ৩০ লাখ ৩৪ হাজার ২০ পিস, গাঁজা রয়েছে এক লাখ ৯৩ হাজার ২৭০ কেজি। ফেনসিডিল রয়েছে ৪১ লাখ ৭৩ হাজার ২৬ পিস।