মো: ওমর সিয়ামঃ হেমন্তের শুরু থেকেই গ্রামীণ প্রকৃতিতে শীতের আগমনী বার্তা বইছে।শার্শা প্রকৃতিতেও সাড়া ফেলেছে হেমন্ত। আসন্ন শীতে খেজুরের রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেছেন গাছিরা। উপজেলার গ্রামে গ্রামে চলছে খেজুর গাছের পরিচর্যা।খেজুর গাছ প্রস্তুতের কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। গাছিরা জানান, গাছের সংখ্যা কমে গেলেও তাদের রস সংগ্রহের চেষ্টা থেমে নেই।
বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে, গ্রামে গ্রামে চলছে খেজুর গাছ প্রস্তুত করার কাজ। রাস্তার ধারে কিংবা জমির আইলে থাকা খেজুর গাছের মাথা পরিষ্কার করার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা।
ভোর হলেই বাইলধারা, দড়ি, গাছিদা হাতে ছুটছেন তারা। ধারালো দা দিয়ে নিপুণ হাতে খেজুর গাছের মাথা পরিষ্কার করছেন। মাথা পরিষ্কার করার পর গাছগুলোকে দুই সপ্তাহের বিশ্রাম দেওয়া হয়। সবমিলিয়ে শীতে খেজুর রস সংগ্রহ ও গুড় তৈরির মহাযজ্ঞকে ঘিরে কৃষকের চোখেমুখে স্বপ্নের হাতছানি।
উপজেলার খলশি গ্রামের গাছি ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘কার্তিক মাসের শুরু থেকে খেজুর গাছ তোলার (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) কাজ শুরু করি আমরা। এক সপ্তাহ পর থেকে খেজুরের রস পাওয়া যাবে।’
আশানুর রহমান বলেন, আমি প্রায় ২৫ বছর ধরে খেজুর গাছ কাটি। রস ও গুড় বিক্রি করে শীত মৌসুমে ভালো আয় হয়। এখন নতুন গাছি আর পাওয়া যায় না। কেউ এসব কাজে আসতে চান না। খেজুর গাছও কমছে, গাছিও হারিয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে যশোরের শার্শায় ঐতিহ্য খেজুর রস, গুড় ও গাছি সবই হারিয়ে যাবে।’
শার্শা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে,খেজুর গুড় ও রসের ঐতিহ্যের অন্যতম ভাগিদার যশোর । প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য ও জলবায়ুর কারণে শার্শা অঞ্চলে খেজুর গাছ ভালো জন্মে।শার্শায় খেজুর গুড় উৎপাদন করা হয়।
প্রাকৃতিক ও নিরাপদ উপায়ে গ্রামের গাছিরা এসব গুড় তৈরি করেন। কাঁচা রসের জনপ্রিয়তাও ব্যাপক। সারাদেশে খেজুর গুড়, রস ও পাটালির ব্যাপক চাহিদা। যশোর অঞ্চল থেকে এসব রস, গুড় ও পাটালি সারাদেশে সরবরাহ করা হয়।
লক্ষনপুর গ্রামের শওকত হোসেন বলেন খেজুর গুড়ের স্বাদ সবচেয়ে মিষ্টি। শীত এলেই শহর-গ্রামের মানুষ খেজুরের রস ও গুড় নিতে আমাদের কাছে আসে। এগুলো গ্রাম-গঞ্জের ঐতিহ্য। দেশের ঐতিহ্য। যেভাবেই হোক এগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হবে।
উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামের গৃহবধূ ছকিনা খাতুন বলেন,আগে অনেক রস হতো। এখন গাছ কম, রসও কম। খেজুরের রস জ্বালানোর বাইন (বড় চুলা) ঠিকঠাক করা হয়েছে। আমরা গ্রামের মানুষ। এসব করেই সংসার চালাতে হয়।খেজুরের রস, গুড় ও পাটালি বিক্রি করে বছরের এ সময়ে আমাদের একটু বাড়তি রোজগার হয়।
উপজেলা কৃষি অফিসার দীপক কুমার বলেন, সরকারের পক্ষে থেকে খেজুর রস সংগ্রহকারীদের কোন আর্থিক সহযোগিতা করা হচ্ছে না।মাঝে মধ্যে মাঠে গিয়ে রসের ভিতরে সাপ,ইঁদুর,বাদুড় প্রবেশ করতে না পারে নেট সহ বিভিন্ন কাপড় ব্যবহার করার পরামর্শ দেওয়া হয়।