সোহেল রানাঃ যশোরের শার্শায় মুখিকচু (সারকচু) সবজি চাষ লাভ জনক হওয়ার দিন দিন এই চাষে ঝুঁকে পড়ছেন চাষিরা । ভাল উৎপাদন ও স্থানীয় ভাবে সহজ লভ্য ছাড়া পাইকারি বাজার সৃষ্টি হওয়ায়, নিয়মিত কৃষি বিভাগ চাষিদের উৎসাহ ও পরার্মশ প্রদান করে, অল্প খরচে অধিক লাভ হওয়ার ফলে মুখিকচু চাষে একদিকে যেমন আগ্রহ বেড়েছে চাষিদের অন্যদিকে এই কাজের সাথে যুক্ত নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যদের বেড়েছে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা ।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে, চলতি বছর শার্শা উপজেলায় ১১০ হেক্টর জমিতে মুখিকচু চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহওয়া রোগ বালাই কম। অল্প খরচে অধিক লাভ জনক হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর মুখি কচুর চাষ বেশি হয়েছে। সব চেয়ে বেশি চাষ করা হয়েছে উপজেলার নিজামপুর ইউনিয়নে ৮০ হেক্টর জমিতে।
এর মধ্যে কেরালখালী-বাসাবাড়ি, বসন্তপুর-পাড়িয়ারঘোপ, এলাকাতেই ৫০ হেক্টর জমিতে মুখি কচুর চাষ হয়েছে। চাষিদের উপদানকৃত সবজি সহজে বিক্রি করতে কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় উপজেলার বাসাবাড়ি বাজারে বড় পাইকারি বাজার সৃষ্টি করা হয়েছে। এই বাজারে শার্শা উপজেলা ছাড়াও পার্শবর্র্তী ঝিকরগাছা উপজেলার চাষিরাও তাদের উৎপাদিত কচু পাইকারি বিক্রয় করে থাকেন। প্রতিদিন এই বাজারের ৩০-৩৫ টি আড়ৎ থেকে হাজার মণ কচু পাইকাররা ট্রাক-পিকআপ যোগে সিলেট, ঢাকা, বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, মাগুরা, যশোর ও সাতক্ষীরাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যান। সরেজমিন দেখা গেছে ক্রেতা পাইকারদের হাকডাকে মুখরিত বাসাবাড়ি পাইকার বাজার। বিভিন্ন স্থান থেকে কৃষকরা ভ্যান, ইজিবাইক, নছিমন যোগে কচু বাজারে নিয়ে আসছেন। সেই কচু পাইকাররা গাড়ি যোগে দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছেন ।
পাড়িয়ারঘোপ গ্রামের চাষি আব্দুল্লাহ বলেন, তিনি এবছর চার বিঘা জমিতে মুখিকচু চাষ করেছেন। প্রতিবিঘায় ৭০-৯০ মণ পর্যন্ত কচু উৎপাদন হচ্ছে । শুরুতে দাম বেশি পেলেও এখন কিছুটা কমে গেছে। তারপরও সকল খরচ বাদে তিনি বিঘা প্রতি ৩৫-৪০ হাজার টাকা লাভ করতে পারবেন। কেরালখালি ও বসন্তপুর গ্রামের আব্দুস সালাম, শ্রী সাধন সহ অনেক চাষি জানান কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহ ও পরামর্শ অনুযায়ী মুখিকচু চাষ করে তারা লাভবান হচ্ছেন । সেই সাথে এলাকার নিম্ন আয়ের পরিবারের সদস্যরা কচু উৎপাদনে পরিচর্যা, জমিতে কচু তোলা, পরিষ্কার ও শ্রমিকের কাজে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হওয়ায় অর্থ উপার্জন করে বেশ সাবলম্বী হচ্ছেন।
বাসাবাড়ি বাজারের হালিমা ট্রেডার্সের মালিক আড়ৎদার শফিকুল ইসলাম বলেন, এই অঞ্চলের চাষিদের উৎপাদিক সবজি মুখিকচু বাজারের ৩৫-৪০টি আড়ৎ থেকে পাইকাররা ক্রয় করে দেশের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে যাচ্ছেন। এখানকার কচু সিলেটে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে। তবে সেখানে বন্যার কারণে চাহিদা কমে গেছে। ফলে শুরুতে ৪৫-৫০ টাকা কেজি দরে কচু পাইকারি বিক্রি হলেও বর্তমানে ২৭-৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ফলে কৃষকরা দাম কিছুটা কম পাচ্ছেন ।
নিজামপুর ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অসিত কুমার মন্ডল সারসা বার্তাকে বলেন, মুখিকচু সবজি চাষে চাষিদের নিয়মিত পরামর্শ দেওয়া হয়। মালের গ্রেডিং বিষয়ে ধারণাসহ উৎপাদিত পণ্য সহজলভ্য ভাবে বিক্রয়ের জন্য উপজেলা বাসাবাড়ি বাজারে পাইকারি বাজার সৃষ্টি করণে কৃষি বিভাগ থেকে সহযোগিতা করা হয়েছে। ফলে বৃদ্ধি পাচ্ছে কচু চাষ। এই অঞ্চলের চাষিদের মুখিকচু চাষ সরাসরি দেখতে ইতিমধ্যে জেলার অন্য উপজেলার কৃষি কর্মকর্তাবৃন্দ সেখানকার চাষিদের সাথে নিয়ে চাষে উদ্বুদ্ধকরণ করতে সরেজমিন খেত প্রদর্শন করেছেন।