শাহবাগ ফের উত্তাল ঢেউ যেন সর্বত্র লেগেছে


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ৫, ২০২৪, ৬:১২ পূর্বাহ্ণ /
শাহবাগ ফের উত্তাল ঢেউ যেন সর্বত্র লেগেছে
  • কোটা বাতিলের দাবিতে দেশের সব মহাসড়ক ও ট্রেন অবরোধ-বিক্ষোভ রাজধানীর বাইরে কোটাবিরোধী বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ঢাকা টু আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা টু রাজশাহী মহাসড়ক, টাকা টু চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা টু ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ঢাকা টু সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা টু কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে। ময়মনসিংহে ট্রেন অবরোধ করে দীর্ঘ সময় আটকে রাখে। কোটাবিরোধী আন্দোলনে সারাদেশের শিক্ষার্থীরা একাট্টা। ৩ দিনের কর্মসূচি আজ শুক্রবার ছুটির অনলাইনে-অফলাইনে জনসংযোগ, শনিবার দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ থেকে বিক্ষোভ মিছিল এবং রোববার দেশের সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট

‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা প্রথা, বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ স্লোগানে স্লোগানে উত্তাল হয়ে উঠেছিল রাজধানী ঢাকার শাহবাগ এলাকা।

কোটা নিয়ে হাইকোর্টে রায় স্থগিত না হওয়ায় ক্ষোভে ফুঁসছে শিক্ষার্থীরা। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টিএসসি হয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেয়। শিক্ষার্থীদের অবরোধে শাহবাগ এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ও তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে জামায়াত নেতা কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে শাহবাগে যে গণ¯্রােত নেমেছিল, হাইকোর্টের রায় আপিল বিভাগে স্থগিত না হওয়ায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তেমনি স্রোত নেমেছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের প্রায় সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস উত্তাল হযে উঠে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে থাকার অঙ্গীকার করেন। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শাহবাগের পাশাপাশি ঢাকা টু আরিচা মহাসড়ক, ঢাকা টু রাজশাহী মহাসড়ক, টাকা টু চট্টগ্রাম মহাসড়ক, ঢাকা টু ময়মনসিংহ মহাসড়ক, ঢাকা টু সিলেট মহাসড়ক, ঢাকা টু কুয়াকাটা মহাসড়কসহ বিভিন্ন মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছে।

ময়মনসিংহ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ট্রেন অবরোধ করে দীর্ঘ সময় আটকে রাখে। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বলছেন, কোটা বাতিল মীমাংসিত ইস্যু। নতুন করে কোটা ফিরিয়ে আনা ছাত্রসমাজের সঙ্গে তামাশা। কোনোভাবেই বৈষম্যমূলক কোটা পদ্ধতি মেনে নেয়া হবে না। এর আগে কোটা বাতিলের আন্দোলনে যেতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি হলে শিক্ষার্থীদের বাধা দেয় ক্ষমতাসীন দলের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগের নেতারা। তারা শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি দেখায় এবং হুমকি দেয়। শিক্ষার্থীরা বাধা উপেক্ষা করে বের হয়ে শাহবাগে অবস্থান নেন। এ সময় হাজার হাজার শিক্ষার্থী হল থেকেই বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখাসহ চার দফা দাবিতে চতুর্থ দিনের মতো শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। ছয় ঘণ্টা অবস্থান ও বিক্ষোভ করার পর পর ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ মোড় ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের অন্যতম সংগঠক নাহিদ ইসলাম আগামী ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করে বলেন, শুক্রবার ছুটির দিনে অনলাইনে-অফলাইনে জনসংযোগ হবে। শনিবার বিকেল ৩টায় দেশের বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ থেকে মিছিল করা হবে। রোববার সকল কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন ও ছাত্র ধর্মঘট পালিত হবে।

শাহবাগ অবরোধ-ধর্মঘট ঘোষণা : দিনের ৬ ঘন্টা শাহবাগ ছিল বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের দখলে। ছাত্রলীগ ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যরা নানা চেষ্টা করেও শিক্ষার্থীদের শাহবাগ মোড় থেকে উঠাতে পারেনি। সকাল থেকেই ঝুমবৃষ্টি উপেক্ষা করে আন্দোলন চালিয়ে গেছে ঢাবি শিক্ষার্থীরা। অনেকেই সারাদিন না খেয়ে শাহবাগ মোড়ে অবস্থান করেছেন। শিক্ষার্থীরা বলছেন দাবি আদায়ের আগে তারা ক্লাসে ফিরবে না। এর আগে সকাল ১১টায় শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে অবস্থান করার পূর্বঘোষণা থাকালেও শিক্ষার্থীরা হল থেকে বের হতে ছাত্রলীগের বাধার সম্মুখীন হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস্টার দ্য সূর্যসেন হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল ও শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলসহ বিভিন্ন হলে ছাত্রলীগের সভাপতি সাদ্দাম হোসেন ও শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ তানভীর হাসান সৈকতের অনুসারীরা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে যেতে বাধা দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে।

অভিযোগ অনুযায়ী সকাল ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে নিজস্ব ব্যানার পেস্টুন নিয়ে স্লোগান দিতে দিতে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির উদ্দেশ্যে যাত্রা করলে হলের মূল ফটকে তালা দেয় ছাত্রলীগ। মাস্টার দ্য সূর্যসেন হলে তালা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া অন্যান্য হলের সামনে ছাত্রলীগের পদপ্রার্থীরা অবস্থান করায় প্রথম ও দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা ভয়ে বের পারছিলেন না। পরবর্তীতে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারীদের কিছু সংখ্যক শিক্ষার্থী বাইর থেকে মিছিল নিয়ে হলগুলোতে প্রবেশ করে এসব শিক্ষার্থীকে আন্দোলনে নিয়ে আসে। এসময় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের সাথে বাকবিতন্ডায়ও জড়ান শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগ অনুযায়ী শিক্ষার্থীদের হল থেকে বের হতে বাধাদানকারীদের মধ্যে ছিলেন সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহফুজুর রহমান, সহ-সভাপতি মনির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শাকিল হোসেন, রাকিব হোসেন, মুন্সী রাকিব হোসেন, তৌহিদুজ্জামান অভি, সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল্লাহ খান শৈশব, সাহিত্য সম্পাদক আরিফুর রহমান যুবরাজ, প্রচার সম্পাদক ফয়সালসহ চল্লিশ-পঞ্চাশজন নেতাকর্মী।
হলের গেটে কেন তালা দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে জানতে চাইলে সূর্যসেন হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক রাকিব হোসেন সাংবাদিকদের উদ্দেশ্য করে বলেন, তাদের (আন্দোলনকারী) বলে দিয়েন, ছাত্রলীগের থেকে বড় ভায়োলেন্সকারী আর কেউ নাই।

ছাত্রলীগের বাধা উপেক্ষা করেও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে হাজার হাজার শিক্ষার্থী সকাল ১১টা ১০ মিনিটে কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে জড়ো হয়। সেখান থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক অতিক্রম করে পৌনে ১২টায় শাহবাগ মোড় অবরোধ করেন।

বিক্ষোভ মিছিল ও অবরোধ কর্মসূচিতে ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‹মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা সুযোগের সমতা’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘একাত্তরের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘এক দফা এক দাবি এক, কোটা নট কাম ব্যাক’ প্রভৃতি স্লোগান দেয় শিক্ষার্থীরা। শাহবাগ মোড়ে অবস্থান নিয়ে ক্ষণে ক্ষণে বিদ্রোহী কবিতা, গান ও স্লোগানে মুখরিত করে আন্দোলনকারীরা। এসময় কোটাবিরোধী বিভিন্ন স্বরচিত গান ও কবিতাও আবৃত্তি করেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীরা পূর্বের ন্যয় সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলসহ ৪টি দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো- ১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ২. ১৮› এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। ৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। ৪. দূর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

শাহবাগ মোড় অবরোধের কারণে দীর্ঘ সময় আশেপাশের এলাকায় যান চলাচল স্থবির ছিল। শাহবাগ মোড় থেকে সায়েন্সল্যাব, ফার্মগেট ও পল্টনমুখী যানবাহনগুলোকে ভিন্ন রুট বেছে নিতে হয়েছে। পরে সন্ধ্যা ৬টায় শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।

ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ : প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল রাখার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। শুনানির দিন পেছানোয় তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন তারা। বৃহস্পতিবার প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে আপিল বেঞ্চ চেম্বার আদালতে হাইকোর্টের রায় বহাল রাখেন।

এতে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা দুপুর সাড়ে বারোটায় তাৎক্ষণিক একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরি থেকে শুরু হয়ে শহীদ মিনার হয়ে প্রধান ফটক ( ডেইরি গেইটে) গিয়ে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মাধ্যমে শেষ হয়। বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন কোটাবিরোধী স্লোগান দিতে থাকে এবং দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলনে থাকার ঘোষণা দেন। এছাড়া মিছিলের পরবর্তীতে শিক্ষার্থীরা ঘন্টাব্যাপী ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করার ঘোষণা দেন।

পরবর্তী কর্মসূচি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ৪৭ ব্যাচের শিক্ষার্থী আরিফ সোহেল বলেন, আদালত যেহেতু সময় বাড়িয়েছে তাই আমরা এখনো অনির্দিষ্ট সময়ের জন্য অবরোধে যাব না। স্বল্প সময়ের জন্য অবরোধ করবো। জনগনের জানমালের যাতে ক্ষতি না হয় সেদিকে খেয়াল রেখে আমরা অবস্থান কর্মসূচী করব।

ঢাকা-রাজশাহী মহাড়ক অবরোধ : প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা হাইকোর্ট কর্তৃক পুনর্বহালের আদেশসহ ৫৬ শতাংশ কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের হুমকি দেন তারা। এরই অংশ হিসেবে বৃষ্টি উপেক্ষা করে ক্যাম্পাসের মূল ফটক সংলগ্ন ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করে শিক্ষার্থীরা।

বৃহস্পতিবার সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে ছোট ছোট মিছিল নিয়ে সমবেত হয় শিক্ষার্থীরা। পরে মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসের মেইন গেটে অবস্থান নেন তারা। এসময় বিভিন্ন স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে চারটি দাবি তুলে ধরেন।

দাবিগুলো হলো- ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে; কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাকোটায় শূন্যপদ পূরণ করতে হবে; ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা ব্যবহার করতে পারবে। বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী নাজনিন ফাতেমা বলেন, আমরা এখানে এসেছি যাতে এই মুক্তিযোদ্ধা কোটা উঠে যায়। আমরা চাইনা কোটায় কেউ একটা যোগ্যতাসম্পন্ন জায়গায় যাক। এই জায়গায় যাওয়ার অধিকার শুধু মেধাবীদের। আমরা চাই মেধার যথাযথ ব্যবহার হোক।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী আমানুল্লাহ আমান বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ তৎপর ছিল, আছে এবং থাকবে। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারি চাকরিতে মেধাবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করার কোনো বিকল্প নেই। বৈষম্যমূলক কোটাপদ্ধতির সংস্কারের লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বদা সোচ্চার রয়েছে।সকাল ১০টা থেকে বেলা সাড়ে ১২টা পর্যন্ত চলমান কোটা রিরোধী এ আন্দোলনে এক হাজার শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন।

চট্টগ্রামে মহাসড়ক অবরোধ : চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়ক অবরোধ করে টানা চতুর্থ দিনের মতো আন্দোলন করেছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর ব্যানারে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে অবস্থান নেয় শিক্ষার্থীরা। পরে শহীদ মিনার চত্বর থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবন, কলা অনুষদ, বুদ্ধিজীবী চত্বর, কাটা পাহাড় ও জিরো পয়েন্ট মোড় হয়ে ১ নং গেইট সংলগ্ন চট্টগ্রাম-বান্দরবান মহাসড়কে গিয়ে শেষ হয়। দুপুর ১২ টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক অবরোধ করে অবস্থান করেন। এতে মহাসড়কের উভয় লেনে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হওয়ায় দুর্ভোগে পড়েন এই রাস্তায় যাতায়াতকারী যাত্রীরা।

বিক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীরা বলেন, টানা চতুর্থ দিনের মত কোটা বাতিলের দাবিতে আমাদের আন্দোলন চলছে। আমরা মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে নই। তাদের সম্মান সমসময় বজায় থাকবে। তাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য কোটা থাকতে পারে। কিন্তু এরপর তাদের নাতি-নাতনীদের জন্য কোটা রাখাটা অযৌক্তিক। সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল করে প্রকৃত মেধাবীদের নিয়োগ দিতে হবে এটাই আমাদের দাবি। আমাদের এই দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত পুরো দেশে শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলন চলবে।

ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী মোরশেদ আলম বলেন, বৈষম্য দূরকরণের জন্য আমাদের মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানিদের সাথে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছেন। দেশ প্রকৃতপক্ষে স্বাধীন হলেও মেধাবীদের মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। এজন্য আমরা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা এই আন্দোলন চালিয়ে যাব। দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রাসেল আহমেদ বলেন, আমরা রাষ্ট্রের কাছে অনুরোধ জানাই যেন কোটা পুনর্বহালের রায় পুনর্বিবেচনা করা। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কোটার বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে। পুরো বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা আমাদের সাথে আছে।

এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের ৪ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবিগুলো হলো: ১. ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকুরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে। ২. ২০১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকুরিতে (সকল গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে। ৩. সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে। ৪. দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

কুমিল্লা বিশ্বরোডে বিক্ষোভ : সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা পুনর্বহালের প্রতিবাদে এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুবি) শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১২টা থেকে এ অবরোধ কর্মসূচি পালিত হয়। এসময় মহসড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এর আগে সকাল সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বরে আবাসিক হল ও মেসের শিক্ষার্থীরা একত্রিত হয়। এরপর পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্বরোড অভিমুখে যাত্রা শুরু করলে তারা পুলিশি বাঁধার মুখে পড়েন। পরে জাদুঘর সংলগ্ন রাস্তা দিয়ে কোটবাড়ি বিশ্বরোডে অবস্থান নেন।

সরকারি চাকরিতে ২০১৮ সালের পরিপত্র বাতিল করে কোটাপদ্ধতি পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায়ের প্রতিবাদ জানিয়ে এ অবরোধ হয়। চাকরিতে মেধাভিত্তিক নিয়োগ বহাল রাখার দাবিতে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়’ শিরোনামের ব্যানারে এই কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা।

এসময় প্রায় চার-পাঁচশ শিক্ষার্থী নানা স্লোগান দিতে থাকেন। বিক্ষোভ কর্মসূচি ও সড়ক অবরোধের বিষয়ে লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী আবু রায়হান বলেন, কোটা ব্যবস্থা বাতিল না হলে আমরা আন্দোলন করে যাবো। ৭৫›এ বঙ্গবন্ধুকে যারা হত্যা করেছিলো তারা আজ সংসদে বসে আছে। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ তারা ধ্বংস করতে চায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৮ সালে সকল কোটা ব্যবস্থা উঠিয়ে দেন। তবে আজ কেন এই কোটা। সকল সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা উঠিয়ে দিতে হবে।

নৃবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাস দেখলে দেখা যাবে সংগ্রাম ছাড়া অধিকার পাওয়া যায় নি। তাই আজ আমাদের মহাসড়ক অবরোধ। মেধা দিয়ে যদি চাকরি না পায় তাহলে একটি স্বাধীন দেশে মৌলিক অধিকার কোথায়? পাকিস্তান আমলে বৈষম্যের কারণে আমরা রাজপথে নেমে স্বাধীনতা অর্জন করেছিলাম। আজও আমরা সেই বৈষম্যের শিকার।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী সোহাগ হোসেন বলেন, আজকে আমরা রাজপথে এসেছি কারণ হাইকোর্ট আদেশ দিয়েছে কোটা প্রথা পুনর্বহাল থাকবে। সর্বসাকুল্যে ৫৬ শতাংশ কোটা থাকবে। যদি এই কোটা বহাল থাকে তবে মেধাবী শিক্ষার্থীরা সুযোগ পাবে না। দেশে বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে। এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন। এবিষয়ে কুমিল্লা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. কামরান হোসেন বলেন, মহাসড়ক এক মিনিট অবরোধ হলেও সরকারের কাছে বার্তা চলে যায়। সেক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর এ দাবির বিষয়ে সরকার অবগত। মানুষের ভোগান্তি নিরসনে শিক্ষার্থীরা যেন স্থান ত্যাগ করেন। সে ব্যাপারে আমাদের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সাথে আলোচনা চলছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর (ভারপ্রাপ্ত) কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির সাথে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সম্পূর্ণ একমত। ঢাকা-চট্রগ্রাম মহাসড়ক বাংলাদেশের ব্যস্ততম মহাসড়ক। তাই প্রশাসন চেষ্টা করছে যেন দ্রুত তারা স্থান ত্যাগ করে।

কুষ্টিয়া-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ : সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ (কুষ্টিয়া-খুলনা) করে আন্দোলন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বিক্ষোভ মিছিল করে শিক্ষার্থীরা। পরবর্তীতে সেখান থেকে মিছিল নিয়ে কুষ্টিয়া-খুলনা প্রধান মহাসড়কে অবস্থান নেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। সেখানে প্রায় ২০ মিনিট অবস্থান নেন তারা।

মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘সারাবাংলায় খবর দে, কোটাপ্রথার কবর দে’, ‘মেধাবীদের কান্না, আর না আর না’সহ বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, আমারা কোটা পদ্ধতি বাতিল নয় এর সংস্কার চাই। সরকার কোটার নামে মেধাবী শিক্ষার্থীদের যে অবমূল্যায়ন করছে আমরা তার বাতিল চাই। এভাবে কোটা পদ্ধতি চালু থাকলে দেশের গুরুত্বপূর্ণ সব জায়গায় অমেধাবীদের দখলে চলে যাবে, বেড়ে যাবে দুর্নীতি। দেশ স্বাধীন হয়েছে বৈষম্য রোধ করতে কিন্তু কোটা পদ্ধতি সেই বৈষম্য সৃষ্টি করছে। আমরা এই বৈষম্য বন্ধের আন্দোলন করছি। তারা আরো বলেন, ২০১৮ সালে দেশে ৫৬ শতাংশ যে কোটা ব্যবস্থা ছিল সরকার তা সংস্কার না করে আন্দোলনের মুখে বাতিল করেন। বর্তমানে আবার সেই কোটায় ফিরেছে। আমরা তো কোটা পদ্বতি বাতিল নয় সংস্কার চাই। তাই হাইকোর্টের রায়ের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলতে চাই, এমন বৈষম্য বাতিল করুন আমাদের দাবি সমূহ গ্রহন করুন।

ময়মনসিংহে ট্রেন অবরোধ : সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে ময়মনসিংহে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বাকৃবি) দ্বিতীয় দিনের মতো আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা। দুপুর ১২টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে মুক্তমঞ্চে এসে শিক্ষার্থীরা সমবেত হন। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আবদুল জব্বার মোড়সংলগ্ন রেললাইনে ট্রেন অবরোধ করেন। দুই ঘণ্টা ট্রেন অবরোধ থাকার পর চলাচল স্বাভাবিক হয়।

গতকাল দুপুর ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কে আর মার্কেট পর্যন্ত গিয়ে আবার মুক্তমঞ্চের সামনে দিয়ে এসে আবদুল জব্বার মোড়ের দিকে যায়। ঢাকা থেকে জামালপুরগামী জামালপুর এক্সপ্রেস ট্রেনটি বেলা ১টা ১০ মিনিটে আবদুল জব্বার মোড়ে অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বেলা ৩টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি ছাড়া হলে চলাচল স্বাভাবিক হয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী প্রণব ঘোষ বলেন, ‘রায়ের শুনানি মূলতবি করা মানে হলো শিক্ষার্থীদের চোখে ধুলা দেওয়া। আমরা কোনো প্রকার ধোঁয়াশার মধ্যে থাকতে চাই না। কোটা বাতিলের আন্দোলন চলছে এবং কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত এই আন্দোলন চলবে।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী হাসিব বলেন, ‘আমার দাদা মুক্তিযোদ্ধা। মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সন্তান হওয়ার পরেও আমি চাই যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল হোক।’

বরিশাল-ঢাকা মহাসড়ক অবরোধ : চতুর্থ দিনের মতো বিক্ষোভ কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার সঙ্গে আলোচনা শেষে বিকেল সোয়া ৫টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন। প্রায় সোয়া ৫ ঘণ্টা অবরোধের কারণে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের দুপ্রান্ত অসংখ্য যাত্রী ও পণ্যবাহী যান আটকা পড়ে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে সীমাহীন কষ্ট পান হাজার হাজার যাত্রী।

দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে শিক্ষার্থীরা কোটাপদ্ধতি বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন। পরে তারা মূল ফটকের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করে সেখানে বিক্ষোভ করেন। এ সময় সেখানে বই পুড়িয়ে প্রতীকী প্রতিবাদ জানান তারা।

বিক্ষোভ সমাবেশে শিক্ষার্থীরা বলেন, ৫৬ শতাংশ কোটা কোনো দেশের স্বাভাবিক অবস্থা হতে পারে না। মেধাবীরা পরিশ্রম করে চাকরি পাবেন, কোটায় নয়। কোটাপ্রথা কখনোই জাতির কল্যাণ বয়ে আনবে না। এটা দেশের মেধাবীদের সঙ্গে একধরনের উপহাস। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন তারা।

আন্দোলনে অংশ নেওয়া সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জিহাদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত আমাদের সঙ্গে প্রহসন ছাড়া কিছু না। এই নাটকের অবসান না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাব।’ ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী তারেক রহমান বলেন, সরকারি চাকরিতে পুনরায় কোটাপদ্ধতি বহাল রাখা হয়েছে। সরকার তো মুক্তিযোদ্ধাদের সুযোগ-সুবিধা ও তাদের প্রাপ্য সম্মান দিচ্ছে। কিন্তু কোটা রেখে কেন? বাকিদের কেন অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে। যদি কোটা বাতিল না হয়, তাহলে আন্দোলন চলবে, কেউ ঘরে ফিরবে না।’

বরিশাল বন্দর থানার ওসি আবদুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান নিয়েছে। অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে, সে জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সর্বদা সজাগ। যানবাহন ও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।

খুলনা জিরো পয়েন্ট বিক্ষোভ : খুলনার জিরো পয়েন্ট এলাকা অবরোধ করে বিক্ষোভ করছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে এ অবরোধ শুরু হয়। বৃষ্টির কারণে সাড়ে ছয়টার দিকে অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শিক্ষার্থীরা। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে অবস্থিত জিরো পয়েন্টে ঢাকা, সাতক্ষীরা, যশোরসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে চারটি সড়ক এসে মিলিত হয়েছে। খুলনা নগরে প্রবেশের অন্যতম পথও সেটি। শিক্ষার্থীদের দুই ঘণ্টার অবরোধে চারটি সড়কেই যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চার সড়কেই যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা যায়।

আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, বৈষম্য থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। সেখানে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৯৫ শতাংশ কোটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। এতে যোগ্যতা থাকার পরও মেধাবী শিক্ষার্থীরা সরকারি চাকরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছেন। এ জন্য কোটা পুনর্বহালের রায় বাতিল চেয়ে তারা বলেন, কোটাপদ্ধতি যত দিন থাকবে, তত দিন তাদের আন্দোলন চলবে।

খুলনার হরিণটানা থানার ওসি মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, শিক্ষার্থীদের অবরোধের কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা সড়ক বন্ধ ছিল। এ জন্য চার পাশের সড়কে ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। সাড়ে ছয়টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিলে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।