চীনের চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকের অর্থনৈতিক তথ্য গতকাল (সোমবার) প্রকাশিত হয়েছে। ক্রমবর্ধমান বহিরাগত চাপ ও বেশি অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হওয়া সত্ত্বেও চীনা অর্থনীতি কষ্টার্জিত সাফল্য অর্জন করেছে: প্রথম তিন প্রান্তিকে জিডিপি ৫.২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সংখ্যা থেকে চীনা অর্থনীতির কোন বৈশিষ্ট্য দেখা যায়?
প্রথম হল অর্থনীতির ‘স্থিতিশীল’ কাঠামো আরও শক্তপোক্ত হয়েছে। চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার বিশ্বের প্রথম দিককার অর্থনীতির মধ্যে শীর্ষস্থান বজায় রেখেছে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের কিছু দিন আগে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হার ২০২৪ সালের ৩.৩ শতাংশ থেকে, ২০২৫ সালে ৩.২ শতাংশে কমবে। বিপরীতে শুধুমাত্র তৃতীয় প্রান্তিকেই চীনের জিডিপি ২০২৪ সালে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি দেশ জার্মানির মোট জিডিপিকে ছাড়িয়ে গেছে, চীনের অর্থনীতি বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে স্থিতিশীল ও নির্ভরযোগ্য উত্স হয়ে উঠেছে। আর চলতি বছরের প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের জিডিপি গত বছর ও তার আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে যথাক্রমে ০.২ ও ০.৪ শতাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, অর্থনীতির উন্নয়ন স্থিতিশীল ও প্রগতিশীল প্রবণতা বজায় রেখেছে।
স্থিতিশীলতার পাশাপাশি প্রগতিশীল প্রবণতা আরও স্পষ্ট। চলতি বছর থেকে চীন স্থানীয় অবস্থার বৈশিষ্ট্য অনুসারে নতুন মানের উত্পাদন শক্তি উন্নয়ন করে। প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের সরঞ্জাম উত্পাদন ও উচ্চ-প্রযুক্তি উত্পাদনের বাড়তি মূল্য নির্ধারিত আকারের চেয়ে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের চেয়ে যথাক্রমে ৩.৫ ও ৩.৪ শতাংশ বেশি হয়। বিশ্ব বৌদ্ধিক সম্পত্তি সংস্থার প্রকাশিত সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, ২০২৫ সালে চীনের উদ্ভাবন-সূচক প্রথমবারের মতো বিশ্বের শীর্ষ দশের মধ্যে স্থান পেয়েছে। একাধিক বৃহৎ আকারের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেলের উত্থান থেকে শুরু করে চালকবিহীন ড্রাইভিং দৈনন্দিন জীবনে আরও বেশি ব্যবহৃত হওয়া পর্যন্ত, ‘উদ্ভাবন শৃঙ্খল’ ও ‘শিল্প শৃঙ্খলের’ গভীর একীকরণ চীনা অর্থনীতিতে নতুন চালিকাশক্তি যুগিয়েছে এবং বিশ্বব্যাপী উদ্ভাবনকে ত্বরান্বিত করেছে।
আরও উল্লেখযোগ্য হলো, চীনা অর্থনীতির অসাধারণ স্থিতিস্থাপকতা। চলতি বছর বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ, ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য-যুদ্ধ সত্ত্বেও প্রথম তিন প্রান্তিকে চীনের পণ্য আমদানি ও রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, টানা ৮ প্রান্তিকে প্রবৃদ্ধি বজায় রেখেছে। চীনের রপ্তানি-পণ্য নতুন ও উচ্চমানের দিকে উন্নয়নের পাশাপাশি বৈদেশিক বাণিজ্য ‘বন্ধুদের বৃত্ত’ও প্রসারিত হচ্ছে। চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে চীন ১৬৬টি দেশ ও অঞ্চলের শীর্ষ তিন বাণিজ্য অংশীদার হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৪টি বেশি। ব্লুমবার্গের রিপোর্টে বলা হয়, সেপ্টেম্বরে চীনের রপ্তানি গত ৬ মাসের মধ্যে দ্রুততম প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যা অর্থনীতির শক্তিশালী স্থিতিস্থাপকতা প্রদর্শন করে।
চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীল উন্নয়নের পেছনে রয়েছে সরবরাহ, চাহিদা, একাধিক সুবিধার সমন্বিত সংযোগ এবং নীতির সমর্থন। চলতি বছর শুরু থেকে চীন আরও সক্রিয় ও কার্যকর সামষ্টিক অর্থনৈতিক নীতি বাস্তবায়ন করেছে। একটি ঐক্যবদ্ধ জাতীয় বাজার নির্মাণ থেকে পরিষেবা ভোগ সম্প্রসারণের জন্য পদক্ষেপ চালু করা পর্যন্ত, সামষ্টিক অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণের সমর্থন আরও জোরদার হয়েছে, যা চীনের অর্থনীতির সুস্থ উন্নয়নের জন্য দৃঢ় সমর্থন প্রদান করেছে।
এসব সংখ্যা কেবল স্বল্পমেয়াদী ফলাফলই নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদি প্রবণতাও প্রতিফলিত করে। চলতি বছর হল চতুর্দশ পাঁচশালা পরিকল্পনার শেষ বছর, ২০ অক্টোবর চীনা কমিউনিস্ট পার্টির ২০তম জাতীয় কেন্দ্রীয় কমিটির চতুর্থ পূর্ণাঙ্গ অধিবেশন বেইজিংয়ে শুরু হয়, যা আগামী পাঁচ বছরে চীনের উন্নয়নের জন্য শীর্ষ-পর্যায়ের কৌশলগত পরিকল্পনা করবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মন্তব্য করেছে, চীনের পঞ্চদশ পাঁচশালা পরিকল্পনা বৈশ্বিক অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। বিশ্ব আশা করে, চীন নীতিগত স্থিতিশীলতা ও উন্মুক্তকরণের অব্যাহত সম্প্রসারণের মাধ্যমে বিশ্বকে নতুন উন্নয়নের লভ্যাংশ প্রদান করবে।
চীনা অর্থনীতি চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমান জটিল ও পরিবর্তিত বহিরাগত পরিবেশ মুখোমুখি হলেও চীনের অর্থনীতির স্থিতিশীলতা, প্রগতিশীলতা ও স্থিতিস্থাপকতা অপরিবর্তিত রয়েছে। চীন অবিচলভাবে নিজস্ব লক্ষ্য অনুসরণ করবে এবং উচ্চমানের উন্নয়নের নিশ্চয়তার সাথে বিশ্বের জন্য নতুন সুযোগ প্রদান করবে।