শেখ হাসিনাকে ফোনে ‘আপা, আপা’ বলা আ’লীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে নিউইয়র্ক আওয়ামীলীগ


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ৯:০৬ পূর্বাহ্ণ /
শেখ হাসিনাকে ফোনে ‘আপা, আপা’ বলা আ’লীগ নেতাকে বহিষ্কার করেছে নিউইয়র্ক আওয়ামীলীগ

শেখ হাসিনা ও মো: তানভীর কায়সার – ছবি : সংগৃহীত

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফোনে ‘আপা, আপা’ বলা আওয়ামী লীগ নেতা মো: তানভীর কায়সারকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। শেখ হাসিনার সাথে ফোনে কথা বলার পর অডিও রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়ার অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে তাকে। মো: তানভীর কায়সার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ জ্যাকসন হাইটস ইউনিট কমিটির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।

মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি রফিকুর রহমানের একটি লিখিত আদেশে তাকে বহিষ্কারের বিষয়টি জানানো হয়।

বহিষ্কারাদেশে উল্লেখ করা হয়, বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও তানভীর কায়সার দলের নীতি, আদর্শ, চেতনা ও মূল্যবোধ বিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত থাকায় তাকে দলীয় সিদ্ধান্তে বহিষ্কারে করা হয়েছে।

রফিকুর রহমান জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর শেখ হাসিনার সাথে ফোনালাপের পর তানভীর কায়সার সেই অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে দলের সভাপতি শেখ হাসিনাকে হেয় করেছেন। এমন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তির দলে থাকার কোনো অধিকার নেই। এ জন্য নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সিদ্ধান্তে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

জানা গেছে, ২০১৯ সালের ৪ জুন লস অ্যাঞ্জেলস হয়ে ভ্রমণ ভিসায় যুক্তরাষ্ট্রে ঢোকেন তানভীর কায়সার। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের কিছুদিন পরই দাবি করেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে নির্যাতন করেছে। এ জন্য তিনি নিজের নিরাপত্তা চান। পরে ২০২০ সালের ৭ মে দেশটিতে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। এরপর ২০২১ সালের ২৪ জানুয়ারি তার বাংলাদেশী পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে।

তবে কোন সূত্রে শেখ হাসিনার সাথে তিনি সরাসরি যোগাযোগ করেছেন, সেটি এখনো জানা যায়নি।

সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ফোনালাপের অংশ :
তানভীর : আপা আপনার কাছে ফোন দিয়েছি একটা ব্যাপারে, নিউইয়র্ক মহানগরে আমরা এমদাদ ভাইয়ের নেতৃত্বে মিটিং মিছিল করছি। কিন্তু এলাকার পরিস্থিতি খুব খারাপ। কামরাঙ্গীর চর-কেরাণীগঞ্জের সকল নেতাকর্মী এলাকার বাইরে। এরপর শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা যায়, সব মার্ডার কেস। সবার বিরুদ্ধে মার্ডার কেস।

তানভীর : এলাকার ছাত্রলীগ-যুবলীগকে আমি সহায়তা করছি। আপনি যদি বলেন তুমি এখানে থেকে ওদের হেল্প করো, করলাম। আর যদি বলেন তুমি দেশে গিয়ে দল গোছানোর চেষ্টা করো তাহলে করবো আপা। আপনার সিদ্ধান্ত আপা।

শেখ হাসিনা বলেন, এখানে বসে এখন সাহায্য করো। এটাই সবচেয়ে বেশি কাজে লাগবে। দেশে পরে গেলেও হবে।

তানভীর : আইনজীবীরা দাঁড়াতে পারছে না। এই বিষয়ে যদি আপনি পরামর্শ দিতেন…

শেখ হাসিনা বলেন, আইনজীবীদের বলো লোকজনকে অরগানাইজ করে যেন আইনজীবীরা সেখানে যায়।

তাছাড়া তো আর কোনো… এরপরে শেখ হাসিনাকে আবার বলতে শোনা যায়, তুমি যেখানে আছো সেখানে তো ইলেকশন চলছে। তাদের ক্যাম্পেইনিংয়ের সময় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, ক্যাম্পেইনিংয়ে সহযোগিতা করার সাথে সাথে এই বিষয়গুলো জানিয়ে রাখা। এদের কাছ থেকে একটা সাপোর্ট নিয়ে আসা।

তানভীর: আমার মনে হয় এবার ট্রাম্প আসবে। ট্রাম্প আসলে আমাদের জন্য খুবই ভালো আপা।

শেখ হাসিনা বলেন, সে যেই আসুক। তাদের ক্যাম্পেইনিংয়ে থাকলে, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ হলে ভবিষ্যতে কাজে লাগবে। এটা আমি সবাইকে বলেও দিয়েছি।

তানভীর : আপা বাংলাদেশে একটা নিউজ আসছে, আপনাকে গাজিয়াবাদ থেকে দিল্লিতে ট্রান্সফার করছে হেলিকপ্টারে করে।

হাসিনা অবাক হয়ে প্রশ্ন করেন হেলিকপ্টার দিয়ে? বলেন, কোন দেশের হেলিকপ্টার। ছবি পাঠাইও দেখবোনে। কি একটা আজগুবি কথা বলে ওরা। আমি দেশের খুব কাছাকাছি আছি। অতদূরে নাই। আমি খুব কাছাকাছিই আছি, যাতে আমি চট করে ঢুকে পড়তে পারি।

এ সময় কাঁদতে কাঁদতে তানভীর বলেন, আপা কষ্ট লাগে, আপনি যে মিডিয়াদের দিয়ে আসছেন, এরা সত্য বলে না, এরা কাজ করে না আপা। কই যাবো আপা। আল্লাহ আপনারে বাঁচাই রাখুক। আমরা আছি আপা। আপনি যখন নির্দেশ দেবেন, তানভীর তুমি আমেরিকা থেকে দেশে চলে আসো, এসে কামরাঙ্গীর চর-কেরাণীগঞ্জে দলীয় নেতৃত্ব গোছাও, আপনি বললে সাথে সাথে দৌঁড় দেব আপা।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন গেলেই দেবে একখানা মামলা, শেষে কিছুই করতে পারবা না। আমার বিরুদ্ধে ১১৩টা মামলা। এইসব জিনিসগুলো নিয়ে জাতিসংঘ থেকে সবার কাছে বলা দরকার, ফলস মামলা দিচ্ছে। আমার পরিবারের কেউ বাকি নাই। সবার নামে মামলা।