‘শেখ হাসিনার নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য! ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক ও ইসি’


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মে ২৩, ২০২৫, ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ /
‘শেখ হাসিনার নির্বাচনী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য! ব্যবস্থা নিচ্ছে দুদক ও ইসি’

ভারতে পালিয়ে যাওয়া ফ্যাসিস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দাখিলকৃত হলফনামায় অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামায় এ অসঙ্গতি পাওয়া যায়। এর মধ্যে সম্পদের তথ্য গোপন করার অংশটি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। হলফনামায় মিথ্যা তথ্য প্রদানের বিষয়টি ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে নির্বাচন কমিশনে (ইসি)।

গতকাল এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানিয়েছেন দুদক চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেন। তিনি জানান, শেখ হাসিনার হলফনামায় মিথ্যা তথ্য প্রদানের অভিযোগে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ, ১৯৭২’-এর আওতায় প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে সংস্থাটি। আরপিও অধ্যাদেশ অনুযায়ী হলফনামায় মিথ্যা তথ্য দিলে প্রার্থিতা বাতিল হওয়ার বিধান রয়েছে।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এখানে দুটি বিষয়। একটি অংশ নির্বাচন কমিশনের কাছে চলে গেছে। নির্বাচন কমিশন ব্যবস্থা নিয়ে। আরেকটা অংশ হচ্ছে, হলফনামায় দাখিল করা সম্পদ বিবরণী ও তার আয়কর বিবরণী সম্পদের হিসাব করে আমাদের অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যানুসারে দুদক পৃথকভাবে আইনগত ব্যবস্থা নেবে। সেটা খানিকটা সময় সাপেক্ষ বিষয়।

এদিকে ইসি বরাবর দেয়া চিঠিতে দুদক জানায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাক্ষরিত এক সম্পদ বিবরণীতে দুর্নীতি দমন কমিশনে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন। এই সম্পদ বিবরণী যাচাইকালে ১৯-১১-২০০৮ খ্রি: তারিখে নির্বাচন কমিশনে তার দাখিলকৃত হলফনামা পর্যালোচনা করা হয়। প্রাপ্ত তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায় যে, শেখ হাসিনা ওয়াজেদ, ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর তারিখে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্বে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে হলফনামার মাধ্যমে দাখিলকৃত পরিসম্পদ ও দায়ের বিবরণীতে তার নিজ নামে অর্জিত কৃষি জমির পরিমাণ ৬.৫০ একর। এর মধ্যে তার নিজের কেনা জমি অর্জনকালীন আর্থিক মূল্য দেখানো হয় ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। কিন্তু সমসাময়িক সময়ে তিনি দুদকে যে সম্পদ বিবরণী দাখিল করেন সেটি যাচাইকালে তার নিজ নামে অর্জিত সম্পদ পাওয়া যায় ২৮.৪১১ একর জমি। এর মধ্যে তার কেনা জমির মূল্য ৩৩ লাখ ৬৬ হাজার ১০ টাকা। এ অনুযায়ী তিনি হলফনামায় ২১.৯১ একর জমির তথ্য গোপন করেছেন। ক্রয়কৃত জমির মূল্য ৩১ লাখ ৯১ হাজার দশ টাকা কম দেখানোর মাধ্যমে হলফনামায় অসত্য তথ্য দিয়েছেন।

এছাড়া তিনি মাগুরা-১ আসনের তৎকালীন এমপি ডা: মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের এমপি পদের শুল্কমুক্ত কোটা ব্যবহার করে বেনামে ২ লাখ ৩০ হাজার ইউরো মূল্যে (গাড়ি আমদানির এলসির বিপরীতে ব্যাংক হতে পরিশোধিত ১ কোটি ৯৩ লাখ ২০ হাজার টাকা, একটি মার্সিডিজ বেঞ্জ গাড়ি আমদানি করে নিজ আবাসিক ঠিকানায় (সুধা সদন, বাড়ি নং-৫৪, রোড নং-৫, ধানমন্ডি) ব্যবহার করে গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন (ঢাকা মেট্রো-ঘ-১১-৬৩৬৪) করেন। পরবর্তীতে এ গাড়িটি তিনি নিজে ব্যবহার করেন।

ডা: মোহাম্মদ সিরাজুল আকবরের আয়কর নথিতে কিংবা নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত তার হলফনামায় আলোচ্য গাড়িটির বিষয়ে কোনো তথ্য নেই। তিনি কখনো তা ব্যবহারও করেননি মর্মে জানা গেছে।

এমতাবস্থায়, কমিশনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শেখ হাসিনা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে ‘গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২’-এর আওতায় হলফনামায় অসত্য তথ্য প্রদানের বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণে দুদকের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

দুদক জানায়, যেহেতু হলফনামায় মিথ্যা ঘোষণা দেয়ার বিষয়টির ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার এখতিয়ার নির্বাচন কমিশনের। সেহেতু বর্ণিত তথ্যের ওপর আইনি ব্যবস্থা নিতে দুদক থেকে নির্বাচন কমিশনে প্রেরণের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

সেইসঙ্গে অভিযোগ সংশ্লিষ্ট সাবেক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জ্ঞাত আয় বহিভর্‚ত সম্পদ বিষয়ে প্রাপ্ত তথ্য ২০০৮ সালে বিধায় বর্তমান অবস্থা পর্যন্ত বিশদ অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুদক।