স্কাই নিউজের খবর বলছে, হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন তখনকার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আট শতাধিকের মতো গোপন বন্দিশিবির নিয়ন্ত্রণ করা শেখ হাসিনার সহযোগীদের অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিচারের মুখোমুখি করা হবে বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, ‘হাসিনা যেখানেই থাকুক না কেন; তার বিচার হবে।’
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম স্কাই নিউজকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এমন মন্তব্য করেছেন। বুধবার (৫ মার্চ) তার এই সাক্ষাৎকারটি প্রকাশ করা হয়েছে।
স্কাইনিউজের খবর বলছে, শেখ হাসিনা সরকারপ্রধান থাকাকালে বহু মানুষকে গুম করা হয়েছে। এছাড়া গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের সময়ে ব্যাপক হত্যাকাণ্ড চালানোর অভিযোগ রয়েছে তার সরকারের বিরুদ্ধে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এসব ঘটনার বিচার হবে। কেবল তারই (শেখ হাসিনা) না, যারা তাকে সহযোগিতা করেছেন, তাদেরও—তার পরিবার সদস্য, অনুসারী ও সহযোগী।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মুখে গেল ৫ আগস্ট পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছেন শেখ হাসিনা। ‘আয়নাঘরের’ মতো গোপন আটককেন্দ্র পরিচালনা করতেন তিনি, যেখানে ভিন্নমতের লোকজনকে ধরে এনে জিজ্ঞাসাবাদ, নির্যাতন ও হত্যা করা হতো।
‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ নামে তিনি এসব করতেন। এরইমধ্যে তার বিরুদ্ধে দুবার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। তাকে ফেরত দিতে ভারতের কাছে আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়া হলেও তার কোনো জবাব মেলেনি।
শেখ হাসিনা বাংলাদেশে সশরীরে উপস্থিত থাকুক কিংবা ভারতে পালিয়ে থাকুক, তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে বলে জোর দিয়েছেন অধ্যাপক ইউনূস। সম্প্রতি ‘আয়নাঘর’ নামের গোপন জেলখানা পরিদর্শন করেছেন তিনি। সেখানে যা দেখেছেন, তা ‘ভয়াবহ ও অবিশ্বাস্য’ বলে বিবরণ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।
‘এটি ছিল খুবই বিভৎস দৃশ্য। না-দেখলে যা আপনি অনুভব কিংবা বিশ্বাস করতে পারবেন না,’ বলেন তিনি।
স্কাই নিউজের খবর বলছে, হাজার হাজার রাজনৈতিক কর্মীকে হত্যা, নির্যাতন ও অপহরণে পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনীকে ব্যবহার করেছেন তখনকার ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। আট শতাধিকের মতো গোপন বন্দিশিবির নিয়ন্ত্রণ করা শেখ হাসিনার সহযোগীদের অনেকে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন।
কী পরিমাণ লোক এতে জড়িত ছিল, তাদের শনাক্ত করতে সময় লাগছে জানিয়ে অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘এতে সবাই জড়িত ছিল, পুরো সরকার জড়িত ছিল। কাজেই কারা ইচ্ছাকৃত ও আগ্রহের সাথে এটা করেছে, কারা আদেশ মানতে বাধ্য হয়ে এটা করেছে এবং এসবে পুরোপুরি সমর্থন না দিয়েও চাপে পড়ে করেছে—তা নির্ধারণ করা কঠিন হয়ে পড়েছে।’
ভুক্তভোগীদের পরিবার যাতে দ্রুত ন্যায়বিচার পান, সেই প্রত্যাশার চাপ রয়েছে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর। যাতে এই সরকার থাকতেই বিচার করা যায়; সেই চেষ্টা করছেন অধ্যাপক ইউনূস। তিনি বলেন, ‘অপরাধীদের কেউ সাজা পাবেন, কেউ বিচারাধীন থাকবেন, কেউ কেউ ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকবেন।’
দেশের অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে দায়িত্ব নেওয়ার পর অধ্যাপক ইউনূসকে নানামুখি চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হচ্ছে, যার মধ্যে শেখ হাসিনার আমলের দুর্নীতির তদন্তও রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশন এরইমধ্যে শেখ হাসিনার সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তাদের মধ্যে ব্রিটিশ লেবার পার্টির এমপি টিউলিপ সিদ্দিকও আছেন, যিনি শেখ হাসিনার ভাগ্নি।
ইউনূস সাক্ষাৎকারে বলেন, টিউলিপের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘গুরুতর’। দেশে তার ‘বিপুল সম্পদসহ সবকিছুই’ খতিয়ে দেখা হবে।
বাংলাদেশে দুদকের তদন্তে নাম আসার পর লন্ডনে বেশ কয়েকটি বাড়ির সন্ধান পাওয়া যায়, যেগুলো টিউলিপ ও তার পরিবারের সদস্যরা শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিদের কাছ থেকে উপহার হিসেবে পেয়েছেন।
এ নিয়ে ব্যাপক শোরগোলের মধ্যে গত জানুয়ারিতে সিটি মিনিস্টারের পদ থেকে পদত্যাগ করেন টিউলিপ।
লন্ডনে তার একজন মুখপাত্র স্কাই নিউজকে বলেছেন, দুদক অভিযোগের বিষয়ে টিউলিপের সাথে যোগাযোগ করেনি। আর তিনি সেসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
সূত্র : ইউএনবি