সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারানোর দিন ১৯ এপ্রিল


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : এপ্রিল ২০, ২০২৫, ৮:০২ পূর্বাহ্ণ /
সংগীতের উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারানোর দিন ১৯ এপ্রিল

‘অনেক সাধের ময়না আমার’, ‘আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভালো’, ‘মানুষের গান আমি শুনিয়ে যাব’, ‘যারে যাবি যদি যা; পিঞ্জর খুলে দিয়েছি’, ‘ডেকো না আমাকে তুমি, কাছে ডেকো না’, ‘খুঁজে খুঁজে জনম গেল’, ‘সজনী গো ভালোবেসে এত জ্বালা কেন বল না’ সহ এমন আরও অসংখ্য কালজয়ী গানের শিল্পী বশির আহমেদ। সংগীতের এই উজ্জ্বল নক্ষত্রকে হারানোর দিন। ২০১৪ সালের ১৯ এপ্রিল রাজধানীর মোহাম্মদপুরের নিজ বাসায় পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে তিনি চলে যান ওপারে। গুণী এই শিল্পীর ১১তম মৃত্যুবার্ষিকীতে আমাদের সময়ের শ্রদ্ধাঞ্জলি।

বশির আহমেদ একাধারে গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালকও ছিলেন। দিল্লির সওদাগর পরিবারের এই সন্তান ১৯৩৯ সালের ১৮ নভেম্বর কলকাতার খিদিরপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম নাসির আহমেদ এবং মায়ের নাম মমেনা খাতুন। ১৯৬৪ সালে বশির আহমেদ সপরিবারে ঢাকায় চলে আসেন। এর আগেই উর্দু চলচ্চিত্রে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে ‘তালাশ’-এ চিত্রনায়ক রহমানের লিপসের সব গানই গেয়েছিলেন তিনি। সিনেমার ‘কুছ আপনি কাহিয়ে, কুছ মেরি সুনিয়ে’ বেশ জনপ্রিয় হয়। এরপর জহির রায়হানের উর্দু চলচ্চিত্র ‘সঙ্গম’ (১৯৬৪)-এ গান করেন। একই বছর ‘কারওয়াঁ’তে নিজের লেখা ও সুরে ‘যব তুম আকেলে হোগে হাম ইয়াদ আয়েঙ্গে’ জনপ্রিয় হয়।

১৯৬৭ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘দরশন’ সিনেমা বশির আহমেদকে নিয়ে যায় খ্যাতির শীর্ষে। বাংলা চলচ্চিত্রেও সুরকার এবং সংগীত পরিচালক হিসেবে তাকে দেখা গেছে। তার সুরে গান করেছেন ফেরদৌসী রহমান, আবদুল জব্বার, রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন, মিনা বশির, বেগাম নুরজাহান থেকে শুরু করে অনেক শিল্পী। বশির আহমেদ ‘কখনো মেঘ কখনো বৃষ্টি’ সিনেমায় গানের জন্য ২০০৩ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য তাকে একুশে পদকেও ভূষিত করা হয়। এ ছাড়া দেশ ও দেশের বাইরে অসংখ্য সম্মাননা লাভ করেন গুণী এই শিল্পী।

দুই সন্তানের স্মৃতিচারণ

রাজা বশির

বাবা ও মা দুজনেই ছুটির দিনে সকালে নাশতার টেবিলে নিজেদের জীবনের অনেক কথাই বলতেন আর আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনতাম। মূলত এখন জীবনে চলার পথে ওই সব ছোট ছোট গল্পই কিন্তু অনেক সাহায্য করে কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। তবে আজকে মনে পড়ছে বাবার রেওয়াজ করার ঘটনা। বাবা তখন মুম্বাইতে সবে মাত্র পৌঁছেছেন, ওখানে তেমন জানাশোনাও কেউ নেই। বাবা তার বন্ধুকে সঙ্গে করে রেওয়াজ করার জন্য এক মেথরের কাছ থেকে চার আনা ভাড়ায় দুই ঘণ্টার জন্য হারমোনিয়াম নিয়ে আসেন। এরপর চলে যান সমুদ্রপাড়ে। সেখানে এক পাথরের ওপর দুজনে বসে পড়েন। বাবা রেওয়াজ করছেন এবং তার বন্ধু বাবার গান শুনছেন। এরই মধ্যে কখন যে জোয়ার এসে চারিদিক পানিতে ভরে গেছে, কেউ টেরই পাননি। বাবা বললেন ‘সেদিন খাওয়াদাওয়া কিছুই হয়নি, শুধু গানই করেছিলেন সমুদ্রের ভাটা পর্যন্ত।’ সব শেষে হারমোনিয়াম ফেরত দিতে গেলে, সময় বেশি হওয়ার কারণে লোকটি বাবার কাছে অতিরিক্ত পয়সা চায়। কিন্তু বাবার কাছে সে পরিমাণ পয়সা ছিল না। এরপর উনি বললেন ‘ঠিক আছে তাহলে আমাকে একটা গান শুনিয়ে দাও।’ আর উনি বাবার কাছ থেকে পয়সা নিলেন না।

হোমায়েরা বশির

বাবা পশুপাখি অনেক পছন্দ করতেন। খুব সম্ভবত কুষ্টিয়ায় অনুষ্ঠানে যাওয়ার সময় আমরা ফেরিঘাটে অপেক্ষা করছিলাম ফেরির জন্য। তখন এক পাখিওয়ালা এসে বাবাকে বলেন, ‘ও স্যার, পাখি নেবেন?’ বাবা তখন একটু ভেবে জিজ্ঞেস করলেন, ‘পাখির দাম কত?’ তারপর জিজ্ঞেস করলেন, ‘শুধু খাঁচার দাম কত?’ তারপর বাবা বললেন, ‘এই নাও টাকা, সব খাঁচা তোমার আর পাখি আমার।’ তখন বাবা সব পাখি খাঁচা থেকে মুক্ত করে দিলেন, আর বললেন ‘পাখি তো মুক্ত আকাশে উড়ে বেড়াবে, তাই ছেড়ে দিলাম।’ আমাদের বশির পরিবারের কাছ থেকে সবার প্রতি অনুরোধ থাকল, যেন সবাই বাবা-মায়ের জন্য দোয়া করেন। আল্লাহ যেন ওনাদের জান্নাতের সর্বশ্রেষ্ঠ স্থান দান করেন। আমিন।