সচিবালয় ভাতা দাবিতে সরকারি আচরণবিধি অমান্য করে সচিবালয়ে মিছিল, মিটিং ও আন্দোলন করাসহ অর্থ উপদেষ্টাকে অবরুদ্ধ করে রাখায় ১৪ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে মামলা করা হয়েছে।
শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) সকালে ডিএমপি এর শাহবাগ থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইন, ২০০৯ এ মামলা করা হয়। যার এফআইআর নং-৮, জি আর নং-৩৫০, খারাঃ ৬/১২।
মামলার আসামিরা হলো : স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ রোমান গাজী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের পার্সোনাল অফিসার ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সভাপতি মোঃ বাদীউল কবির, স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এবং বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সহ-সভাপতি শাহীন গোলাম রব্বানী, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের সহ-সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম, তথ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক ও বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী সংযুক্ত পরিষদের প্রচার সম্পাদক মোঃ মিজানুর রহমান সুমন।
এছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক মোঃ আবু বেলাল, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক মোঃ কামাল হোসেন, অর্থ মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক বিপুল রানা বিপ্লব, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অফিস সহায়ক মোঃ আলিমুজ্জামান, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র রায়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ইসলামুল হক, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ মহসীন আলী, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোঃ তায়েফুল ইসলাম এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের অফিস সহায়ক মোঃ নাসিরুল হক নাসির।
একই সঙ্গে সকল আসামিদের ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কোর্টে চালান করেছে।
এর আগে গত বুধবার সচিবালয়ে কর্মরত চাকরিজীবীদের ২০ শতাংশ সচিবালয় ভাতার দাবিতে নজিরবিহীনভাবে ৬ ঘণ্টা অবরুদ্ধ করে রাখা হয় অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে। এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকাল ৩টা দাবি মেনে জিও (সরকারি আদেশ) জারি করা হবে মর্মে প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সেই ধারাবাহিকতায় সচিবালয়ের বাদাম তলায় জড়ো হয়ে আন্দোলন করেন। সে সময় সরকারি আচরণবিধি অমান্য করায় অন্তত চারজন কর্মচারীকে পুলিশের হেফাজতে নেয়া হয়।
এসময় ডিএমপির ডিপ্লোমেটিক সিকিউরিটি ডিভিশনের যুগ্ম কমিশনার সানা শামীনুর রহমান বলেন, রোববার থেকে সচিবালয় বন্ধের একটা হুশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে এই মুহূর্তে আমরা এই অন দ্য স্পট চারজনকে গ্রেফতার করেছি এটা আপনারাও দেখেছেন। এখানে আমরা যাচাই-বাছাই করে দেখব কার কতটুকু দায়-দায়িত্ব রয়েছে।
তিনি বলেন, গতকালকের ঘটনা আমাদের কাছে ভিডিও ফুটেজ রয়েছে। আপনাদের কাছেও রয়েছে যারা সাংবাদিক ছিলেন। আপনারা গতকালকেও আমি দুই-দুইবার তাদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ শেষ করার জন্য বলেছিলাম। কিন্তু তারা কিন্তু সেই বিষয়টি আমলেই নেয়নি। সুতরাং আমরা এই মুহূর্তে যাদেরকে নেওয়া হয়েছে অন দ্য স্পট যারা আইন ভঙ্গ করেছে শুধুমাত্র আমরা তাদেরকে বেছে বেছে কয়েকজনকে নিয়েছি। এটা যদি অব্যাহত থাকে যত মানুষ আইন ভঙ্গ করবে আমরা সবাইকে আইনের আওতায় আনব।
এদিকে এ ঘটনা কেন্দ্র করে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও বাদামতলায় পুলিশের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে রাখা হয়েছে।
উল্লেখ্য, সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা চালুর ঘোষণা দিয়ে তাও কার্যকর করেনি সরকার। নতুন বেতন কমিশনের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অর্থ উপদেষ্টা এরই মধ্যে কয়েকবার বলেছেন, বেতন কমিশন বাস্তবায়ন করবে নির্বাচিত সরকার। এর আগে গত ২২ জুন সরকারি চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতেও অর্থ বিভাগের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেছিলেন কর্মচারীরা।
এর আগে সচিবালয়ে সব ধরনের সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে দফায় দফায় আদেশ জারি করেছে সরকার। চলতি সপ্তাহেও তফসিল ঘোষণার পর সব ধরনের বেআইনি ও অনুমোদনহীন জনসমাবেশ, আন্দোলন পরিচালনা থেকে বিরত থাকতে সবাইকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে বারবার এ আদেশ অমান্য করে সচিবালয়ে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন দাবিতে সভা-সমাবেশ চলছেই।