রাহাত রিটুঃ শ্রী নূপুর চন্দ্র রায় চৌধুরী নামের এক সন্দেহভাজন ভারতীয় নাগরিককে বগুড়া পৌরসভা থেকে জন্মসনদ দেওয়া হয়েছে। নূপুর চন্দ্র রায় চৌধুরী ভারতীয় নাগরিক কিনা বা কিভাবে তার হাতে জন্ম সনদ পৌছুলো এই বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বগুড়া পৌরসভার সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
হেমচন্দ্র রায় চৌধুরী ও রাজেশ্বরী ওরফে মাখন বালা চৌধুরানীর প্রথম সন্তান হিসেবে পরিচিত হওয়া নূপুর চন্দ্র রায় চৌধুরী জন্মসনদ গ্রহণের জন্য এ বছরের জানুয়ারি মাসে বগুড়া পৌরসভায় ৫০ টাকা ফি দিয়ে অনলাইন ফরম পূরণ করে জন্ম সনদের জন্য আবেদন করেন। জন্ম সনদের বয়স যাচাইয়ের জন্য তার মেডিকেল রিপোর্টের প্রয়োজন হয়। ডাঃ হাবিবুর রহমান রতন, নূপুর চন্দ্র রায় চৌধুরীর দেওয়া তথ্য‘র উপর ভিত্তি করে তার বয়স নিশ্চিত করেন।
ডাক্তারী রিপোর্ট এবং নূপুর চন্দ্র রায় চৌধুরীর তথ্যের ভিত্তিতে পৌরসভার প্যানেল মেয়র-৩ শিরিন আকতার অনলাইন আবেদনের হার্ড কপিতে স্বাক্ষর করেন। এবং তার দেওয়া রিপোর্টে তার জন্ম তারিখ ২৯ জুলাই ১৯৪৪ সাল উল্লেখ করেন। একই সাথে তিনি তাকে চেনেন বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করেন। এর পর যথারীতি ১৬ জানুয়ারি নূপুর চন্দ্র রায় চৌধুরী কে ১৯৪৪১০২২০০৩৫৭১৪৪০ নাম্বারে জন্মসনদের অনলাইন কপি হস্তান্তর করা হয়।
নূপুর চন্দ্র রায় চৌধুরীকে জন্মসনদ হস্তান্তরের পর বিষয়টি নিয়ে তোলপাড়া ওঠে। সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলরকে পাশ কাটিয়ে নারী কাউন্সিলর এবং প্যানেল মেয়র শিরিন আকতারের স্বাক্ষরে জন্মসনদ প্রস্তুত হওয়ায় গুঞ্জন ওঠে ভারতীয় নাগরিককে জন্মসনদ দেওয়া হয়েছে।
এর পর বগুড়া শহরের শিববাটি এলাকার মোঃ আবির হোসেন পৌরসভার মেয়র বরাবরে আবেদনে উল্লেখ করেন, নূপুর চন্দ্র রায় চৌধুরী জন্ম নিবন্ধনে নিজের জন্মস্থান সিরাজগঞ্জ হিসেবে উল্লেখ করেন।
তিনি বিভিন্ন অসদুপায় অবলম্বন করে পৌরসভা হতে জন্মসনদ গ্রহণ করেছে। তার জানামতে উল্লেখিত ঠিকানায় বসবাস করেন না। তিনি জন্মসনদটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার আহবান জানান। পরে মেয়র এই আবেদনটি ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে বলেন।
এদিকে জন্ম সনদ পাওয়ার পর সম্প্রতি ওই ব্যক্তি জাতীয় পরিচয় পত্র এবং ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন করেন এবং ভোটার হওয়ার জন্য ছবি তুলতে যান এবং ছবি তোলেন। এর মধ্যে স্থানীয় কাউন্সিলর বিষয়টি জানতে পেরে তার ভোটার হওয়ার কার্যক্রম বন্ধকরে দেন।
এদিকে নূপুর চন্দ্র রায় চৌধুরী মুঠোফোনে জানান, সিরাজগঞ্জের দৌলতপুরে তিনি থাকতেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি ছাড়া তার পরিবারের সকল ব্যক্তিকে হত্যা করে তাদের বাড়ির ইঁদারায় ফেলে দেওয়া হয়। এর পর তিনি বাড়ি ছাড়েন। সম্প্রতি তার বিভিন্ন অসুখ দেখা দেওয়ায় তিনি ভারতে চিকিৎসা করানোর জন্য পাসপোর্ট করাতে চান।
এজন্য তার আইডি কার্ড প্রয়োজন তাই বগুড়ায় এসে জন্মসনদ নিয়েছেন। তিনি দাবি করেন তার বর্তমান বয়স ৭৯ বছর। ১৯৯৪ সালে তার বাবা মারা গেছেন। গ্রামীণফোনের ০১৭৩২৭৩০০৮৮ নাম্বার ব্যবহারকারী নূপুর চন্দ্র রায় চৌধুরী এনআইডি কার্ড ছাড়া কিভাবে সীম পেলেন জানতে চাইলে তিনি সদুত্তর দিতে না পেরে বলেন সোলাইমান আপনার সাথে কথা বলবেন।
বগুড়া পৌরসভার স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ও জন্মসনদ বিভাগের দায়ীত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলী খান জানান, নূপুর চন্দ্র রায় চৌধুরী তাকে জানিয়েছে তার কিছু সম্পত্তি রয়েছেন, সেই সম্পত্তি বিক্রি করতে চান। তার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করার পর তিনি আর ওই এলাকায় যাননি।
এখন সম্পত্তি বিক্রি করতে চান একারণে তার জন্মসনদ প্রয়োজন। তিনি নিয়ম মেনে ছবি দিয়ে কাউন্সিলরের পরিবর্তে প্যানেল মেয়র-৩ এর স্বাক্ষর নিয়ে জমা দিয়েছেন। কাগজপত্র সঠিক থাকায় সে সময় তিনি জন্মসনদ পেয়েছেন।
বগুড়া সদর নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম জাকির হোসেন জানান, সন্দেহভাজন এক ব্যক্তি ভোটার হতে ছবি তুলতে এসেছিলেন। স্থানীয় কাউন্সিলরের সহায়তায় সেটা করতে দেওয়া হয়নি। তিনি জানান, ভোটার হওয়ার বা জাতীয় পরিচয় পত্র পাওয়ার জন্য যে কার্যক্রম করতে হয় ওই ব্যক্তি তা সম্পন্ন করতে পারেনি।
স্থানীয় কাউন্সিলর কবিরাজ তরুণ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, পৌরসভা থেকে তাকে বিষয়টি জানান হয়েছে এবং তাকে তদন্ত করতে বলা হয়েছে। তিনি তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কিছু বলতে পারবেন না। পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আরিফুজ্জামান জানান, বিষয়টি তিনি জেনেছেন।
সর্বশেষ পরিস্থিতি বিষয়ে তিনি জানেন না বলেও জানান। তবে তিনি বিষয়টি নিয়ে স্যানেটারি ইন্সপেক্টর ও জন্মসনদ বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ শাহ আলী খানের সাথে কথা বলতে বলেন।
প্যানেল মেয়র-৩ শিরিন আকতার জানান, তিনি প্রতিদিন অনেক আবেদনে স্বাক্ষর করলেও প্রতিটি আবেদন দেখে করেন। তার ধারনা কোন চক্র কাজের ভীড়ে তাকে কোন কিছু না বলে আবেদনে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন। তিনি স্বাক্ষর করার বিষয়ে ভুল স্বীকার করে বলেন এটা তার ভুল হয়েছে। কেউ চালাকী করে এটা করিয়ে নিতে পারে তিনি সজ্ঞানে এটা করেননি।
এটা প্রমাণের জন্য তিনি কাগজপত্র সংগ্রহ করছেন বলেও জানান। তিনি আরও বলেন কাউন্সিলররা স্বাক্ষর করার পর মূল দায়িত্ব হলো যাচাইকারীদের। যাচাইকারীরা কেন এটা দেখলো না। কাগজপত্র যাচাইবাছাই করলো না। তিনি তাদের কর্তব্য অবহেলারও অভিযোগ করেন।
বগুড়া পৌরসভার মেয়র রেজাউল করিম বাদশা জানান, বিয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। তদন্তের পর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ভূয়া প্রমাণিত হলে তার সনদ বাতিল করা হবে।