সহসা পৌষের শীতে কাঁপছে দেশ, থমকে গেছে জন জীবন


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জানুয়ারি ৩, ২০২৫, ১২:০৪ অপরাহ্ণ /
সহসা পৌষের শীতে কাঁপছে দেশ, থমকে গেছে জন জীবন
  • শীতের তীব্রতা আরো বাড়তে পারে, এ মাসে দুই থেকে তিনটি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস শীতার্তদের পাশে কেউ নেই ষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা মানুষের

পৌষের হাড় কাঁপানো শীতের দাপটে জুবুথুবু সারাদেশ। শীতের তীব্রতায় কাহিল খেটে খাওয়া মানুষ। উত্তরাঞ্চলে এর তীব্রতা অনেক বেশি। এই শীতের সঙ্গে বেড়েছে ঘন কুয়াশা। আর এতে অনেকটা স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন। বেশি দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শিশু ও বৃদ্ধরা ঠাণ্ডাজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। উত্তরের হিমেল বাতাসে বেড়েছে শীতের তীব্রতা।

অনুভূত হচ্ছে কনকনে শরীর কাঁপানো শীত। তীব্র ঠাণ্ডায় গ্রামাঞ্চলের হতদরিদ্র মানুষজন খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। মধ্যরাত থেকে বেলা ১০টা ১১টা পর্যন্ত কুয়াশার চাদরে ঢাকা থাকছে বিভিন্ন এলাকা। গতকাল সারদিনই কুয়াশায় ঢাকা ছিল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল। সারাদিনই সূর্য়ের দেখা নেই। ঘন কুয়াশার কারণে নৌ-রুটে যান চলাচল বিঘিœত হয়েছে। এমনকি দিনের বেলায়ও হেড লাইট জ্বালিয়ে চালকদের গাড়ি চালাতে হয়েছে। রাজধানীর আকাশ সকাল থেকে ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কুয়াশার পরিমাণ কিছুটা কমলেও বিকাল থেকেই আবার কুয়াশায় ঢাকা পড়ে। রাজধানীতে এতটা কুয়াশা এই প্রথম। ঘন কুয়াশার কারণে বায়ুদূষণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঢাকার বায়ুদূষণ এখন খুবই অস্বাস্থ্যকর অবস্থায় পৌঁছেছে।

গতকালও রাজধানী ঢাকা ছিল বিশ্বের বায়ূদূষণের শহরের তালিকার শীর্ষে। কুয়াশার কারণে ক্ষতি হচ্ছে কৃষির। বোরো রোপণ করতে পারছে না কৃষক। শীতে বেশি কষ্টে পড়েছেন রিকশা, ঠেলা ও ভ্যানচালক, কুলি, মজুর, নির্মাণ ও ঘাটশ্রমিকসহ হতদরিদ্র শ্রমজীবী ও কর্মজীবীরা। তারা কাজে যেতে পারছে না। আয়-রোজগার অনেক কমে গেছে। অনেকে সংসার চালাতে এই হাড় কাঁপানো শীতে কাজে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। গ্রামাঞ্চলেও তীব্র শীতে কষ্ট পাচ্ছেন নি¤œ আয়ের মানুষ। পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র না থাকায় অনেকেই আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। আবার কেউ কেউ স্বল্পমূল্যে শীতবস্ত্র কিনতে পুরনো পোশাকের দোকানে ভিড় জমাচ্ছেন। শীতে গরিব অসহায়, খেটে খাওয়া মানুষ প্রচ- কষ্ট ভোগ করলেও তাদের পাশে দাঁড়াচ্ছে না কেউ।

সরকারের দু-একজন উপদেষ্টা হেলিকপ্টারে দিয়ে কয়েকজনকে শীত বস্ত্র দিয়ে লোক দেখানো ফটো সেশন করেছেন। এরপর সরকারের আর কোনো কার্যক্রম নেই। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোও নিজেদের প্রচার-প্রচারণার জন্য লোক দেখানো শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মতো রাজনৈতিক, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন কারো কোনো কার্যক্রম লক্ষ করা যাচ্ছে না। এদিকে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, চলতি মাসে শীতের তীব্রতা আরও বাড়তে পারে। এ মাসের শেষার্র্ধ্বজুড়ে শৈত্যপ্রবাহ থাকতে পারে। চলতি জানুয়ারি মাসে দিন ও রাতের তাপমাত্রা স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি থাকতে পারে। তবে দিন ও রাতের তাপমাত্রার পার্থক্য থাকার কারণে শীতের অনুভূতি বাড়বে। এ বছর ঘন কুয়াশাটা অনেক বেশি। এর ফলে শীত তীব্র হবে।

গতকাল সকালে চুয়াডাঙ্গায় সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলেও অনুভূতি হতে পারে ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। দিনের বেলায় ঠা-া বাতাসের সঙ্গে শীতের তীব্রতাও বেশি থাকবে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত তীব্র শীত থাকবে। আবহাওয়ার মাসব্যাপী পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, জানুয়ারি মাসে দেশের পশ্চিম, উত্তর ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে দু-একটি মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে তীব্র (৪-৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এ সময় দেশের অন্যত্র দুই থেকে তিনটি মৃদু (৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস) থেকে মাঝারি (৬-৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। তীব্র শীতে মানুষের ভোগান্তির তথ্য নিয়ে আমাদের সংবাদদাতাদের পাঠানো প্রতিবেদন তুলে ধরা হলো।

রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, রাজশাহীতে কমেছে দিনের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা। একই সঙ্গে দিনভর বইছে হিমেল হাওয়া। হিমেল হাওয়ায় বেড়েছে শীতের তীব্রতা। একদিনের ব্যবধানে রাজশাহীতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা কমেছে ১ডিগ্রী। এছাড়া অপবির্তিত রয়েছে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। কয়েকদিন থেকে রাজশাহীতে ভোর রাত থেকে হিমেল হাওয়া বইছে। দুপুরের দিকে কমলেও বিকেল থেকে বাড়ছে বাতাস। বাতাসের ফলে বেড়েছে শীতের তীব্রতা। ফলে কষ্টের মধ্যে মধ্যবৃত্ত ও নি¤œ আয়ের মানুষদের জীবিকার তাগিদে খোলা আকাশের নিচে কাজ করতে হচ্ছে।

রিক্স চালকরা জানান, ভোরের দিকে কুয়াশা থাকছে চারপাশে। সঙ্গে বাতাস বইছে। এছাড়া সন্ধ্যার দিকে সবচেয়ে বেশী বাতাস বইছে। দুইটা প্যান্ট, শরীরে সোয়েটারের উপরে জ্যাকেট পড়েছে। তার পরেও বাতাসে শীরের কাপুনি ধরে যাচ্ছে। এদিকে শীতের তীব্রতা বাড়ায় গরম পোশাকের দোকানগুলোতে বেড়েছে ভীড়। বিক্রেতারা জানান, কয়েকদিন থেকে তুলনামূলক বিক্রি বেড়েছে।

বগুড়া থেকে মহসিন রাজু জানান, পৌষের শেষার্ধে এসে বগুড়ায় তীব্র শীত পড়েছে। গতকাল জেলায় তাপমাত্রার পারদ মৌসুমের সর্বনিম্ন ১১ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছে। তীব্র শীতে শিশু ও বয়ষ্ক মানুষের শীতজনিত রোগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। রিক্সা, অটোরিকশা চালক, দিনমজুর শ্রেনীর মানুষেরা নাকাল হয়েছে দারুণভাবে। তবে শীতের কাপড়ের ব্যবসা জমে উঠেছে। ফুটপাতের চায়ের দোকানেও বেড়েছে বিক্রি। নতুন ও পুরাতন শীত বস্ত্র, কম্বল বিক্রেতারা জানিয়েছেন। শীত না পড়লে শীতের কাপড় বিক্রেতাদের ব্যবসায় লস খেতে হয়। বগুড়ার কৃষি বিভাগে যোগাযোগ করে জানাগেছে, শীত মওশুমের প্রধান ফসল গম, আলু, পেঁয়াজের উৎপাদনের জন্য শীত দরকার। তবে দীর্ঘস্থায়ী ঘন কুয়াশা ও শৈত্য প্রবাহ ফসলের জন্য ক্ষতিকর।

ভুক্তভোগী পরিবহন চালকরা জানান, কুয়াশার কারণে রাস্তায় চলার সময় ঘন কুয়াশার কারণে দুই হাত পর পর দেখা যায় না এ কারণে দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। ধীরগতিতে চলাচল করতে গিয়ে গন্তব্যস্থলে পৌঁছাতে দেরি হচ্ছে। সকালের দিকে কাজের সন্ধানে বের হওয়া নি¤œ আয়ের মানুষরা সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে রয়েছেন। তারা জানান, কাজ না করলে খাওয়া নেই, তাই যত শীত হোক বের হতেই হবে, তবে এখন বাতাস আর কুয়াশা থাকার কারণে কষ্ট হচ্ছে, এখনো কেউ শীত বস্ত্র নিয়ে তাদের পাশে দাঁড়ায়নি বলে জানিয়েছেন পরিবহন, নির্মাণ, কৃষি শ্রমিকসহ দিনমজুররা। বিশেষ বেকায়দায় পড়েছেন চরাঞ্চলের মানুষেররা। নদী পেরিয়ে শহরে এসে কাজকর্ম করতে না পারায় অনেকে অর্ধাহারে থাকতে হচ্ছে তাদের। বিএনপির কিছু নেতা ব্যক্তিগত ফান্ড থেকে কিছু কম্বল বিতরণ করলেও জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের কর্মকর্তারা কোথাও শীতবস্ত্র বা কম্বল বিতরণ করেছেন এমন কোন খবর মেলেনি। এনজিওগুলোর তৎপরতা চোখে পড়েনি।

চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, চট্টগ্রাম অঞ্চলে কনকনে শীতে কাবু হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। আয় রোজগারে টান পড়েছে। দিনে এনে দিনে খাওয়া এসব মানুষ এখন চরম বিপাকে পড়েছে। তবে স্বল্প আয়ের এসব শ্রমজীবীদের পাশে নেই কেউ। গত কয়েকদিন ধরে শীতের প্রকোপ বাড়ছে। গতকালও দিনের বেশির ভাগ সময় সূর্যের দেখা মিলেনি। শ্রমজীবীদের কষ্টে পড়তে হয়। শীতে বেশি কষ্টে পড়েছেন রিকশা, ঠেলা ও ভ্যান চালক, কুলি, মজুর, নির্মাণ ও ঘাটশ্রমিকসহ হতদরিদ্র শ্রমজীবী ও কর্মজীবীরা। শীতের কারণে আগের মতো কাজও জুটছে না। দিনের বেশির ভাগ সময় বেকার থাকতে হয়েছে। তাতে দেখা দিয়েছে আর্থিক সঙ্কট। পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে তারা। শীতের প্রকোপের সাথে বেড়েছে নানা রোগবালাই। অপুষ্টির শিকার এসব কর্মজীবীরা তাতেই কাহিল হয়ে পড়েছেন। অনেক জ্বর, সর্দি, কাশি হাপানিসহ স্বাশকষ্ট জনিত রোগে ভুগছেন। একদিকে আর্থিক সংকট এবং অসু¯’তা অন্যদিকে শীতের দাপট।

এতে দিশেহারা অনেকে। শীত মোকাবেলায় নেই গরম কাপড়। যেখানে পরিবারের সদস্যদের পেটের ভাত জুটছে না সেখানে গরম কাপড় কেনা এসব গরীবদের জন্য বিলাসিতা। প্রতিবছর শীতের শুরুতে সরকারি, বেসরকারি বিভিন্ন সংস্থা এনজিও এবং রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকে শীতার্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর প্রতিযোগিতা শুরু হতো। তবে এবার এমন কিছু নেই। কোন কোন এলাকায় রাজনৈতিক দল এবং সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে কিছু শীতবস্ত্র বিরতণের খবর পাওয়া গেলেও তা অনেকটাই লোক দেখানে। নগরীতে মোট জনসংখ্যা প্রায় পৌনে এককোটি। এর বিশাল একটি অংশ হতদরিদ্র। নগরীর বস্তিগুলোতে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। আছে ঘাটশ্রমিক, কুলি মজুর, নির্মাণ শ্রমিক। নগরীর রিকশা চালকের সংখ্যা দুই লাখের বেশি। আছে হাজার হাজার ঠেলা ও রিকশা ভ্যান চালক। কর্ণফুলী নদীর ১৬টি ঘাট ছাড়াও চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ, আছদগঞ্জসহ বাণিজ্যিক এলাকা ও সওদাগরী পাড়ায় আছে হাজার হাজার কুলি, মজুর। নির্মাণ কাজে জড়িত শ্রমিকদের সংখ্যাও কম নয়। তারা এখন কঠিন সময় পার করছে। শীতের কারণে কাজ কমে গেছে। কাজ পেলেও শারীরিক দূর্বলতার কারণে অনেকে কাজ করতে পারছেন না। শীতের এসব মানুষের কর্মক্ষমতা কমে গেছে। তাতে আয় রোজগার বন্ধ। অর্ধাহারে অনাহারে কাটছে দিন। গ্রামীণ জনপদে শ্রমজীবীদের অবস্থা আরো কাহিল।

বরিশাল ব্যুরো জানায়, সর্বনিম্ন তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের ওপরে থাকলেও উত্তরের কনকনে হাওয়ায় বরিশালের জনজীবন প্রায় বিপর্যস্ত। সাথে হালকা থেকে মাঝারি কুয়াশার চাদরে গতকাল দিনভরই সূর্যের দেখা না মেলায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ৭ ডিগ্রী সেলসিয়াস নিচে নেমে যায়। ফলে জনজবীনে দুর্ভোগ ছিল বর্ণনার বাইরে। দিভরই জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকে বের হননি। আবহাওয়ার এ অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের বিশেষ সতর্কতার সাথে রাখতে ও থাকতে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক গণ। নতুর বছরের প্রথম দিন থেকেই বরিশালে ঠান্ডার দাপট বাড়তে শুরু করে।

তবে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা স্বাভাবিকের ওপরে থাকলেও গতকাল দুপুরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় পরিস্থিতির অস্বাভাবিক অবনতি ঘটে। ফলে বরিশাল অঞ্চলের স্বাভাবিক জীবন ব্যবস্থায় মারাত্মক বিপর্যয় নেমে এসেছে। ছিন্নমূল মানুষের দূর্ভোগ সব বর্ণনার বাইরে। খোদ বরিশাল মহানগরীর বস্তিবাসীদের দূর্ভোগেরও কেন সীমা ছিলনা। দিনের বেলাতেও নগরীর বেলপার্ক সহ অনেক এলাকাতেই আগুন জ¦ালিয়ে উত্তাপ নিতে দেখা গেছে বিভিন্ন বয়সি ও শ্রেণী পেশার মানুষকে।

সিলেট ব্যুরো জানায়, পৌষের শীত তুষের গায়, মাঘের শীতে বাঘ পালায়’ প্রবাদ থাকলেও এবার পৌষের শীতেই নাস্তানুবাদ সিলেট। পৌষের শেষার্ধেই জেঁকে বসেছে শীত। হাড়কাঁপা শীতে কাবু গ্রামাঞ্চলের মানুষ। বিকেল হলেই বেড়ে যায় ঠান্ডার ঝাপটা। সেই রাতে রাতে ঘন কুয়াশা। আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, আগামী কয়েকদিন এমন অবস্থা বজায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে শৈত্যপ্রবাহ না থাকলেও অনুভূত তাপমাত্রা কম থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। মৌসুমের শুরুতেই এমন শীতের তীব্রতার কারণে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। নগরে এখনও তেমন ঠান্ডা না পড়লেও গ্রাম এলাকায় শীত পড়েছে বেশি। বিশেষ করে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত লাগোয়া জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কানাইঘাট, জকিগঞ্জসহ সংশ্লিষ্ট উপজেলাগুলোতে খুব বেশি শীত অনুভুত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

এদিকে, শীতের তীব্রতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড় বাড়ছে গরম কাপড়ের দোকানেও। শহরের ফুটপাত থেকে শুরু করে অভিজাত বিপণিবিতানগুলোতে শীতবস্ত্র বিক্রি বেড়েছে। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষ ভিড় করছেন ফুটপাতে। জিন্দাবাজারের সিটি সেন্টারের ব্যবসায়ী লায়েক বলেন, মৌসুমের শুরুতেই দোকানে শীতবস্ত্র নিয়ে আসি। শীতের তীব্রতা বাড়তে শুরু করায় গরম কাপড় বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। অপরদিকে, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। বিশেষ করে বিএনপির মনোনয়ন প্রত্যাশীরা সিলেটর প্রত্যন্ত অঞ্চলে শীত বস্ত্র বিতরণ তাদের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছেন। অন্যান্য দলও শীতবস্ত্র বিতরণ করছে। তবে তা খুবই কম।

দিনাজপুর অফিস জানায়, হিমালয় কন্যার কোলে থাকা দিনাজপুর জেলায় প্রচন্ড শীতে স্বাভাবিক জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়েছে। অফিস ও অতি জরুরি কাজ ছাড়া দুপুর ১২ টা পর্যন্ত বাড়ির বাইরে বের হচ্ছে না মানুষজন। নুতন বছরের শুরুতে স্কুল কলেজে ছাত্র-ছাত্রীদের উপস্থিতি নাই বললেই চলে। শীতে কাবু নিম্ন শ্রেনীর বা দিনান্তের খেটে খাওয়া মানুষেরা ঘরের বাহিরে না আসতে পারায় অনেক উন্নয়ন মূলক কাজেও ভাটা পড়েছে। তিন বেলার জায়গায় এক বেলা খেতে পারলেই শীতের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য কাজে বের হচ্ছে না। এদিকে তীব্র শীতের কারনে গরম কাপড়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় মানুষজন সেকেন্ড হ্যান্ড কাপড়ের দিকে নারী পুরুষ ছুটছে। সরকারীভাবে কিছু কম্বল বিতরন করা হলেও তা অতি সামান্য।

জেলা প্রশাসন সুত্র মতে দিনাজপুরের ১৩ টি উপজেলা ও ৭টি পৌরসভায় সর্বসাকুল্লে ২৫ হাজার কম্বল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। তবে প্রয়োজন হলে আরো বরাদ্দ দেয়া হবে বলে জানান সুত্রটি। দিনাজপুর আবহাওয়া অফিস সুত্রে জানা গেছে চলতি বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে বুধবার তাপমাত্রার পারদ ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যা আগের দিনের তুলনায় দশমিক ৪ ডিগ্রি কম। প্রতিদিন তাপমাত্রা নামছে গত কয়েকদিন ধরেই। তাপমাত্রা কমার সাথে সাথে হিম শীতল বাতাস শরীরে কাটার মত বিদছে। আবহাওয়া অফিসের মতে চলতি জানুয়ারী মাসে তাপমাত্রা আরো কমার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকৃত ম্বৈত প্রবাহের কবলেও দিনাজপুর ঠাকুরগাঁও ও পঞ্চগড় জেলা পড়তে পারে।

রংপুর থেকে হালিম আনছারী জানান, তীব্র ঘন কুয়াশা আর প্রচন্ড হিমেল হাওয়ায় রংপুরে শীত জেঁকে বসেছে। গত দুদিন ধরে চলমান শৈত্য প্রবাহে একেবারেই কাবু হয়ে পড়েছে রংপুরসহ গোটা উত্তর জনপদের মানুষ। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও নিম্ন আয়ের মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। খড়কুটা জ্বালিয়ে আগুন পোহাতে গিয়ে গত এক সপ্তাহে শিশু ও নারীসহ ২ জন দগ্ধ হয়েছেন। তাদেরকে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

রংপুর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে গত দু’দিন ধরে রংপুরসহ পার্শ্ববর্তী জেলাগুলোতে বয়ে যাচ্ছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থা অব্যাহত থাকবে আরও দুই থেকে দিন। এ অঞ্চলে গত ২/৩ দিন ধরে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এবং বিকেল ৪টার পর থেকে রাতভর বৃষ্টির মত ঘন কুয়াশা ঝরছে। রাত যতই গভীর হয়, কুয়াশার মাত্রাও ততই বাড়তে থাকে। বৃষ্টির মত কুয়াশা ঝরতে থাকায় রাস্তায় যান বাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে মারাত্মক ভাবে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ঘন কুয়াশার সাথে প্রচন্ড হিমেল বাতাসে মানুষের হাত-পা জিম ধরে যায়। এতে করে মানুষ সাধারণ কাজকর্ম করতে পারছে না। নগরীতেও রিক্স-ভ্যান চালকরা একটু পর পর হোটেল কিংবা চায়ের দোকানে চুলার কাছে গিয়ে হাত শেকে নি্যেছেন। শিশু-বৃদ্ধরা ঘর থেকে বের হতে পারছেন না। দিনভর ঘরের মধ্যে গায়ে কাঁথা-কম্বল জড়িয়ে থাকতে হয়েছে।

বিশেষ করে গত ৩ দিন ধরে প্রচন্ড হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশা এ অঞ্চলের মানুষকে কাহিল করে দিয়েছে। এতে করে চরম বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। শীতবস্ত্রের অভাবে ঠান্ডায় কাবু হয়ে পড়ছেন শিশু ও বৃদ্ধসহ সব বয়সের মানুষ। খড়কুটো জ্বালিয়ে গভীর রাত পর্যন্ত শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা। শীতে গবাদি পশু নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। চরাঞ্চলসহ বিভিন্ন বাঁধে আশ্রয় নেয়া মানুষগুলো চরম মানবেতর জীবন যাপন করছে প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের অভাবে। বিশেষ করে ছিন্নমূল ও নি¤œআয়ের মানুষ গরম কাপড়ের অভাবে চরম বিপাকে পড়েছেন। সকাল থেকে গভীর রাত অবধি খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন তারা।

খুলনা ব্যুরো জানায়, খুলনাসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে শীতের প্রকোপ বাড়ছে। দিনের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বিশেষ করে রাতের বেলা ঠান্ডার তীব্রতা বেশি অনুভূত হচ্ছে। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষ। সকালের ঘন কুয়াশা ভেদ করে কাজে বের হওয়া রিকশাচালক, দিনমজুর, ঠেলাগাড়ি চালক ও হকারদের মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। একদিকে তাদের আয় কমছে, অন্যদিকে শীতের পোশাক, জ্বালানি এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের খরচ বেড়ে গেছে। ফলে বাধ্য হয়েই তারা শীত উপেক্ষা করে জীবিকার সন্ধানে ঘর থেকে বের হচ্ছেন।

একজন রিকশাচালক বলছিলেন, আগে দিনে ৪০০-৫০০ টাকা রোজগার হতো। এখন ৩০০ টাকাও কষ্টে হয়। খরচের চাপ এত বেশি যে শীত মানলে তো চলবে না। সরকারি-বেসরকারি সহায়তার অভাব এবং প্রয়োজনীয় শীতবস্ত্রের সংকট তাদের কষ্ট আরও বাড়িয়ে তুলেছে। অনেকেই পুরনো গরম কাপড়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। খুলনার স্থানীয় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো বলছে, দরিদ্র মানুষদের জন্য শীতবস্ত্র বিতরণ কার্যক্রম শুরু করা প্রয়োজন। তবে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ না নিলে শীতের তীব্রতা তাদের জীবনের জন্য আরও কঠিন হয়ে উঠবে।

কুড়িগ্রাম থেকে শফিকুল ইসলাম বেবু জানান, শীতে কাহিল হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের মানুষ। গত ২৪ ঘন্টায় তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেলেও কমেনি শীতের তীব্রতা। কুয়াশার সাথে হিমেল বাতাসে শীতকষ্টে পড়েছে মানুষজন। গত দু’দিন ধরে দেখা মিলছে না সূর্যেরও। গতকাল জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করেছে রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র। কনেকনে ঠান্ডায় শীত কষ্টে পড়েছে হতদরিদ্র, ছিন্নমূল ও স্বল্প আয়ের শ্রমজীবি মানুষেরা। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া লোকজন ঘর থেকে বাইরে বের হচ্ছেন না। দিনের বেলা সূর্যের উত্তাপ না থাকায় হিমেল বাতাসে কনকনে ঠান্ডায় জবুথবু হয়ে পড়েছে সমগ্র জেলা। এদিকে শীত নিবারনে জেলার ৯ উপজেলায় ৪৯ লাখ টাকা ও ১২ হাজার কম্বল বরাদ্দ দিয়েছে জেলা প্রশাসন। তা বিতরণ চলমান রয়েছে।

চুয়াডাঙ্গা থেকে মাশুকুর রহমান রিফাত জানান, প্রত্যেকদিন রাত বাড়ার সাথে সাথে কনকনে শীত অনূভুত হচ্ছে। সকালে রৌদ্রোজ্জল আবহাওয়া বিরাজ করলেও প্রচন্ড শীত অনূভুত হচ্ছে। জেলা জুড়ে মৃদু শৈত প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। শীতের প্রকোপে এ জেলার জনজীবন অস্থির হয়ে উঠেছে। ১৭ দিন পর তাপমাত্রা আবার কমে যাওয়ায় প্রচন্ড শীতে গোটা চুয়াডাঙ্গা জেলা থমকে গেছে। শীতের কারণে জেলার মানুষ বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। স্বাভাবিক কর্মজীবনে দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। গত ২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর হতে এ জেলায় তাপমাত্রা কমতে থাকে। গত ১৬ দিনে চুয়াডাঙ্গার তাপমাত্রা ১২ ডিগ্রী থেকে ১৪ ডিগ্রীতে ওঠানামা করছিলো। তাপমাত্রা আরো কমে যাওয়ার পূর্বাভাস দিচ্ছে চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণীর আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা।

তিনি জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা থাকায় প্রচন্ড শীত অনুভূত হচ্ছে। শীতের প্রকোপ আরো বেশী হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। এ জেলায় শীতের প্রভাবে জনজীবনে দূর্ভোগ বেড়েই চলেছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম জানান, প্রধান উপদেষ্টার তহবিল থেকে পাওয়া প্রায় ১০ হাজার কম্বল শীতার্ত মানুষের মধ্যে উপজেলার মাধ্যমে বিতরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া নগদ ৩০ লাখ টাকা সহায়তা বাবদ ৪টি উপজেলায় দেয়া হয়েছে। যা দিয়ে শীতে কর্মহীন মানুষের খাবারের ব্যবস্থার জন্য চেষ্টা চালানো হবে। এছাড়াও বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক প্রতিষ্ঠান জেলায় বিভিন্ন স্থানে শীত বস্ত্র বিতরণ করছে। তবে তা খুবই কম।

ময়মনসিংহের গফরগাঁও থেকে মুহাম্মদ আতিকুল্লাহ জানান, জেলার গফরগাঁও উপজেলা সদরসহ উপজেলার ১৫টি ইউনিয়নের গত দু’দিন একটানা দিনভর শীতে জনসাধারণ কাবু হয়ে পড়েছে। গত দুই দিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত রোদের কোন দেখা মিলেনি। সর্বস্তরের মানুষ শীতে কাবু হয়ে পড়েছে। অনেকেই আবার আগুন জ্বালিয়ে শীত থেকে বাঁচার চেষ্টা করছে। ভয়াবহ শীতের কারনে কৃষকরা তাদের বছরের প্রধান ফসল বোরো রোপন করতে পারছে না। চলতি বোরো মৌসুমে বোরো ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশংকা রয়েছে। গফরগাঁও রেলষ্টেশনে বিভিন্ন দৈনিক দিন মজুর শ্রেণীর লোক সরকারি ভাবে কম্বল পাওয়ার অপেক্ষা করছে। রিক্সাওয়ালাসহ সকল স্তরের নিম্ন শ্রেণীর হতদরিদ্ররা কষ্টের মধ্যে শীতের মধ্যে জীবন যাপন করছে। বিভিন্ন মহলের ধারনা এখনই সরকারি ভাবে শীত কাপড় ও কম্বল দেয়া দরকার । বেসরকারি ভাবে বিএনপি ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী গফরগাঁও উপজেলা শাখার উদ্যোগে হতদরিদ্রদের মধ্যে কম্বল ও শীতের কাপড় দেয়া শুরু হয়েছে। তবে তা খুবই সামান্য।