সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে চলছে গণগ্রেফতার


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৬, ২০২৪, ৬:০৮ পূর্বাহ্ণ /
সারাদেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানে  চলছে গণগ্রেফতার
  • গত ৯ দিনে সারা দেশে গ্রেফতার প্রায় ৫০০০, রাজধানীতে মোট গ্রেফতার ২ হাজার ২০৯ জন, চট্টগ্রামে মোট গ্রেফতার ৭৩৫, বরিশালে গ্রেফতার ১০২, নরসিংদীতে ১৫৩ জন গ্রেফতার, সিলেটে গ্রেফতার ১২৮ জন

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সারা দেশে চলছে গণগ্রেফতার। অনেক এলাকায় সাধারণ মানুষও এখন গ্রেফতার আতঙ্কে ঘর ছাড়া। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালিয়ে অনেক সাধারণ মানুষ যাদের নামে কোন মামলা নেই তাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এরপর নানান দেন-দরবার করে অনেককে মুচলেকার বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে।

এই গণগ্রেফতারের আড়ালে ব্যাপক বাণিজ্যও চলছে বলে অনেকের অভিযোগ। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযানে গত ৯ দিনে (১৭ থেকে ২৫ জুলাই) সারা দেশে প্রায় ৫০০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানী ঢাকায় ২ হাজার ২০৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বিভিন্ন মহানগর, জেলা ও থানা-পুলিশ সূত্রে গ্রেফতারের এ তথ্য জানা গেছে।

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, ভাঙচুর, সংঘর্ষ ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সারা দেশে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এই অভিযান ও গণগ্রেফতার চলছে। গ্রেফতার ব্যক্তিদের বেশির ভাগই বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর নেতা-কর্মী। কোথাও কোথাও পুরোনো মামলায়ও গ্রেফতার করা হচ্ছে।

সরকারি চাকরিতে কোটাপ্রথা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রের ব্যানারে শিক্ষার্থীরা লাগাতার কর্মসূচি শুরু করেন ১ জুলাই থেকে। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ঘিরে সংঘর্ষের পর বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে প্রায় সারা দেশে। এর পরদিন থেকে এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় হামলা, সংঘর্ষ, সহিংসতা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ আন্দোলনে ২০১ জনের মৃত্যুর খবর বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় এসব ঘটনায় অনেক মামলা হয়েছে। এখনো বিভিন্ন জায়গায় মামলা হচ্ছে।

ঢাকায় মামলা ২০১, গ্রেফতার ২২০৯
রাজধানী ঢাকায় সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুর, সহিংসতা ও নাশকতার ঘটনায় মহানগরের বিভিন্ন থানায় ২০১টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় এখন পর্যন্ত ২২০৯ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ডিএমপি মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের এডিসি কে এন রায় নিয়তি জানান, সহিংসতা, নাশকতার ঘটনায় গোয়েন্দা তথ্য ও সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে জড়িতদের শনাক্ত ও গ্রেফতার করা হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বুধবার ৭৩ মামলায় ১৭৫৮-কে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। আর গতকাল ১২৮ মামলায় ৪৫১ জনকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। এরমধ্যে ডিবি পুলিশ গ্রেফতার করেছে ২০১ জনকে। গ্রেফতারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।

অন্যদিকে ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (অপারেশনস) বিপ্লব কুমার সরকার বলেছেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় যারা সহিংসতা করেছে তারা যেন ঢাকা শহর না ছাড়তে পারে, সেই লক্ষ্যে ডিএমপি পরিকল্পনা করছে। আরও কিছু মামলা দায়ের হওয়ার প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, শাহবাগ থানায় করা মামলাগুলোর কাগজপত্রের তথ্য অনুযায়ী, একটি মামলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র আকতার হোসেনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আকতার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক সমাজসেবা সম্পাদক। তাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে ১৭ জুলাই গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেদিন দুপুরে ক্যাম্পাসে গায়েবানা জানাজা ও কফিনমিছিলের কর্মসূচি ছিল কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে ওঠা শিক্ষার্থীদের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের।

এই কর্মসূচিকে ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ হয়। এই সংঘর্ষের আগেই আকতারকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মামলাটি হয় ১৮ জুলাই। এ মামলায় নাম উল্লেখ করা একমাত্র আসামি তিনি। অন্য আসামিদের নাম উল্লেখ করা হয়নি। মামলার এজাহারে বলা হয়, অজ্ঞাতনামা বহুসংখ্যক কোটা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে ছাত্রদল ও ছাত্রশিবিরের সমর্থনে আন্দোলনকারীরা। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, অজ্ঞাতনামা ২ হাজার থেকে ২ হাজার ৫০০ জন কোটা আন্দোলনকারীকে আসামি করে ১৭ জুলাই শাহবাগ থানায় মামলা করেন ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল ইসলাম। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি।

এ মামলায় ছাত্রলীগ নেতা জাহিদুল দাবি করেন, কোটা সংস্কারের এক দফা দাবির আন্দোলনকে ঘিরে আন্দোলনকারীরা তাঁকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি ও হুমকি দিয়ে আসছিলেন। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে আন্দোলনকারীরা ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলের তার কক্ষে (২৩২ নম্বর কক্ষ) ১৫ জুলাই বিকেল চারটায় প্রবেশ করেন। পরে কক্ষে থাকা তার মালামাল, সার্টিফিকেটসহ প্রয়োজনীয় সব কাগজপত্র পুড়িয়ে দেন। এ ছাড়া অজ্ঞাত আন্দোলনকারীরা সেদিন সাধারণ শিক্ষার্থীদের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করার জন্য ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হলে প্রবেশ করে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান। পরে আন্দোলনকারীরা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ২০ থেকে ২৫টি কক্ষ ভাঙচুর করেন। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা হলের ভেতর ভাঙচুর করে তাদের ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা আটক করে রাখেন বলেও এজাহারে অভিযোগ করেন ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল শাখা ছাত্রলীগের এই নেতা।

চট্টগ্রামে ২৮ মামলায় আসামি ৪০ হাজার, গ্রেফতার ৭৩৫
চট্টগ্রাম থেকে রফিকুল ইসলাম সেলিম জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে জড়িতদের গ্রেফতারে তাদের ঘর বাড়িতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় মহানগরীর ১৬টি থানা এবং জেলার ১৫ টি থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে আরো ৬৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ নিয়ে মহানগরীতে ৪০৮ জন এবং জেলায় ৩২৭সহ মোট ৭৩৫জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মহানগরীর বিভিন্ন থানায় মামলা হয়েছে ১৭টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩০ হাজার আন্দোলনকারীকে। নগরীর হালিশহর থানায় ৩৭ জনকে এজাহার নামীয় এবং অজ্ঞাত আরো একশ থেকে দেড়শ জনকে আসামি করে বুধবার রাতে আরো একটি মামলার তথ্য জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের এডিসি (পি আর) কাজী মো. তারেক আজিজ। জেলায় ১১টি মামলায় আসামি করা হয়েছে ১০ হাজার আন্দোলনকারীকে। মামলার আসামিরা অজ্ঞাতনামা, আর এই সুযোগে পুলিশ যাকে ইচ্ছা তাকে গ্রেফতার করে মামলার আসামি বানিয়ে চালান করে দিচ্ছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। আবার অনেকেই মোটা অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে থানা থেকে ছাড়া পাওয়ার ঘটনাও ঘটছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অজ্ঞাত আসামির নামে এসব মামলাকে ফাঁদ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।

এই ফাঁদ পেতে কিছু অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা টাকা কামিয়ে চলেছেন। যদিও পুলিশের কর্মকর্তারা এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তাদের দাবি সুস্পষ্ট অভিযোগ এবং তথ্য প্রমাণ নিয়েই আসামিদের ধরা হচ্ছে। কাউকেই হয়রানি করা হচ্ছে না। এদিকে বিএনপির নেতারা অভিযোগ করেন শিক্ষার্থীদের অধিকার আদায়ের এই যৌক্তিক আন্দোলনে পুলিশ এবং ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা নিষ্ঠুরতম হামলা চালিয়ে ছাত্রদের হত্যা করেছে। গুলিবিদ্ধ হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী। পুলিশ হামলাকারী ছাত্রলীগের ক্যাডারদের আড়াল করে উল্টো নির্যাতিত ছাত্রদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে তাদের গণহারে গ্রেফতার করছে। একই সাথে বিএনপি এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতা কর্মীদের গণ গ্রেফতার করা হচ্ছে। গত কয়েক দিনে শুধু নগরীতেই সাড়ে তিন শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।

রাজশাহী থেকে রেজাউল করিম রাজু জানান, কোটা আন্দোলনে সহিংসতার অভিযোগ ১৭টি মামলা হয়েছে। এরমধ্যে সাতটি মামলা করেছে রাজশাহী মহানগর পুলিশ। বাকি ১০টি করেছে রাজশাহী জেলা পুলিশ। এসব মামলায় গত কয়েক দিনের অভিযানে ২৮২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার জামিরুল ইসলাম জানান, রাজশাহী মহানগর এলাকায় গত কয়েকদিনে সহিংসতা ও নাশকতার চেষ্টার অভিযোগ সাতটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় অজ্ঞাত ৯০০ জনকে আসামি করা হয়।

বগুড়া থেকে মহসিন আলী রাজু জানান, বগুড়ায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষের পর থেকে মোট মামলা হয়েছে ১২টি। এঘটনায় আসামির সংখ্যা ৯৪৫। গতকাল বিভিন্ন সময়ে অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এনিয়ে বগুড়ায় গ্রেফতারকৃত আসামির সংখ্যা ৮০ জন। বিভিন্ন মামলায় আসামিদের গ্রেফতারে চলছে পুলিশের চিরুনী অভিযান। গ্রেফতারের আতঙ্কে বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা এখন বাড়ি ছাড়া। গ্রেফতার অভিযানের ফলে পুলিশের বিরুদ্ধে বিএনপি নেতাকর্মীদের পরিবার পরিজনের সাথে দুর্ব্যবহারের অভিযোগ রয়েছে।

বরিশাল থেকে নাছিম-উল-আলম জানায়, কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বরিশাল মহানগরীর পুলিশের পাঁচটি মামলা ও মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দায়ের করা মামলায় ইতোমধ্যে ৮২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। পুলিশের দায়ের করা পাঁচটি মামলায় ৩৫ জনের নাম উল্লেখ থাকলেও অপর আসামিগণ অজ্ঞাত। বরিশালে মোট গ্রেফতার করা হয়েছে ১০২ জনকে।

কক্সবাজার থেকে শামসুল হক শারেক জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে সহিংসতায় কক্সবাজারে এ পর্যন্ত ছয়টি মামলা রেকর্ড করা হয়েছে। মামলায় প্রায় দেড় হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। জেলায় এ পর্যন্ত গ্রেফতার হয়েছে তিন শতাধিক। এসব মামলায় এজহার নামীয় আসামি করা হয়েছে ৩২৭ জন। অজ্ঞাত আসামি করা হয়েছে এক হাজার ১৬৮ জন।

দিনাজপুর থেকে মাহফুজুল হক আনার জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দিনাজপুরে সহিংসতার ছয়টি মামলা করা হয়েছে। এসব মামলায় ১৫০ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতপরিচয় তিন হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত গ্রেফতার করা হয়েছে ৪৭ জনকে।

সিলেট থেকে ফয়সাল আমীন জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে সহিংসতার পর গ্রেফতার আতঙ্কে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছে বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীরা। সেই সাথে তল্লাশীতে ভয়-শঙ্কা ছড়িয়ে পড়েছে পরিবার পরিজনে। এদিকে, সংঘর্ষ-হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় সিলেটে এ পর্যন্ত ১০টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ২৪১ জনের নাম। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১৬ হাজার জনকে। এসব মামলায় ১৭ জুলাই থেকে গতকাল পর্যন্ত ১২৮ জন আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গতকাল সন্ধ্যায় এসব তথ্য জানিয়েছেন সিলেট মেট্রোপলিটন পুলিশের মিডিয়া অফিসার অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মোহম্মদ সাইফুল ইসলাম।

খুলনা থেকে আসাফুর রহমান কাজল জানান, ১৭ জুলাই থেকে খুলনা মহানগরসহ জেলায় গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক নেতাকর্মীকে। খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ (কেএমপি) তথ্যানুযায়ী, ১৭ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই সকাল ৯টা থেকে পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোটা আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার ষড়যন্ত্রকারীদের সন্ত্রাস ও নাশকতা মামলায় খুলনা মহানগরীর ৮ থানায় ৪টি মামলা হয়েছে। এ ৪ মামলায় সর্বমোট ৯০জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা বিএনপি, জামায়াত এবং ছাত্র শিবিরের সদস্য।

কুষ্টিয়া থেকে বিশেষ সংবাদদাতা এস এম আলী আহসান পান্না জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনে পুলিশের ওপর হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গত ৭ দিনে অজ্ঞাতনামায় ৪টি মামলা হয়েছে। কুষ্টিয়া জেলার ৬টি থানায় বিভিন্ন এলাকা থেকে ৫২ জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে বলে গতকাল অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ নিশ্চিত করেছেন।

কুমিল্লা থেকে সাদিক মামুন জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কুমিল্লায় ভাংচুর ও সহিংসতার ঘটনায় পুলিশের দায়ের করা ৬টি মামলায় ৮ সহস্রাধিক মানুষকে আসামি করা হয়েছে। এসব মামলায় গত ৭ দিনে ১৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল বিষয়টি নিশ্চিত করেন কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুল হাসান রাফি।

সাভার থেকে সেলিম আহমেদ জানান, কোটা সংস্কারের আন্দোলনের ঘটনা নিয়ে সহিংসতায় সাভার ও আশুলিয়া থানায় পৃথক ১১ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এসব মামলায় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। এখনপর্যন্ত পুলিশ অভিযান চালিয়ে জামায়াত, বিএনপি নেতা ও ছাত্রসহ শতার্ধীক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে।

নোয়াখালী থেকে এহসানুল আলম খসরু জানান, বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আলহাজ্ব মোহাম্মদ শাহজাহানসহ এ জেলায় ৫৭জন নেতার বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে পুলিশ। এ মামলায় বিএনপি- জামায়াতের নেতারা ছাড়াও অজ্ঞাত আসামি রয়েছে দু’শতাধিক।

নরসিংদী থেকে মো. রফিকুল ইসলাম জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার ২৫ জুলাই বিকাল ৫টা পর্যন্ত নরসিংদী জেলায় ছয়টি থানার মধ্যে চারটি থানায় সহিংসতার ঘটনায় ১১টি মামলা ও ১৫৩ জন গ্রেফতার হয়েছে। তবে এছাড়া এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গতকাল বৃহস্পতিবার ১৫২ জনসহ মোট ৪৬৯ জন পলাতক বন্দি আদালতের মাধ্যমে আত্মসমর্পণ করেছে।

ফরিদপুর থেকে আনোয়ার জাহিদ জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ফরিদপুরে কয়েকটি সহিংসতার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়েছে। এ চারটি মামলায় গতকাল পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৫২ জনকে। এর মধ্যে গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে গ্রেপ্তার করা হয়েছে দুই জনকে।

এছাড়া ওই চার মামলার আসামি ব্যতিত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে এ পর্যন্ত আরও ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ পর্যন্ত কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সর্বমোট ৬৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে বেশিরভাগই বিএনপি ও তার অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী।

জামালপুর থেকে নূরুল আলম সিদ্দিকী জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সহিংসতার ঘটনায় জামালপুর ১০টি মামলা হয়েছে। এতে আসামি করা হয়েছে ২৮৪ জনকে। গ্রেফতার হয়েছে ২৪ জন। পুলিশ বাদী হয়ে ৯টি এবং জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি খাবীরুল ইসলাম খান একটি মামলা করেন।

ঝালকাঠি থেকে মুহাম্মদ আব্দুর রশীদ জানান, এ জেলায় গ্রেফতার আতঙ্কে রাতে ঘরে ঘুমাতে পারছেন না বিএনপি নেতাকর্মীরা। প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে বিএনপি নেতাকর্মীদের ঘরে ঘরে পুলিশ গিয়ে তল্লাশী চালাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে জেলা বিএনপি নেতৃবৃন্দ। পাশাপাশি কোটা সংস্কার আন্দোলনে জেলার রাজাপুরের বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করায় পালিয়ে বরগুনায় নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে গ্রেফতার ৪০।

পঞ্চগড় থেকে মো.সম্রাট হোসাইন জানান, সহিংসতার ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। গত বুধবার রাতে তাদেরকে আটক করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে পঞ্চগড় সদর থানার অফিসার ইনচার্জ প্রদীপ কুমার রায় জানান, ঘটনার পর থেকে প্রায় ৫০ জনকে আটক করা হয়েছে।

বরগুনা থেকে জাহাঙ্গীর কবীর মৃধা জানান, চলমান কোটাবৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে নাশকতার অভিযোগে বিশেষ ক্ষমতা আইনে বরগুনা জেলার বিভিন্ন থানায় ৪০জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বরগুনা জেলা পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার মোজাম্মেল হোসেন রেজা।

নাটোর থেকে মো. আজিজুল হক টুকু জানান, কারফিউ জারির ৬ষ্ঠ দিনে গতকাল বিএনপি-জামায়াতের ১২ নেতাকর্মীকে আটক করেছে জেলা পুলিশ। এ নিয়ে আটকের সংখ্যা ৮৪।

ঠাকুরগাঁও থেকে মাসুদ রানা পলক জানান, বিভিন্ন নাশকতামূলক কর্মকাÐে অংশগ্রহণ, পরিকল্পনা ও এর সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তিন দিনের চিরুনি অভিযানে ঠাকুরগাঁয়ে চারটি মামলায় জেলা বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান পয়গাম আলিসহ ২৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি এবিএম ফিরোজ ওয়াহিদ বলেন, ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলনের নামে নাশকতাকারীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ থেকে মো. জাহাঙ্গীর শাহ্ বাদশাহ্ জানান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচিকে ঘিরে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনায় কিশোরগঞ্জে মোট পাঁচটি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। এসব মামলায় মোট এক হাজার ৯৮৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদিকে গত এক সপ্তাহে জেলাজুড়ে অভিযান চালিয়ে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মোট ৯৬ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

কিশোরগঞ্জ (নিকলী) থেকে মো. হেলাল উদ্দিন জানান, উপজেলা কারপাশা বিএনপির সভাপতি সেলিম তালুকদার ও জেলা ছাত্রদলের সহ-সভাপতি এবং সিংপুর উপজেলার যুগ্ম আহŸায়ক শহিদুজ্জামান তারেককে গ্রেফতার করে পুলিশ। কারপাশা ইউনিয়নে যুগ্ম আহŸায়ক এবং উপজেলা যুবদলের সদস্য সচিব মো. সাইফুল ইসলামের বাড়িসহ অনেক নেতাকর্মী বাড়িতে পুলিশ হানা দেয়।

ধামরাই (ঢাকা) থেকে মুহাম্মদ আনিস উর রহমান স্বপন জানান, সা¤প্রতিক ঘটনায় ঢাকার ধামরাই থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এ মামলায় আসামি করা হয়েছে নামীয় ৭৬ জন। এ পর্যন্ত ১২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

মির্জাপুর (টাঙ্গাইল) থেকে মো. জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালীন বিগত ৭ দিনে ১৮ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত সবাই বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী বলে জানা গেছে। তাদের মির্জাপুর থানার পুরোনো দুটি নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে।

সখিপুর (টাঙ্গাইল) উপজেলা সংবাদদাতা জানান, বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের ৪ নেতা আটক করেছে সখিপুর থানা পুলিশ। এরা হলেন-নজরুল ইসলাম, জামাল হোসেন, বাবুল হোসেন, সাগর আহমেদ।