জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি। দেশিবিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে প্রতিদিনই অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছে। টার্গেট কিলিং থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি, ছিনতাই, টেন্ডারবাজি, জমিদখল, আধিপত্য বিস্তারে হামেশাই বাড়ছে এসব অস্ত্রের ব্যবহার। সন্ত্রাসীর কাছে থাকা অবৈধ অস্ত্রের সঙ্গে নিরাপত্তা হুমকিতে আলাদা মাত্রা যোগ করেছে এখনো উদ্ধার না হওয়া লুটের হাজারের বেশি অস্ত্র।
এ অবস্থায় জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে অনেকেই অস্ত্রের লাইসেন্সের আবেদন করেছেন। গানম্যান পেয়েছেনও অনেকে। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশে অপরাধীদের হাতে থাকা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার না হলে ঝুঁকির মধ্যেই থাকবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শহীদ শরিফ ওসমান হাদির মতো আরও অনেকেই অস্ত্রের নিশানায় পড়তে পারেন।
পুলিশের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, দেশব্যাপী চলমান অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-তে অস্ত্র উদ্ধারের সংখ্যা কম হওয়ায় এ বিষয়ে জোর দিতে কঠোর নির্দেশনা দিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সাঁড়াশি অভিযান আরও জোরদারের মাধ্যমে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরও। ডিবির সব বিভাগের অস্ত্র উদ্ধার টিমকে আরও তৎপর হতে বলা হয়েছে। নজরদারিতে আনা হচ্ছে পুরোনো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদেরও।
পুলিশ সদর দপ্তরের অতিরিক্ত আইজিপি (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার পুলিশের রুটিন কাজ। গত বছরের ৫ আগস্টের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও লাইসেন্সধারী অনেক ব্যক্তির অস্ত্র লুট হয়েছে। সীমান্ত পথে অস্ত্রের চালান আসার খবরও আমরা পেয়েছি। এসব অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহারও বাড়ছে। এসব অস্ত্র উদ্ধারে সব ইউনিটকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। অপারেশন ডেভিল হান্ট ফেজ-২-তে অস্ত্র উদ্ধার আশানুরূপ হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে বলা হয়েছে স্পেশাল ড্রাইভ বাড়াতে।’
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। পুরোনো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। সন্ত্রাসীরা যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সেজন্য যা যা দরকার সবই করা হচ্ছে। আশা করি দ্রুতই অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের সংখ্যা অনেক বাড়বে।’
গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছেন, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) আট বিভাগে ৫০ থানা এলাকায় সাড়ে চার শর বেশি তালিকাভুক্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রয়েছে। এসব সন্ত্রাসী ও তাদের সহযোগীদের কাছে অবৈধ অস্ত্র আছে দেড় হাজারের বেশি। সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রয়েছে মিরপুর, মোহাম্মদপুর, মতিঝিল, শ্যামপুর ও যাত্রাবাড়ী এলাকায়। এ পাঁচ এলাকাকে রেড জোন হিসেবে চিহ্নিত করে অভিযানে নামতে যাচ্ছে ডিবি পুলিশ।
এসব এলাকায় তৎপর সন্ত্রাসীদের বিষয়ে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়েছে। টার্গেট কিলিংয়ের জন্য হুমকি-এমন সন্ত্রাসীদের তালিকা করা হচ্ছে। বিভিন্ন টার্গেট কিলিংয়ে মোহাম্মদপুর, ডেমরা ও রূপগঞ্জের চনপাড়ার শুটাররা অংশ নেওয়ায় এসব এলাকা ঘিরেও বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে পুলিশ। সূত্র বলছেন, গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী ডিএমপিতে সবচেয়ে বেশি অস্ত্র রয়েছে মতিঝিল বিভাগে। এর পরই ওয়ারী, তেজগাঁও এবং রমনা বিভাগ।