সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়কের লামাকাজী এম এ খান সেতুতে টোল আদায় বন্ধের দাবিতে সুনামগঞ্জের পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের যৌথ উদ্যোগে আগামীকাল বুধবার সকাল ৬টা থেকে এ সড়কে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ডাক দেয়া হয়েছে। এতে সমর্থন দিয়েছেন সিলেট জেলা পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠন।
লামাকাজী অ্যাডমিরাল এম এ খান সেতু নির্মাণের ৪০ বছর পার হয়েছে। সেতুটিতে ৩৪ বছর ধরে চলছে টোল আদায়। এরই মধ্যে আদায় হয়েছে নির্মাণ ব্যয়ের ১২ থেকে ১৫ গুণ। তবু হচ্ছে না টোলমুক্ত।
পরিবহন মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতারা জানান, সুনামগঞ্জ-সিলেট আঞ্চলিক মহাসড়কের লামাকাজী সেতুতে দীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে টোল আদায় করা হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা এ সেতুটিতে টোল আদায় কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু দু’মাস পাঁচ দিন বন্ধ থাকার পর সিলেটের সড়ক ও জনপথ কর্তৃপক্ষ লামাকাজী সেতুতে টোল আদায়ের টেন্ডার আহ্বান করে। এ টেন্ডার বাতিলের দাবিতে সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়ক পরিবহন মালিক ও শ্রমিক ইউনিয়ন, সুনামগঞ্জের সিএনজি, অটোরিকশা, হিউম্যান হোলার্স, সুজুকি, লেগুনা, বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস, ট্রাক মালিক সমিতি ও শ্রমিকরা যৌথভাবে বুধবার (২৩ অক্টোবর) সকাল ৬টা থেকে যান চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জ জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সভাপতি জুয়েল মিয়া দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘সাধারণত নির্মাণ ব্যয় উঠার পর সেতু টোলমুক্ত করা হয়। কিন্তু ৩৪ বছর পরও লামাকাজী সেতুতে টোল আদায় হচ্ছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর টোল আদায় বন্ধ ছিল। সেতু ইজারার মেয়াদও শেষ হয়েছে। তবে আবারো ইজারার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। এ জন্য তারা আন্দোলনে নেমেছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমরা ১৭ অক্টোবর সেতুটি টোলমুক্ত করার দাবি জানিয়ে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার বরাবরে স্মারকলিপি দিয়েছি। কিন্তু এরপরও কার্যকর ব্যবস্থা না নেয়ায় সুনামগঞ্জের সর্বস্তরের পরিবহন মালিক ও পরিবহন শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কর্মবিরতির ঘোষণা দেয়া হয়েছে। তবে এ সময় অ্যাম্বুলেন্সসহ বিদেশী যাত্রীদের গাড়ি চলাচল করতে পারবে। দাবি না মানা পর্যন্ত এ কর্মসূচি চলবে।’
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) থেকে জানা যায়, এরশাদ সরকারের আমলে ১৯৮৪ সালে সাত কোটি ৬১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ২২৬ মিটার দীর্ঘ অ্যাডমিরাল এম এ খান সেতু নির্মাণ শুরু হয়। ১৯৯০ সাল থেকে শুরু হয় টোল আদায়।
সাবেক ইজারাদার ও সংশ্লিষ্ট একাধিক ঠিকাদাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, লামাকাজী সেতুর সবশেষ ইজারাদার ২০২১ সালে প্রায় ১৮ কোটি টাকার টোল আদায় করেন। এবার নয় কোটি ৭২ লাখ টাকায় ইজারার প্রস্তাব করা হয়েছে। অথচ সেতুটি থেকে কম হলেও এক শ’ কোটি টাকা টোল আদায় হয়েছে।
এ ব্যাপারে সড়ক ও জনপথ বিভাগ সওজ সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন দৈনিক নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘১০০ মিটারের চেয়ে বড় সেতুতে টোল আদায়ের নীতিমালা থাকলেও কত দিন আদায় হবে, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নীতিমালা নেই। টোলমুক্ত করার বিষয়ে আমাদের কিছু করার নেই। কারণ এটি নির্ভর করে সেতু মন্ত্রণালয়ের ওপর। তবে যেখান থেকে রাজস্ব আসে, সরকার সাধারণত সেগুলো বন্ধ করতে চায় না। কারণ বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত সেতু নির্মাণ হচ্ছে। সব সেতু থেকে টোল আদায় করা হয় না।’
তিনি বলেন, ‘সেতুর টোল আদায় বন্ধের দাবিতে ধর্মঘট আহ্বান হলেও এ বিষয়টি আমার জানা নেই। আপনার মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারলাম। কেউ আমাদের সাথে যোগাযোগ করলে আমরা বিষয়টি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়কে অবহিত করব।’