সুন্দরবনে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে অসাধু মাছ শিকারিদের অপতত্পরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। অবৈধভাবে প্রবেশ করে মাছ শিকারিরা সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে অবাধে বিষ প্রয়োগ করে মাছ শিকার করছে। এতে চিংড়িসহ সুন্দরবনের ৩০০ প্রজাতির মত্স্যসম্পদ হুমকির মুখে পড়েছে। এদিকে, সুন্দরবনে অবৈধভাবে প্রবেশ করে বিষ দিয়ে মাছ শিকারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘গ্লোবাল খুলনা’।
সেই সঙ্গে সুন্দরবনে মাছ শিকারে জড়িতদের কঠোর শাস্তি প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ১ জুন থেকে আগামী ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সুন্দরবন বন বিভাগ তিন মাসের জন্য সুন্দরবনে মাছ ধরা ও ভ্রমণ নিষিদ্ধ করেছে। এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও একশ্রেণির অসাধু মাছ শিকারি রাতের আঁধারে সুন্দরবনের নদী-খালে প্রবেশ করে বিষ দিয়ে চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ শিকার করছে। এতে হুমকির মুখে পড়েছে সুন্দরবনের চিংড়িসহ বিভিন্ন প্রজাতির সাদা মাছ।
সূত্র জানায়, গত শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বন বিভাগের কর্মীরা অভিযান চালিয়ে সুন্দরবনের কুলুখালীর ভারানী এলাকা থেকে ২৭০ কেজি বিষ প্রয়োগ করা চিংড়িসহ একটি নৌকা আটক করে। এছাড়া খুলনাগামী যাত্রীবাহী লঞ্চে অভিযান চালিয়ে ৬০ কেজি অপদ্রব্য মিশ্রিত চিংড়ি আটক করা হয়।
একই দিন রাত ১২টার দিকে বজবজ বন টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. তানজিলুর রহমানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে খড়কুড়ি নদীতে অভিযান চালিয়ে হরিণ ধরার ফাঁদ, চারটি চাকু ও বরফসহ হরিণ ধরার সরঞ্জাম এবং একটি নৌকা আটক করা হয়। এ সময় বন বিভাগের অভিযান টের পেয়ে হরিণ শিকারিরা পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে গত ২ জুন রাত ১টার দিকে কয়রার খাশিটানা বন টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বে ছেড়ারমুখে অভিযান চালিয়ে একটি নৌকাসহ বিষ প্রয়োগ করা ৮৫ কেজি চিংড়ি আটক করা হয়।
এর আগে গত গত ১১ জুন বন বিভাগের কর্মীরা সুন্দরবনে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করে অবৈধভাবে মাছ ধরার অপরাধে দুটি নৌকা আটক করে। আটককৃত নৌকা থেকে অবৈধ ভেশালজালসহ কীটনাশক জব্দ করা হয়। তবে বন বিভাগের অভিযান টের পেয়ে মাছ শিকারিরা পালিয়ে যায়।
অন্যদিকে গত ২৬ জুন রাতে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কচিখালী ও কটকা অভয়ারণ্য কেন্দ্রের দুধরাজ খালে মাছ শিকারের অপরাধে চার জেলেকে আটক করে বন বিভাগের কর্মীরা। এ সময় জেলেদের ব্যবহৃত একটি ইঞ্জিনচালিত নৌকা, মাছ ধরার জাল এবং জেলেদের ব্যবহৃত বেশকিছু মালামাল জব্দ করে বনরক্ষীরা। আটক জেলেরা হলেন বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার চরদুয়ানী এলাকার আব্দুল জলিল, সাইফুল ইসলাম, মুসা মিয়া ও খুলনার রূপসার মুরাদ হোসেন।
গতকাল শনিবার এক বিবৃতিতে গ্লোবাল খুলনার আহ্বায়ক শাহ মামুনুর রহমান তুহিন ও নেতৃবৃন্দ গভীর উদ্বেগ ও শঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবনে বিষ দিয়ে মাছ ধরার ফলে প্রায় ৩০০ প্রজাতির মাছের মধ্যে খুব সামান্যই বর্তমানে টিকে আছে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন পত্রপত্রিকা ও স্থানীয় অধিবাসীর কাছ থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী নিষিদ্ধ সময়ে শুধু কয়রায় সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বনরক্ষী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, কথিত সাংবাদিক ও মাছ ব্যবসায়ীরা জড়িত। হিরণ পয়েন্ট থেকে কাঠকাটা পর্যন্ত বিভিন্ন খালে বিষ দিয়ে মাছ ধরা হয়। বনরক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জেলে ও মাছ মাদারবাড়িয়া বটতলা থেকে বিষ দিয়ে ধরা সাড়ে ৩৭ মণ চিংড়িসহ সাত জনকে আটক করা হয়েছে। কিন্তু প্রতি রাতে এখানে ১০-১২ লাখ টাকার চিংড়ি বিষ দিয়ে মারা হয়। এখানে বড় ধরনের চক্র রয়েছে। কারা কারা এর সঙ্গে জড়িত এ তথ্য উদ্ঘাটন করে কঠোরভাবে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
গ্লোবাল খুলনার নেতৃবৃন্দ আরো উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, সুন্দরবনের অভ্যন্তরে বিষ প্রয়োগে মাছ শিকারে দুষ্কৃতকারী চক্রের অবাধ তৎপরতা ক্রমেই বাড়ছে। ম্যানগ্রোভ বনের বিভিন্ন নদ-নদী ও খালে বিষ প্রয়োগে মৎস্য শিকারের প্রবণতায় হুমকির মুখে পড়েছে বনাঞ্চলে মৎস্য সম্পদের প্রজনন ও উৎপাদন।
পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা স্টেশন কর্মকর্তা (এসও) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে গোপনে মাছ ধরার সময় আটক মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
খুলনা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) এ জেড এম হাছানুর রহমান বলেন, অবৈধ মাছ শিকারিদের বিরুদ্ধে বন আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত সুন্দরবনের সম্পদ রক্ষায় বন বিভাগের অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।