সৈয়দপুরে কাজল গড়ে তুলেছে একটি দুম্বার খামার


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুলাই ২৯, ২০২৫, ১২:৩৯ অপরাহ্ণ /
সৈয়দপুরে কাজল গড়ে তুলেছে একটি দুম্বার খামার

নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার বোতলাগাড়ী ইউনিয়নের একেবারে প্রত্যন্ত এক পল্লী কাঠারীপাড়া। গড়ে উঠেছে মরুর পশু দুম্বার একটি ছোট খামার। আর এই দুম্বা’র খামারটি গড়ে তুলেছেন উল্লিখিত এরাকার বাসিন্দা রবিউল ইসলাম কাজল (৩৫)। তাঁর বাড়ি পাশে সৌদি আরবের পশু দুম্বার খামার করে এলাকায় ব্যাপক সাড়া ফেলেছেন তিনি। আটটি দুম্বা নিয়ে খামারে যাত্রা শুরু হলেও বর্তমানে তাঁর খামারে ছোট বড় মিলে দুম্বা রয়েছে ২৫টি।

গত কোরবানির ঈদে অনলাইনে পাঁচটি দুম্বা সাড়ে ছয় লাখ টাকায় বিক্রি করেছেন তিনি। প্রতিদিন ভিনদেশী ও নতুন পশুর এই খামার দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন নানা বয়সী মানুষ। খামার মালিক খামারটি সম্প্রসারণ করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। সেই সঙ্গে এটি থেকে নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন তিনি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উল্লিখিত এলাকার মৃত. আব্দুর রহমানের ছেলে রবিউল ইসলাম কাজল। চার ভাই ও দুই বোনের সবার ছোট তিনি। বিবাহিত কাজল এক ছেলে সন্তানের জনক কাজল। পারিবারিক অস্বচ্ছলতার কারণে এসএসসি পাশের আগেই লেখাপড়ায় ইতি টানতে হয় তাঁকে।

মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) সরেজমিনে দুম্বা খামারের মালিক মো. রবিউল ইসলাম কাজলের সঙ্গে কথা হলে। তিনি বলেন, তাঁর এক বড় ভাই রেজাউল করিম নয়ন। তিনি সিঙ্গাপুর প্রবাসী। তিনি সেখানে একটি বড় পরিসরের দুম্বার খামার পরিদর্শন করেন। সফল ওই খামারটি কথা জানান, দেশে থাকা ছোট ভাই রবিউল ইসলাম কাজলকে।

মূলত ওই বড় ভাইয়ের চিন্তাভাবনা, পরামর্শ ও দিক নির্দেশনায় দুম্বা খামার করার উৎসাহ পান কাজল। এর এক পর্যায়ে বড় ভাইয়ের সার্বিক সহযোগিতায় তুর্কি জাতের আটটি দুম্বা সংগ্রহ করেন। তন্মধ্যে দুইটি পুরুষ দুম্বা ও ছয়টি মা দুম্বা ছিল। নিজের বাড়ির পাশে খামারে ১২ লাখ টাকায় সৌদি আরব থেকে নিয়ে আসা দুম্বাগুলোকে লালন পালন শুরু করেন তিনি। গরু-ছাগলের মতো ঘাস, গমের ভুষি, ভুট্টার দানা, ছানি (খড় কাটা), খৈল ইত্যাদি সবই খায় তারা। প্রথম কয়েক দিন মরুর দেশের পশু দুম্বা তাঁর খামারে নিয়ে আসার পর তাদের মধ্যে অস্থিরতাভাব ছিল।

পরবর্তীতে সে সব এখানকার পরিবেশে অভ্যস্ত হয়ে পড়ে। পোষ মানতে শুরু করে। এভাবে দুম্বাগুলো ছয় মাস লালন পালনে বাচ্চা দেওয়া শুরু করে। গত তিন বছর সময়ে লালন পালনে তাঁর খামারে দুম্বা সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২৫টিতে এখন। এছাড়াও গত কোরবানির ঈদে সাড়ে ছয় লাখ টাকা পাঁচটি দুম্বা অনলাইনে বিক্রি করেছেন তিনি। খামারে যে ২৫টি দুম্বা রয়েছে সে সবের বাজার মূল্য ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাক। তিনি বলেন, দুম্বার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক বেশি। খামারে দুম্বাগুলো লালন পালনের জন্য মাসিক বেতনে দুইজন লোক রয়েছেন।

তাদের মধ্যে পুরুষ শ্রমিকের মজুরী ১৫ হাজার টাকা ও নারী শ্রমিকের মজুরী নয় হাজার টাকা দিতে হয়। তিনি জানান, বর্তমানে খামারে থাকা ২৫টি দুম্বা প্রায় দুই হাজার টাকার খাবার প্রয়োজন হয় প্রতিদিন। বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সিমেন্টের পিলার দিয়ে তৈরি করা একটি টং ঘরে ২৫টি দুম্বা গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে। স্বল্প পরিসরের ঘরে দুম্বাগুলোর জায়গার সংকুলান হচ্ছে না। তাই খামার মালিক সেটি সম্প্রসারণের কাজে হাত দিয়েছেন।

কাজল বলেন, বড় ভাইয়ের দিক নির্দেশনা ও পরামর্শে এবং আমার প্রবল আগ্রহে খামারটি গড়ে তোলা হয়। আগামীতে আমার খামারে ছোট বড় মিলে ৫০টি দুম্বা লালন পালনের লক্ষ্য স্থির করেছি। আশা করি, আমার সে আশা পূরণ হবে। তিনি আরো বলেন, আমার খামারে পাশে অন্য লোকের জমি রয়েছে। তারা হিংসার বশবর্তী আমার খামার যাওয়া আসার রাস্তাটি বাঁশের বেড়া দিয়ে বন্ধ করে দিয়েছে। ফলে খামারে থাকা দুম্বার খাবারসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় উপকরণ আনা নেওয়ায় চরম দূর্ভোগে পড়েছেন তিনি। তিনি তাঁর খামারে প্রবেশের রাস্তার প্রতিবন্ধকতার বিষয়টির সুষ্ঠু সমাধানের জন্য স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। এদিকে, মরুর পশু দুম্বাগুলো স্বচক্ষে এক নজর দেখতে দূর দূরান্ত থেকে নানা বয়সী মানুষ ভীর করেন খামারে প্রতিদিন।

সৈয়দপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা হেমন্ত কুমার রায় বলেন, আমি নিজেই কয়েক দফায় রবিউল ইসলাম কাজলের দুম্বার খামারটি পরিদর্শন করেছি। আমরা দাপ্তরিকভাবে তাকে সব রকম সহযোগিতা দিচ্ছি। আশা করি তিনি দুম্বার খামারটি পরিচালনা করে লাভবান হবেন। তাঁর মতো অন্য কোন উদ্যোক্তাও দুম্বার খামার করতে আগ্রহী হলে আমরা তাদেরকে সার্বিক সহযোগিতা দিবো বলে জানান তিনি।