স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে পারবে জনগণ- ডা: শফিকুর রহমান


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : জুন ২৮, ২০২৫, ৫:৪৫ অপরাহ্ণ /
স্থানীয় নির্বাচন আগে হলে কমিশনের বিশ্বাসযোগ্যতা যাচাই করতে পারবে জনগণ- ডা: শফিকুর রহমান

নূর ফাউন্ডেশনের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের আমির ডা: শফিকুর রহমান : ছবি সংগৃহীত

সিলেট সংবাদদাতাঃ জাতীয় নির্বাচনের আগে স্থানীয় নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান। তিনি বলেছেন, স্থানীয় সরকারের সব স্তরে পুরোপুরি একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করছে। সারা দেশে জনগণ চরম ভোগান্তির মাঝে রয়েছে। অতি তাড়াতাড়ি এর সমাধান না হলে জন দুর্ভোগ বাড়বে। এ কারণে তাড়াতাড়ি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে যাওয়া উচিত।

জামায়াত আমির বলেন, এজন্য আমরা জোরালো আওয়াজ তুলেছি যে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে যদি স্থানীয় সরকার নির্বাচন হয়ে যায় তাহলে এর মাধ্যমে এই নির্বাচন কমিশনের বিশ্বাস যোগ্যতা এবং দক্ষতার প্রমাণ জাতি যাচাই করতে পারবে।

তিনি বলেন, এখন স্থানীয় সরকারের চারটি স্তরের কোথাও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি নেই। কিছু কিছু ইউনিয়ন পরিষদে জনপ্রতিনিধি থাকলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে জনপ্রতিনিধিরা কাজ করতে পারছেন না। তিনি বলেন, দেশের মানুষ একটা (হিউজ সাফারিং) চরম ভোগান্তির মাঝে রয়েছে। এই দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পেতে দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, রাজনৈতিক দলগুলোরও দায়িত্ব রয়েছে।

গতকাল সন্ধ্যায় সিলেটে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন আমিরে জামায়াত। এ সময় বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের আলোচিত নানা বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ইসলামী দলগুলো নিয়ে একটি নির্বাচনী মোর্চা গঠনের জোর তৎপরতা চলছে। আমরা এর গুরুত্বপূর্ণ ‘ওয়ার্কিং পার্টনার’ হিসেবে কাজ করছি। এটা ক্ষমতা ধারণ বা গ্রহণ করার জন্য নয়, এটা মানবতার মুক্তির জন্য, আল্লাহর কুরআনের জন্য এবং আখেরাতে নাজাতের জন্য।

এর আগে তিনি নগরীর কুদরত উল্লাহ মসজিদ কমপ্লেক্সে ‘অর্থসহ আমপারা মুখস্ত প্রতিযোগিতা ২০২৫ এর পুরস্কার বিতরণী’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন। নূর ফাউন্ডেশনের সভাপতি দৈনিক জালালাবাদের সম্পাদক মুকতাবিস উন নূরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে তিনি কুরআনকে জানার সাথে মানার সম্পর্ক না থাকলে আল্লাহ তায়ালা ভয়ঙ্কর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন, উল্লেখ করে বলেন, আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা কুরআনের কিছু অংশকে কি গ্রহণ করেছো আর কিছু অংশকে ছেড়ে দিয়েছো, তাহলে তোমাদের জন্য কঠিন শাস্তি অপেক্ষা করছে।’

অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন, ভাষাসৈনিক ও কেমুসাস সভাপতি অধ্যক্ষ মাসউদ খান, সিলেট ইসলামী সোসাইটির চেয়ারম্যান বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ফজলুর রহমান, জাতীয় ইমাম সমিতির মহাসচিব মাওলানা শাহ নজরুল ইসলাম, বিশিষ্ট ইসলামি চিন্তাবিদ ইউকে প্রবাসী হাফিজ শফিকুর রহমান মাদানী ও ইকরা ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান ইউকের আইনজীবী ব্যারিস্টার নাজির আহমেদ।

কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদের খতিব হাফিজ মিফতাহ উদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠান শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

ন্যায়বিচার পাওয়া সব মজলুমের অধিকার

কুলাউড়া (মৌলভীবাজার) সংবাদদাতা জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান বলেছেন, কুলাউড়ায় নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার আনজুমের পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায়। শুধু আনজুমের পরিবার নয় এ দেশের প্রতিটি মজলুম পরিবার যেন ন্যায়বিচার পায়। ন্যায়বিচার যেন নিশ্চিত হয়। কোনো নয়ছয় বরদাস্ত করা হবে না। ন্যায়বিচার পাওয়া মজলুমের অধিকার।

জামায়াত আমির ডা: শফিকুর রহমান গতকাল শুক্রবার দুপুরে কুলাউড়া উপজেলায় ব্রাহ্মণবাজার ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার মেধাবী শিক্ষার্থী নাফিসা আক্তার আনজুমের কবর জিয়ারত করে তার শোকাহত পিতা-মাতাকে সমবেদনা জানান।

এ সময় উপস্থিত সমবেত জনতার উদ্দেশে তিনি আরো বলেন, আনজুম হত্যার খবর ঢাকা থেকে শুনেছি এবং দোয়া করেছি। আজকে আসার উদ্দেশ্য কবর জিয়ারত ও পরিবারকে সান্ত্বনা দেয়া। আমরা জানতে পেরেছি, ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। মামলা প্রভাবিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো অপশক্তির বা অন্যকিছুর কাছে নয়ছয় হলে কেউ মা পাবেন না। স্বাধীন বিচারে হস্তক্ষেপ হলে আমরা বসে থাকব না। আমরা মজলুমের পাশে থাকব।

এ সময় বক্তব্য দেন অ্যাসিস্টেন্ট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, মৌলভীবাজার জেলা জামায়াতের আমির ইঞ্জিনিয়ার সাহেদ আলী, আজিজ আহমেদ কিবরিয়া, রাজানুর রহিম ইফতেখার, কুলাউড়া উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আব্দুল হামিদ খান, জুড়ী উপজেলা জামায়াতের সাবেক আমির আব্দুর রহমান প্রমুখ।

৫ আগস্টকেই নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণা করা উচিত

নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ৮ আগস্ট নয়, ৫ আগস্টকে নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণা করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমান।

গতকাল নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক আইডিতে দেয়া এক পোস্টে তিনি এ মন্তব্য করেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্টকে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই গণ-অভ্যুত্থান দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নোবেলজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের দিনটিকে নতুন বাংলাদেশ দিবস হিসেবে ঘোষণা করা হয়। গণ-আন্দোলন চলাকালে রংপুরে পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার দিন ১৬ জুলাইকে ‘শহীদ আবু সাঈদ দিবস’ ঘোষণা করেছে সরকার। এ নামকরণ নিয়ে মতভেদ দেখা দিয়েছে। এনসিপি নেতা হাসনাত আব্দুল্লাহ, সারজিস আলমসহ অনেকেই এ নামকরণে আপত্তি তুলেছেন। তারা চান ৫ আগস্টকেই ‘নতুন বাংলাদেশ দিবস’ ঘোষণা করা হোক। এ ইস্যুতে কথা বলেছেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা: শফিকুর রহমানও। তিনি বলেছেন, ৮ আগস্ট নয় ৫ আগস্টকেই নতুন বাংলাদেশ দিবস ঘোষণা করা উচিত।

সরকারের ভেতরের ফ্যাসিবাদের দোসর দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত : মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান

গাজীপুর প্রতিনিধি জানান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান বলেছেন, “বর্তমান সরকারের ভেতরে এমন কিছু চিহ্নিত ফ্যাসিবাদের দোসর রয়েছে, যারা সরকারের ঘাড়ে, আবার আরেকটি দলের ঘাড়ে চড়ে থেকে দেশকে অস্থিতিশীল করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। তারা পোশাক বদলালেও চরিত্র বদলায়নি।

তিনি বলেন, ‘সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন নয় আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন, পরে জাতীয় নির্বাচন দিতে হবে।’ ‘বাংলাদেশের ৫৪ বছরের ইতিহাসে দলীয় সরকারের অধীনে কোনো স্থানীয় সরকার নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। তাই নির্দলীয় নিরপেক্ষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনেই স্থানীয় সরকার নির্বাচন দিতে হবে। এটি গণতন্ত্র ও জনগণের ভোটাধিকারের জন্য এখন সময়ের দাবি।

গতকাল গাজীপুর মহানগরের চান্দনা চৌরাস্তার সাগর-সৈকত কনভেনশন সেন্টারে গাজীপুর জেলা জামায়াত আয়োজিত ২০২৫ সালের ওয়ার্ড দায়িত্বশীল সম্মেলনের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সেক্রেটারি ড. মাওলানা সামিউল হক ফারুকী, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও ঢাকা উত্তর অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ড. মাওলানা খলিলুর রহমান মাদানী।

সম্মানিত অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন কেন্দ্রীয় টিম সদস্য মো: আবুল হাসান খান, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যাপক মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন, গাজীপুর-১ আসনের জামায়াত মনোনীত প্রার্থী ও সাবেক সচিব মো: শাহ আলম বকশী, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির ও গাজীপুর-৫ আসনের মনোনীত প্রার্থী মো: খায়রুল হাসান, জেলা নায়েবে আমির মাওলানা মো: সেফাউল হক, জেলা এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি মো: আনিসুর রহমান বিশ্বাস ও অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান খান।

আরো বক্তব্য রাখেন কাপাসিয়া আমির মাওলানা মো: ফরহাদ হোসাইন, কালিয়কৈরের আমির মো: বেলাল হোসেন, গাজীপুর সদর উপজেলার আমির মো: হেলাল উদ্দিন, কালীগঞ্জের ভারপ্রাপ্ত আমির মাওলানা মো: আফতাব উদ্দিন, শ্রীপুর উপজেলার সেক্রেটারি মো: জসিম উদ্দিন প্রমুখ।