স্মৃতিচারণঃ আজ জাতীয় কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : মে ২৫, ২০২৫, ৯:৩০ অপরাহ্ণ /
স্মৃতিচারণঃ আজ জাতীয় কবি নজরুলের জন্মবার্ষিকী
  • বৈষম্যহীনতার কবি, দ্রোহের কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী আজ।

বৈষম্যহীনতার কবি, সর্বকালের দ্রোহের কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬ তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৮৯৯ সালের এই দিনে কবি এই ধরায় আগমন করেন। এবছর ২৪ জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে ধারণ করে কবির জন্মদিনে নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে জাতীয় পর্যায়ে। জানানো হয়েছে, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৬তম জন্মবার্ষিকীর মূল অনুষ্ঠান তিন দিনব্যাপী কুমিল্লার দৌলতপুরে অনুষ্ঠিত হবে।

এছাড়া, জাতীয় কবির স্মৃতিবিজড়িত ঢাকা, ময়মনসিংহের ত্রিশাল, মানিকগঞ্জের তেওতা, চুয়াডাঙ্গার কার্পাসডাঙ্গায় জন্মবার্ষিকী উদ্যাপিত হবে। চট্টগ্রামে নজরুল মেলা, নজরুল বিষয়ক আলোচনা ও জাঁকজমকপূর্ণ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে নজরুল জন্মবার্ষিকী আয়োজিত হবে। দৌলতপুরে মূল অনুষ্ঠানে স্মারক বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করবেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান।

এবার জন্মবার্ষিকীর প্রতিপাদ্য ‘দু’হাজার চব্বিশের গণঅভ্যুত্থান: কাজী নজরুলের উত্তরাধিকার। আজ ২৫ মে কবির জন্মদিনে সকালে সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা ও সচিব ঢাকায় কবির সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। দিবসটি উপলক্ষে ঢাকায় সকল সড়কদ্বীপে এবং অন্যান্য জেলায় জাতীয় কবির ছবি, কবিতা, পরিচিতি ও চিত্রকর্ম প্রদর্শন করা হবে। অন্যান্য জেলায় স্থানীয় নজরুল গবেষক বা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সুধিজনের সহযোগিতায় কমিটি গঠন করে যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি উদ্যাপন করা হবে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীন বিভিন্ন দপ্তরে আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে। এছাড়া, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি শিশুদের নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করবে। বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাসসমূহেও দিবসটি উদ্যাপন করা হবে।

জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আলোচনা অনুষ্ঠান, রচনা ও আবৃত্তি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হবে। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইন্সটিটিউট কবিকে বর্তমান প্রজন্মের সাথে পরিচিত করার লক্ষ্যে কবির ছবি, পোস্টার ও বই প্রদর্শনী এবং গণগ্রন্থাগার অধিদপ্তর বই প্রদর্শনী, পাঠ প্রতিযোগিতা ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করবে। দিবসটি পালন উপলক্ষে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ৬০০ স্মরণিকা ও ২০ হাজার পোস্টার মুদ্রণ করবে।

কুমিল্লা জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বিকেল ৩টায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করবেন- কবি পৌত্রী ও জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ইনস্টিটিউট ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান খিলখিল কাজী।

কবি কাজী নজরুল সারাটি জীবন বৈষম্য সৃষ্টির রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলে গেছেন। বুর্জোয়া সামন্ততন্ত্রের পরিবর্তে তিনি চেয়েছেন সাম্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্র গড়তে। তাই তার বিভিন্ন কাব্যে মানবতাবোধ থেকেই এসেছে বিদ্রোহ, অসাম্প্রদায়িক ও সাম্যবাদের চেতনা। তিনি মনে করতেন- যা কিছু মানুষের জন্য সুন্দর, মহোত্তম ও কল্যাণকর তাই ধর্ম। নজরুল-মানস পরিমন্ডল সার্বজনীন মানবতাবোধ দিয়ে বেষ্টিত।

নজরুলের গান, কবিতা, গল্প, নাটক, উপন্যাস, প্রবন্ধ, চিঠিপত্র- এককথায় সমগ্র নজরুল সাহিত্যে দুটি ভাবকে আলাদাভাবে শনাক্ত করা যায়। প্রথমটি, সমাজের নানাবিধ বৈষম্যের প্রতি তার তীব্র ক্ষোভ আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে- জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষের প্রতি তার অপার ভালোবাসা।

তিনদিনব্যাপী অনুষ্ঠানের দ্বিতীয়দিন ২৬ মে, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় একাডেমির সংগীত, নৃত্য ও আবৃত্তি বিভাগের আয়োজনে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে ‘চেতনা ও জাগরণে নজরুল’ শীর্ষক অনুষ্ঠান।

কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন স্বাধীনতা গণতন্ত্র, মানবতা, ন্যায্যতা অর্থাৎ সুবিচারের কবি। নজরুল তার লেখনীতে যে সাম্যের ইঙ্গিত দিয়েছেন তা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবতা এবং সুবিচারের প্রত্যয়ে তীক্ষè, তির্যক, উজ্জ্বল। তার কল্পনা কখনো সাম্যবাদ, কখনো স্বাধীনতা, কখনো মানবতাকে স্পর্শ করেছে। সমাজ-বিধানের অসঙ্গতি, জাতিবৈষম্য, শ্রেণি বৈষম্যের প্রতি তার কণ্ঠ সব সময়ই সোচ্চার ছিল। আর এসব কিছুর মূল ছিল মানবমুক্তি ও মানবকল্যাণ। ‘কুলি-মজুর’ কবিতায় তার মানবতার পরিচয় ফুটে উঠেছে- ‘দেখিনু সেদিন রেলে/ কুলি বলে এক বাবুসাব তারে টেনে দিল নিচে ফেলে/ চোখ ফেটে এলো জল/ এমনি করে কি জগৎ জুড়িয়া মার খাবে দুর্বল।’ নজরুল মানুষকে জাতির ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছেন। তিনি জাতির স্বাধীনতার সঙ্গে সঙ্গে একাত্ম করে নির্যাতিত শ্রেণির মুক্তির কথা ভেবেছেন। নজরুল বিদ্যমান ব্যবস্থায় যে বৈষম্য ছিল, সে বৈষম্যের বিরুদ্ধে তার অধিকাংশ সাহিত্য সৃষ্টি করে গেছেন। সমাজে যারা নির্যাতিত, নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, অবহেলিত, অপমানিত তারাই কবিচিত্তকে আকৃষ্ট করেছে। এসব মানুষের দুঃখ-দুর্দশাকে লাঘব করতে তার লেখনী নিসৃত হয়েছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনও ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে একটি গণআন্দোলন ছিল। নজরুলের সাম্যের ধারণা খুব সহজেই বাংলাদেশের মানুষের চেতনার সঙ্গে একাকার হয়ে যায়।