হাসিনাকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণে ভারত কেন মরিয়া!


Sarsa Barta প্রকাশের সময় : আগস্ট ২৪, ২০২৪, ৮:০৭ পূর্বাহ্ণ /
হাসিনাকে ‘নির্দোষ’ প্রমাণে ভারত কেন মরিয়া!

প্রতিবেদকঃ ‘বিশ্বে যা-কিছু মহান সৃষ্টি চির-কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর’ (কাজী নজরুল ইসলাম)। জাতীয় কবির ওই কবিতার মতোই প্রায় দেড় যুগ ধরে দেশে প্রচার হচ্ছে ‘দেশে যা-কিছু অর্জন-উন্নয়ন জনগণের কল্যাণকর, অর্ধেক তার করেছে নারী (হাসিনা) অর্ধেক তার নর (শেখ মুজিবুর রহমান)। ছাত্র জনতার অভ্যূত্থানে গুম-খুন-অত্যাচারী-জুলুমবাজ-আয়না ঘরের প্রতিষ্ঠাতা-গণহত্যাকারী শেখ হাসিনা পালানোর পরও ভারত প্রচার করছে শেখ হাসিনা কোনো অন্যায় করেনি। তিনি মহান নেত্রী এবং তার কোনো ভুল নেই।

বাংলাদেশের ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টির জন্য দায়ী ‘গ্যাং অব ফোর’। চারজনের পরামর্শেই শেখ হাসিনা ঢাকাকে রক্তে ভাসিয়ে রাজপথে এতো মানুষ খুন করে দিল্লি পালিয়েছেন। বাস্তবতা কী তাই বলে? ‘গ্যাং অব ফোর’ এ যাদের নাম বলা হয়েছে সজীব ওয়াজেদ জয় ছাড়া তারা কী শেখ হাসিনার চেয়েও শক্তিশালী? তারা কী শেখ হাসিনাকে জনগণের রক্তের উপর দাঁড়িয়ে ২০১৪ সালের প্রার্থী ভোটার বিহীন নির্বাচন, ২০১৮ সালে ভোটের আগের ‘রাতে ব্যালটে সিল মারা’ নির্বাচন, ২০২৪ সালে ‘ডামি প্রার্থীর’ নির্বাচন করতে হাসিনাকে বাধ্য করেছিল? গত জুলাই-আগস্টে ঢাকাসহ সারাদেশে কয়েকশ মানুষকে হত্যার জন্য পুলিশ বাহিনীকে প্রকাশ্যে গুলি করার নির্দেশ দিয়েছিল? মানবাধিকার লংঘনকারী গণহত্যাকারী শেখ হাসিনাকে উর্ধ্বে তুলতে ভারত আর কত মিথ্যাচার করবে? ভারতের গণমাধ্যমগুলো বাংলাদেশ নিয়ে একের পর এক মিথ্যা তথ্যেভরা খবর প্রচার করছে। বাংলাদেশের জনগণ নয়, শেখ হাসিনাকেই যেন তাদের সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। হাসিনার নেতা তিনিই মানুষ অন্যেরা কিছুই নয়। ভারতের কিছু গণমাধ্যমের খবর, সম্পাদকীয় দেখে সেটাই মনে হয়।

ভারতীয় সংবাদপত্র দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে আওয়ামী লীগের এক নেতার বরাত দিয়ে দাবি করা হয়েছে শেখ হাসিনার স্বৈরাচার হওয়ার পিছনে চার জন ব্যাক্তি দায়ি। এদের মধ্যে রয়েছেন শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয়, সালমান এফ রহমান, আসাদুজ্জামান খান কামাল ও ওবায়দুল কাদের। এই চার নেতার ক্যূমন্ত্রণায় শেখ হাসিনা নাকি এতো মানুষ হত্যা করেছেন। বাস্তবতা কী? শেখ হাসিনা কী কারো কথায় চলেছেন? তিনি তো ১৫ বছর ধরে নিজেদের অধিনস্বর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেস্টা করেছেন। দেশের যা কিছু ভাল শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ বোঝে না। শুধু কি তাই, ১৫ বছরে ভারতের নাচের পুতুল হাসিনা দেশবাসীকে বুঝিয়েছেন তিনি সবজান্তা। তিনি সবকিছু জানেন এবং বোঝেন। তিনি এবং তার পিতা শেখ মুজিবুর রহমান কখনো কোনো কাজে ও সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেন না। প্রবাদে রয়েছে ‘জনো¥র পর দোলনা থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মানুষের শেখার শেষ নেই’। কিন্তু ১৫ বছরে শেখ হাসিনা এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিলেন যে তিনি সব জানেন। সব বিষয়ে তিনি সবার চেয়ে বেশি অভিজ্ঞ। বাংলাদেশে তিনি ছিলেন একমাত্র ব্যাক্তি তার কোনো শেখার প্রয়োজন ছিল না।

১৯৭৪ সালে যুবলীগের জাতীয় সম্মেলনে শেখ ফজলুল হক মনি দাবি করে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা আইনের শাসন চাই না, বঙ্গবন্ধুর শাসন চাই’। শেখ মুজিবুর রহমান বাকশাল গঠন করে তার নিজের শাসন (ব্যাক্তির শাসন) প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। পিতার হাত ধরে ভারতের শাসকদের প্রকাশ্যে-অপ্রকার্শের সমর্থনকে কাজে লাগিয়ে শেখ হাসিনা একক নেতৃত্বে বাংলাদেশে কার্যত ভয়ঙ্কর মাফিয়া রাষ্ট্রে পরিণত করেছিলেন। চিলির স্বৈরশাসক জেনারেল পিনোসে, পানামার লৌহমানব ম্যানুয়েল আন্তোনিও নরিয়েগা, জিম্বাবুয়ের প্রেসিডেন্ট রবার্ড মুগাবে, ফ্রান্সের কুখ্যাত স্বৈরশাসক কুখ্যাত রাজা লুইয়ের মতোই স্বৈরতন্ত্র কায়েম করেছিলেন শেখ হাসিনা। ফ্রান্সের স্বৈশাসক রাজা লুই দম্ভোক্তি করে বলেছিলেন, ‘আমিই রাষ্ট্র’। শেখ হাসিনা ও তার পিতাও বাংলাদেশের মানুষকে সেটাই করেছেন। মানুষ খেতে পায় না, চিকিৎসা পায় না অথচ একজন নিহত ব্যাক্তির (শেখ মুজিবুর রহমান) জন্মশত বার্ষিকী পালন, মূর‌্যাল নির্মাণে শত শত কোটি টাকা খরচ করেছেন।

গত ১৫ বছর দেশে কোনো আইনের শাসন ছিল না। শেখ হাসিনা যা বলতেন সেটাই ছিল আইন। নি¤œ আদালত থেকে শুরু করে উচ্চ আদালতেও বিচারের রায় কি হবে তিনি তা ঠিক করে দিতেন। শেখ হাসিনার কথা ছাড়া বিচারাঙ্গণে, প্রশাসনে, আইন শৃংখলা বাহিনীর কর্মতৎপরতায় কিছু হয়েছে এমন নজীর খুব কমই রয়েছে। সবকিছুই সিদ্ধান্ত তিনিই দিতেন। নি¤œ আদালতে বিএনপির নেতা তারেক রহমানকে খালাসের রায় ঘোষণা করায় পরবর্তীতে ওই বিচারকের কি হাল হয়েছিল দেশবাসী দেখেছে।

গুম-খুন-হত্যা-মানবাধিকার লংঘন এবং সর্বপরি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কয়েকশ ছাত্র-জনতাকে খুন করার অপরাধে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হচ্ছে। ভারতের মদতে তিনিই ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের নামে সেনা সদস্যদের হত্যা করেছেন। সংবাদ সম্মেলন করে তৎকালীন বিডিআরের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মরহুম শাকিল আহমেদের পুত্র এ অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, বিডিআর বিদ্রোহের সময় সেনা সদস্যদের হত্যার করেছেন শেখ হাসিনা, ফজলে নূর তাপস ও শেখ সেলিম গংরা।

২০১৩ সালে শাপলা চত্বরে হেফাজতের সম্মেলনে গভীর রাতে গণহত্যা (মুসুল্লি হত্যাকা-), অসংখ্য নেতা ও ব্যাক্তিকে গুম করে আয়না ঘরে বছরের পর বছর ধরে রাখা, কাউকে কাউকে সেখান থেকে হত্যা করা, পুলিশ দিয়ে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কয়েকশ শিক্ষার্থী-জনতাকে হত্যা এসবের কোনো কিছুই শেখ হাসিনার নির্দেশের বাইরে হয়নি। জাতিসংঘের প্রতিনিধি দল বর্তমানে ঢাকায় হত্যাকান্ড তদন্তের জন্য এসেছেন; তখন ভারতের সরকার এবং তাদের মিডিয়াগুলো শেখ হাসিনাকে নির্দোষ প্রমাণে আওয়ামী লীগের অন্য নেতাদের ঘাড়ে দোষ চাপানোর মনগড়া তথ্য দিয়ে একের পর এক প্রতিবেদন প্রকাশ করছে। অবশ্য গত ১৫ বছর যা কিছু ভাল সবকিছু হাসিনা করেছেন; আর কখনো ভুল হলে তা অন্যদের প্ররোচনায় করা হয়েছে বলে প্রচার করা রেওয়াজ হয়েছিল।

হাসিনা দেশকে ধ্বংস করে দিয়ে গেছেন। বিদেশী ঋণ নিয়ে দেশকে ঋণের সাগরে ভাসিয়ে দিয়েছেন। উন্নয়নের নামে বিভিন্ন মেগা প্রকল্প থেকে বিপুল পরিমান অর্থ তিনি নিজে খেয়েছেন, পরিবারের সদস্যদের পাইয়ে দিয়েছেন এবং অনুগত নেতাকর্মী ও ব্যবসায়ীদের অর্থ লুটের সুযোগ করে দিয়েছেন। হাসিনা সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে দুর্নীতি, ক্যূকৃীতি, অর্থ পাচার, ও অর্থনীতির মন্দা পরিস্থিতিতে দেশের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ তৈরি করে। ব্যবসায়ীদের নিয়ে সিন্ডিকেট করে পণ্যের ইচ্ছামতো মূল্য বাড়িয়ে মানুষকে বিপর্যয়ের মুখে ফেলে দিয়েছেন। ভয়ঙ্কর অপরাধী, খুনি এবং মাফিয়াদের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে থেকে পৃষ্ঠপোষকতা করে বছরের পর বছর ধরে সারাদেশে জনগণকে ভীতির পরিবেশে রাখেন। আইন শৃংখলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশ ও র‌্যাবকে দানব বাহিনীতে পরিণত করেন। রাষ্ট্রের সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিচার বিভাগ, নির্বাচন কমিশন, মানবাধিকার কমিশন, দুর্নীতি দমন কমিশনসহ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানে দলীয় অনুগত ব্যক্তিদের নিয়োগ দিয়ে সেগুলোর মেরুদন্ড ভেঙ্গে দেন।

লুটেরাদের হাতে ব্যাংকিং সেক্টর তুলে দিয়ে অর্থ লোপাটের পরিবেশ সৃষ্টি করে দলের লুটেরাদের বৈধ-অবৈধ ভাবে কোটি টাকা কামানোর ব্যবস্থা করে দেন। নতুন নতুন গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠার সুযোগ করে দিয়ে সেগুলোকে নিজের পক্ষে প্রচারণায় ব্যবহার করেন। এছাাড়ও প্লট-ফ্লাট, পদ পদবি ও তদবির বাণিজ্যের সুযোগ দিয়ে দেশের সাংবাদিকদের বিশাল অংশকে নিজের তাবেদারে পরিণত করেন। ১৯৯৯ সালে প্রধানমন্ত্রী থাকাবস্থায় যে হাইকোট ‘শেখ হাসিনাকে রং হেডেড পার্সন’ রায় দিয়েছিল। সেই হাইকোটকে হাসিনা খেয়ালখুশি মতো ব্যবহার করেছেন। ফলে আপিল বিভাগের বিচারপতিরা প্রকাশ্যে ঘোষণা দেন, ‘বিচারপতিরার হচ্ছেন শপথবদ্ধ রাজনীতিক’।

শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে প্রার্থী ও ভোটার বিহীন নির্বাচন করেছেন। ওই নির্বাচনে ১৫৩ জন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছিল। ফলে ওই সরকারে জনগণের কোনো প্রতিনিধিত্ব ছিল না। আন্তর্জাতিক মহলও সেটাকে বৈধতা দেয়নি। ভারতের দুতিয়ালিতে সরকার টিকে যায়। ২০১৮ সালে নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে সারাবিশ্বে ‘রাতের ভোট’ হিসেবে পরিচিতি পান। ওই নিবাচনের পর হাসিনার অনুচর রাশেদ খান মেনন (বর্তমানে গ্রেফতার) বলেছিলেন, ‘আমি জোর দিয়ে বলছি এই নির্বাচনে জনগণ ভোট দেয়নি। আামি যে নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছি সে নির্বাচনে আমিও ভোট দেইনি’। ২০২৪ সালের নির্বাচন বিরোধী দল বর্র্জন করায় ‘ডামি প্রার্থী নির্বাচন’ হিসেবে পরিচিত নির্বাচনে শতকরা ১০ ভাগ মানুষ ভোট দিতে যায়নি।

এমনকি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরাও ভোট দেয়নি। কিন্তু অনুগত কাজী হাবিবুল আউয়াল নির্বাচন কমিশন শেখ হাসিনার নির্দেশ মতো প্রথমে শতকরা ২৮ ভাগ ভোটার ভোট দিয়েছে দাবি করলেও পরে সেটা ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে প্রচার করা হয়। ১৫ বছরের প্রশাসন চালাতে গিয়ে ভয়াবহ নিষ্ঠুরতা করে আমলা ও পুলিশ বাহিনীকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রকে নিষ্ঠুরতার দিকে নিয়ে যান হাসিনা। এমনকি আওযামী লীগের অঙ্গ সংগঠন ছাত্রলীগ ও যুবলীগ ১৫ বছরের যেসব অন্যায়-অত্যাচার করেছে তা সংগঠন দুটিতে সন্ত্রাসী সংগঠনের রুপ দিয়েছে। শেখ হাসিনার নির্দেশেই কার্যত এরই দুটি সংগঠন কথা কথায় মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা ঘটিয়েছে।

এমনকি নিজের দল আওয়ামী লীগকে সন্ত্রাসী-অপরাধী চক্রের দলের পরিণত করেছেন। ১৫ বছর শেখ হাসিনার কথাই ছিল দেশের আইন। তিনি যা করতে বলতেন তাই হতো। বিরোধী দলের নেতাদের ওপর জুলুম নির্যাতন, হামলা মামলা, গুম খুন, অপহরণ করে আয়না ঘরে রাখা এবং বন্দী করে কারাগারে নিক্ষেপ এগুলোর মাধ্যমে গোটা দেশকে কারাগারে পরিণত করেছিলেন। এসব করে দেশের ভেতরে আওয়ামী লীগ একা হয়ে পড়েছিল। ‘তোমারে বাধিবে যে, গোকুলে বাড়িছে সে’ প্রবাদের মতোই নতুন প্রজন্ম সৃষ্টি হয়েছে। কারণ দীর্ঘদিন থেকে শেখ হাসিনা তার পিতাকে সর্বোচ্চ আসনে বসানোর চেষ্টা করেছেন এবং প্রশাসনকে ব্যবহার করে শেখ মুজিবকে মহান নেতা বলতে মানুষকে বাধ্য করেছেন। এটা করতে গিয়ে তিনি জুলুম-নির্যাতনের পথ বেছে নেন। এভাবে দীর্ঘ শাসনে নতুন প্রজন্মসহ সবাইকে খেপিয়ে তুলেছিলেন। রাজনৈতিক দিক থেকে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের বাইরে অন্য সব দল সরকারের পক্ষে ছিল না।

অন্যদিকে শেখ হাসিনার সরকার ভারতের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছিল। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছিল যে, দিল্লির অনুমতি নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনাকে চীন সফলে যেতে হয়েছিল। এতে জনগণ আরো বিক্ষুদ্ধ হয়। প্রশাসনে দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়োগ দিয়ে আমলা-পুলিশ এবং অন্যান্য বাহিনীকে কার্যত ঠেঙ্গারে বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করেন। এমনকি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি গুলি করে আন্দোলনের দমানোর নির্দেশনা দিয়েছিলেন পুলিশ ও সেনাবাহিনীকে। পুলিশ সে নির্দেশ পালন করলেও ওই নির্দেশ পালনে রাজী হয়নি সেনাবাহিনী। ফলে তাকে পালাতে হয়। যার হাতে হাজার মানুষের রক্ত, যিনি বছরের পর বছর ধরে মানবাধিকার লংঘন করেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়েছিলেন, নিজেকে এবং পিতা শেখ মুজিবকে একমাত্র নেতা হিসেবে জাহির করতে জনগণকে বাধ্য করেছেন; তাকে নির্দোশ প্রমাণের চেস্টা বেমানান। অন্যদের প্ররোচনায় হাসিনা হত্যাকান্ড ঘটিয়েছেন এমন প্রচারণায় ভারত কেন নেমেছে তা সবার জানা। ‘গ্যাং অব ফোর’ নয়, দেশের সকল অপকর্মের জন্য শেখ হাসিনাই এককভাবে দায়ী।

মানবাধিকার লংঘনের তদন্তে ঢাকায় রয়েছে জাতিসংঘের একটি দল। তারা জুলাই আন্দোলনে যেসব হত্যাকা- হয়েছে তা খতিয়ে দেখছে। ৫ আগস্ট পালিয়ে হাসিনা ভারতে গিয়েই যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেন। ব্রিটেন আবেদন মঞ্জুর করেনি। জাতিসংঘের অভিবাসন নীতি অনুযায়ী হাসিনাকে তারা আশ্রয় দিতে পারবে না বলে সাফ জানিয়ে দিয়েছে। এরপর যুক্তরাষ্ট্রও হাসিনার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ঢাকায় মানবাধিকার লংঘন ও হত্যার দায়ে অভিযুক্ত করে হাসিনার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে হাসিনার বিচার শুরু হলে ভারত তাকে নিয়ে কী করবে সে বিষয়টিও প্রায় অন্ধকারেই আচ্ছন্ন হয়ে আছে।

বাংলাদেশের মানুষ শেখ হাসিনাকে দিল্লি থেকে দেশে ফিরিয়ে আনতে অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর চাপ দিচ্ছে। মামলা শুরু হলে দুই দেশের বন্দী বিনিময় আইন অনুযায়ী হাসিনাকে ঢাকার কাছে ফেরত দিতে হবে। সে কারণেই কি পতিত হাসিনাকে নির্দোশ প্রমাণের অপচেস্টায় মরিয়া ভারত?